আইন সংশোধনে খাত সংশ্লিষ্টদের প্রস্তাবনা চেয়েছে আইডিআরএ

সময়: সোমবার, নভেম্বর ২৫, ২০১৯ ১০:৪৩:৪০ পূর্বাহ্ণ


অনুপ সর্বজ্ঞ : বীমা আইন ২০১০’র ত্রুটিপূর্ণ ও সাংঘর্ষিক ধারাগুলো সংশোধনের জন্য খাত সংশ্লিষ্টদের প্রস্তাবনা চেয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। গতকাল এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনসহ (বিআইএ) দেশের সব বীমা কোম্পানিতে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সূত্রে।
জানা যায়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ ব্যাংক ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ধারাগুলো ছাড়াও বীমা আইনের আর কোন কোন বিষয়ে সংশোধন আনা জরুরি লিখিতভাবে তা জানানোর নির্দেশ দিয়েছে আইডিআরএ।

এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ সদস্য বোরহানউদ্দীন আহমেদ দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে বলেন, বীমা আইনের ত্রুটিপূর্ণ ও সাংঘর্ষিক কিছু ধারা আমরা চিহ্নিত করেছি। এছাড়াও খাত সংশ্লিষ্টদের নজরে আরও কিছু আছে কিনা, যেখানে সংশোধন জরুরি তা আমরা জানতে চেয়েছি।
জানা গেছে, সম্প্রতি বীমা কোম্পানিগুলোর চেয়ারম্যান ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বিদ্যমান বীমা আইনটি পর্যালোচনাপূর্বক সংশোধনের নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর আগে বীমা আইনের ক্রটিপূর্ণ ও সাংঘর্ষিক ধারাগুলো সংশোধনের জন্য একাধিকবার সুপারিশ করে বীমা উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিআইএ।
জানা যায়, আইনের ত্রুটিপূর্ণ ও সাংঘর্ষিক ধারাগুলো নিয়ে শিগগিরই স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। এরপর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
জানা গেছে, বীমা আইনের সাংঘর্ষিক বিধিগুলোর মধ্যে একটি হলো একই সঙ্গে একাধিক ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হওয়ার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ। বীমা আইনের ৭৫নং ধারা অনুযায়ী আপাতত: বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা-ই থাকুক না কেন, কোন বীমা কোম্পানির পরিচালক একই শ্রেণির বীমা ব্যবসার জন্য নিবন্ধীকৃত অন্য কোন বীমা কোম্পানি, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না।
বীমা খাতের উদ্যোক্তরা বলছেন, বীমা পরিচালকদের ব্যাংক বা অন্য কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালক হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ব্যাংক আইনে এ ধরনের বিধিনিষেধ নাই। তাই ব্যাংক আইনের সঙ্গে বীমা আইনের ৭৫নং ধারাটি সাংঘর্ষিক হওয়ায় এর সংশোধন জরুরি।
সংশোধন জরুরি বীমার এমন বিধিগুলোর মধ্যে আরেকটি হলো- বীমাকারীর মূলধন ও শেয়ার ধারণ বিধিমালা ২০১৬। এ বিধি অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি বা তার পরিবারের সদস্যরা এককভাবে বা যৌথভাবে কোন বীমা কোম্পানির ১০ ভাগের অতিরিক্ত শেয়ার ধারণ করতে পারবেন না। এছাড়াও বিধি চূড়ান্ত হবার তিন বছরের মধ্যে পদ ছেড়ে দিতে হবে ১০ শতাংশের অধিক শেয়ারধারণকারী একই পরিবারের সদস্যদের। ২০১৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশ হওয়া এ বিধিমালাটির বেধে দেয়া তিন বছরের সময়সীমা শেষ হয়েছে গত ২৫ সেপ্টেম্বর। ফলে এ সময়ের মধ্যেই পদ ছেড়ে দেয়ার কথা ছিল বীমা খাতের একই পরিবারের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারধারণকারী শতাধিক পরিচালককে।
বীমাকারীর মূলধন ও শেয়ার ধারণ বিধিমালায় বলা হয়েছে, বিধিমালা কার্যকর হবার তিন বছরের মধ্যে অতিরিক্ত শেয়ার পরিচালক এমন কোন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করবেন যিনি তাদের পরিবারের সদস্য নন। অথবা এমন কোন কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করবেন যেখানে তার পরিবারের কোন শেয়ার নেই। বীমা আইন ২০১০ এ পরিবারের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘পরিবার’ অর্থ স্বামী বা স্ত্রী, বাবা, মা, ছেলে, মেয়ে, ভাই ও বোন এবং সংশি¬ষ্ট ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল সবাই অন্তর্ভূক্ত হবেন।
এদিকে, স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ নিয়েও ‘বীমা আইন ২০১০’ এবং কর্পোরেট গভর্নেন্স গাইডলাইনে (সিজিজি) বীমা কোম্পানির প্রতি দুই রকমের নির্দেশনা রয়েছে। আর এ নির্দেশনার পরিপালন নিয়ে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ এর সঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দ্বন্দের সৃষ্টি হয়েছে। তাই এ সমস্যা সমাধানের জন্য উভয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছে একাধিকবার। বীমা আইন, ২০১০-এর ৭৬ ধারার এক উপ-ধারায় বলা হয়েছে বীমাকারী কোম্পানি আইনের অধীনে নিবন্ধিত হলে, উহার সংঘস্মারক বা সংঘবিধিতে যাই থাকুক না কেন উহার পরিচালকের সংখ্যা ১৫ জনের অধিক হবে না এবং সেইক্ষেত্রে ৬ জন উদ্যোক্তা পরিচালক ও ৬ জন জনগণের অংশের শেয়ারগ্রহীতা পরিচালক এবং ৩ জন স্বাধীন অর্থাৎ নিরপেক্ষ পরিচালক থাকবেন। পরবর্তীতে আইডিআরএ বীমা আইন ২০১০ এর ১৪৮ ধারায় প্রাপ্ত ক্ষমতা বলে বীমাকারীর নিবন্ধন প্রবিধানমালা নামে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। যার এসআরও নং ৩৯-আইন/২০১৩। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী দুজন স্বাধীন, স্বতন্ত্র বা নিরপেক্ষ পরিচালকসহ কোম্পানির পরিচালক ২০ জনে সীমাবদ্ধ থাকবে। এর মধ্যে ১২ জন উদ্যোক্তা-পরিচালক ও চারজন জনগণের অংশের শেয়ারগ্রহীতা পরিচালক এবং দুজন নিরপেক্ষ পরিচালক দিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করতে হবে।
অন্যদিকে ২০১২ সালের ৩০ আগস্ট শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির জারি করা করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইনে বলা হয়, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের ন্যূনতম সদস্য হতে হবে পাঁচজন ও সর্বোচ্চ ২০। এছাড়া পরিচালনা পর্ষদে ৫ ভাগের ১ ভাগ স্বাধীন পরিচালক থাকতে হবে। এ নির্দেশনা মোতাবেক তালিকাভুক্ত বীমা কোম্পানিতে প্রতি পাঁচজনে একজন নিরপেক্ষ পরিচালক অর্থাৎ মোট ২০ জনে চারজন নিরপেক্ষ পরিচালক থাকবে। বিএসইসি বীমা কোম্পানিগুলোর ওপর কর্পোরেট গভর্নেন্স গাইডলাইন অনুযায়ী স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ বিধান পালন নিশ্চিত করতে গেলে আইডিআরএর সাথে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটে।
এছাড়াও এমআর আইন অনুযায়ী ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বীমা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে বীমা স্পষ্ট বলা আছে- বীমা আইনের অধীনে নিবন্ধিত ও আইডিআরএ’র লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোন প্রতিষ্ঠান বীমা ব্যবসা করতে পারবেনা। এমআরএ আইনের সঙ্গে বীমার এই সাংঘর্ষিক বিধিটিরও সংশোধন জরুরি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে আইডিআরএর’র পর্যবেক্ষণে।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) চেয়ারম্যান শেখ কবীর হোসেন বলেন, ‘আইডিআরএ’র চিঠি আমি এখনো হাতে পাইনি। তবে বীমা আইনের বেশ কিছু ধারা ত্রুটিপূর্ণ ও সাংঘর্ষিক। যা সংশোধনের জন্য একাধিকবার বিআইএ-এর পক্ষ থকে আইডিআরএ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অবশেষে তা নীতি-নির্ধারণী মহলের নজরে পড়েছে। নিয়ন্ত্রণ সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা আবারো পাঠানো হবে বলে তিনি জানান।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩৫৬ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged