editorial

এসিআই’র লোকসান নিয়ে তদন্ত : কোম্পানি ও ডিএসই’র তথ্যে গড়মিল : দায় কার

সময়: রবিবার, আগস্ট ২৫, ২০১৯ ৩:৫০:৫৯ পূর্বাহ্ণ


পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ‘অ্যান্ডভান্স কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ’ (এসিআই)-এর লোকসান খতিয়ে দেখতে গঠিত ডিএসই’র তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে কিছু তথ্যগত অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। আর ইতোমধ্যেই তথ্যগত অসঙ্গতির ব্যাখ্যা চেয়ে ডিএসই বরাবর চিঠি পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, কোম্পানির প্রদত্ত হিসাবের সঙ্গে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ভিন্নতা থাকতেই পারে। কারণ কোম্পানির প্রদত্ত হিসাব ও তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তদন্ত কমিটির অনুসন্ধান যথার্থ বা সঠিক কি নাÑ সেটাই বিচার্য বিষয়। অন্যদিকে ডিএসই-এর মতো একটি পেশাদার প্রতিষ্ঠানকে যে কোনো তদন্তের ক্ষেত্রেই বস্তুনিষ্ঠ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে যৌক্তিক হতে হবে।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এসিআই লিমিটেডের সর্বশেষ প্রান্তিকের লোকসানসহ কোম্পানির গত কয়েক বছরের আর্থিক বিবরণীর তথ্য মনগড়া ও কারসাজিপূর্ণ বলে অভিযোগ ওঠে। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ লোকসান দেয়ার পরও ‘এসিআই লজিস্টিকস’ (স্বপ্ন)-এর কার্যক্রম বন্ধ করে না দেয়ায় পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মধ্যে নানা ধরনের সন্দেহ, কোম্পানির মালিক পক্ষের প্রতি অবিশ্বাস বিরাজ করছে। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ। এ বিষয়ে এক ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদ।

জানা যায়, ডিএসই’র তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ‘এসিআই লিমিটেড’ ও ‘এসিআই লজিস্টিকস’-এর কর-পরবর্তী মুনাফার যে তুলনামূলক চিত্র দেখানো হয়েছে, সেখানে বেশ ভিন্নতা পেয়েছে বিএসইসি। উদাহরণস্বরূপ ২০০৯ সালে কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদনে এসিআই’র কর-পরবর্তী মুনাফা দেখানো হয়েছে ৯৮ কোটি ৬৬ লাখ ৪২ হাজার ৬৮৩ টাকা। যা ডিএসই’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ৯৮ কোটি ৯৫ লাখ ৬১ হাজার ৯৬২ টাকা। এখানে ডিএসই’র প্রতিবেদন অনুযায়ী ২৯ লাখ ১৯ হাজার ২৭৯ টাকার ভিন্নতা রয়েছে। আবার ২০১৩ সালে কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদনে এসিআই লজিস্টিকসের কর-পরবর্তী লোকসান দেখানো হয়েছে ৮৪ কোটি ৯১ লাখ ১৭ হাজার ৬১৭ টাকা। যা ডিএসই’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ৮৬ কোটি ৩৯ লাখ ৬১ হাজার ৮২৩ টাকা। এখানে ডিএসইর প্রতিবেদন অনুযায়ী ১ কোটি ৪৮ লাখ ৪৪ হাজার ২০৬ টাকার ভিন্নতা রয়েছে।

এদিকে কর-পরবর্তী সমন্বিত আয়েও এ ধরনের ভিন্নতা পেয়েছে বিএসইসি। চিঠিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বলছে, এসিআই লজিস্টিকস (স্বপ্ন) একটি অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানি। কোম্পানির প্রতিবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে এসিআই লজিস্টিকসের কোনো শেয়ার সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। প্রতিবেদনে শুধু কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। তাই এসিআই লজিস্টিকসের শেয়ারপ্রতি আয় কীভাবে হিসাব করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। পুঁজিবাজার অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
এদিকে দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানি লোকসানের পেছনে বিশেষ ৫টি কারণ ছিল বলে উল্লেখ করেছে এসিআই। এর মধ্যে ‘বাড়তি করের চাপ’কে একটি কারণ হিসেবে দেখানো হয়। তাদের এই দাবি ও আর্থিক প্রতিবেদনে দেয়া তথ্য ছিল পরস্পর বিরোধী। করের বাড়তি চাপ হয়ে থাকলে আলোচ্য প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর’১৮) এই খাতে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হওয়ার কথা। কিন্তু কোম্পানির দেয়া তথ্যানুসারে ওই প্রান্তিকে আয়কর বাবদ আগের বছরের একই প্রান্তিকের চেয়ে কম টাকা ব্যয় হয়েছে। চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসিআই লিমিটেড আয়কর বাবদ ৩৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয় করেছে, যা আগের বছর একই প্রান্তিকে ছিল ৩৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

Share
নিউজটি ৪৩৪ বার পড়া হয়েছে ।