আলহাজ্ব টেক্সের আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম

সময়: বৃহস্পতিবার, আগস্ট ৮, ২০১৯ ৮:৫১:০৪ পূর্বাহ্ণ


নুরুজ্জামান তানিম/নাজমুল ইসলাম ফারুক :

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানি আলহাজ্ব টেক্সটাইলের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই’১৮-মার্চ’১৯) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে নানা অনিয়ম ও অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ আর্থিক প্রতিবেদনে অবচয় ধার্যের ক্ষেত্রে ডেফার্ড ট্যাক্স সমন্বয় না করা; অন্তর্বর্তীকালীন আর্থিক বিবরণী তৈরিতে শর্ত পরিপালন না করা; শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস), শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) ও শেয়ারপ্রতি নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফ) গণনার হিসাবে বিশদ ব্যাখ্যা না থাকা। কোম্পানির বিভিন্ন প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এসবের বিষয়ে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে।
কোম্পানিটির অ-নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটি সম্পদ পুনঃমূল্যায়নের সময় অবচয় ধার্যের ক্ষেত্রে ডেফার্ড ট্যাক্স সমন্বয় করেনি। ফলে সম্পদ পুনঃমূল্যায়ন হিসাবে ৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা গরমিল পাওয়া গেছে। এতে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএএস)-এর প্যারাগ্রাফ ২০ এবং ৬৪ লঙ্ঘন হয়েছে। শুধু তাই নয় কোম্পানির হিসাব বিবরণী প্রস্তুতে ইন্সটিটিউট অব চাটার্ড অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এর ২০১৭ সালের জারি করা সার্কুলার পরিপালন করেনি। এটা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (বিএফআরএস) লঙ্ঘনের সামিল। এসবের ব্যাখ্যা চেয়েছে ডিএসই।
একইসঙ্গে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে শেয়ারপ্রতি আয়, শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য এবং শেয়ারপ্রতি নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো গণনার হিসাব ব্যাখ্যা দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু কোম্পানিটি তা পরিপালন করেনি। এছাড়া কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে ক্যাশ ফ্লো হিসাব ডাইরেক্ট ম্যাথোড পদ্ধতিতে প্রণয়ন করেছে। যা বিএসইসি’র শর্ত লঙ্ঘন হয়েছে।
এদিকে কোম্পানিটির বর্তমানে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। নানা সংকটে কোম্পানিটি লোকসানে পড়লেও শেয়ার দর ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে। কোম্পানিটির প্রধান পণ্য সূতা উৎপাদিত উৎপাদন অদ্যবধি বন্ধ রয়েছে। এর আগে গত জুন মাসে সুতা উৎপাদন বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দেয়া আলহাজ্ব টেক্সটাইল। চলতি মূলধন সংকট ছাড়াও প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। ফলে লোকসানে পড়েছে কোম্পানিটি। উৎপাদন বন্ধ থাকার পরও আলহাজ্ব টেক্সটাইলের শেয়ার দর ঊর্ধ্বগতি থাকায় নড়েচড়ে বসেছে ডিএসই।
চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১১ পয়সা। তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ’১৯) ৯ মাসে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৪৩ পয়সা। এ সময় শেয়ারপ্রতি নেগেটিভ নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ৫ টাকা ৩৪ পয়সা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৮৩ পয়সা।
এদিকে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি-মার্চ তিন মাসে কোম্পানির ইপিএস ছিল ৮ পয়সা। ওই বছর মার্চ শেষে ৯ মাসে কোম্পানির ইপিএস ছিল ৪২ পয়সা। একই সময়ে শেয়ারপ্রতি নেগেটিভ নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) ছিল ২ টাকা ৮৯ পয়সা। তবে
২০১৮ সালের ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) ছিল ১২ টাকা ৩৮ পয়সা।
আলহাজ্ব টেক্সটাইলের কোম্পানি সচিব এবং প্রধান অর্থ কর্মকর্তা শওকত আলী ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’- কে বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর ডিএসই ব্যাখ্যা চেয়েছে। শিগগিরই সেগুলোর জবাব দেয়া হবে। এ বিষয়ে কোম্পানি প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সম্পদ পুনঃমূল্যায়ন করেছি ১৯৮৮ সালে তখন ট্যাক্স প্রভিশন রাখা হয়নি। নতুন নিয়মে যদি প্রভিশন রাখতে হয় তাহলে হিসাব বছর শেষ হলে বার্ষিক প্রতিবেদনে সংশোধন করবো।’

হিসাব অসঙ্গতি কারণে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনি কিছু বলতে চাই না।’
আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে বিএসইসির শর্ত মানা হয়নি এবং আন্তর্জাতিক হিসাব মান অনুসরণ করা হয়নি কেনÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হিসাব বছর শেষ হয়েছে। হিসাব বছর শেষে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে।’

এসব কাজ শেষ হলে আমরা এ বিষয়ে বলতে পারবো।’ তবে শর্ত পরিপালন না করার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘এসব লোকসানি কোম্পানি নামমাত্র স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত অবস্থায় রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কোম্পানিগুলোর সার্বিক আর্থিক অবস্থা তালিকাভুক্ত থাকার অনুকূলে নয়। কোম্পানিগুলোকে তালিকাচ্যুত করার মতো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।’

কোম্পানির শেয়ার দর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সর্বশেষ কোম্পানির শেয়ার ৫৯ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। এর আগে ২১ জুলাই কোম্পানির শেয়ার ৪৩ টাকা ২০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। এরপর থেকে টানা বাড়তে থাকে কোম্পানির শেয়ার দর।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৪৬০ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged