করোনাভাইরাসের কারণে ডিএসইর কর্মকর্তাদের বেতন কাটার উদ্যোগ

সময়: মঙ্গলবার, জুন ১৬, ২০২০ ১১:২০:৪৬ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কর্মকর্তাদের বেতন কাটার উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠাটির পরিচালনা পর্ষদ। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এর ফলে ডিএসই কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, বেতন কাটার এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক সালমা নাসরিনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে স্বতন্ত্র পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান, মুনতাকিম আশরাফ, অধ্যাপক ড. এ কে এম মাসুদ এবং ডি এস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ছানাউল হক।

কমিটিকে কর্মীদের কাজের পরিমাণ ও দায়বদ্ধতার ভিত্তিতে বেতন কাঠামো পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিভাগভিত্তিক কী পরিমাণ মানবসম্পদ প্রয়োজন এবং কী পরিমাণ অতিরিক্ত বা ঘাটতি আছে তাও মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের একটি অংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ৭টি স্তরে ভাগ করে ৬টি স্তর থেকে বেতন কাটার পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। ডিএসইর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা ৫০ হাজার টাকার নিচে বেতন পান তাদের বেতন কাটা হবে না। তবে যারা ৫০ হাজার টাকার উপরে পান তাদের বেতনের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে ৫, ১০, ১৫, ২০, ২৫ ও ৩০ শতাংশ হারে কাটার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

এর মধ্যে যাদের বেতন ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে তাদের ৫ শতাংশ কাটার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া দেড় থেকে দুই লাখ টাকা বেতনের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ, দুই থেকে আড়াই লাখের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ, আড়াই থেকে সাড়ে তিন লাখের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ, সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার লাখের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ এবং সাড়ে চার লাখ টাকার উপরে হলে ৩০ শতাংশ বেতন কাটার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএসইর এক পরিচালক বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে টানা ৬৬ দিন শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ ছিল। গত ৩১ মে থেকে লেনদেন চালু হলেও প্রতিদিন খুবই সীমিত টাকার লেনদেন হচ্ছে। তাছাড়া ডিএসইর আয়ের বড় অংশই আসে ব্যাংকে রাখা স্থায়ী আমানত থেকে। এখন স্থায়ী আমানতের সুদহার কমে যাওয়ায় আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আবার চলতি বছর স্টক এক্সচেঞ্জটি নিকুঞ্জের নতুন ভবনে যাওয়ায় অপচয় বাবদ ব্যয়ও অনেক বেড়ে গেছে। সবমিলিয়ে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, ২০১৯-২০ হিসাব বছরে ডিএসইকে লোকসানের মুখে পড়তে হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘ডিএসই একটি কোম্পানি, এর মালিক শেয়ারহোল্ডাররা। শেয়ারহোল্ডার যেখানে ৫ শতাংশ লভ্যাংশ পাচ্ছেন না, সেখানে ডিএসইর অনেক কর্মকর্তা বছরের পর বছর অস্বাভাবিক বেতনসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন। এগুলো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসা উচিত। আমরা এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করেছি, কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

এদিকে বেতন কাটার উদ্যোগ নেয়ার সংবাদে ডিএসইর কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ বিষয়ে ডিএসইর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বোর্ডে পাস হওয়ার পরও আমরা গত বছরের ইনক্রিমেন্ট পাইনি। আগের বছরের সুযোগ সুবিধা বকেয়া রেখেই এখন বেতন কাটার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক।’

তিনি বলেন, ‘ডিএসইর কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি অংশ আছে, যারা বছরের পর বছর অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন। আবার প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও), প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও), প্রধান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা (সিআরও) চুক্তিভিত্তিক পদ হলেও, তারা কৌশলে এই পদগুলো স্থায়ী করে দিয়েছেন। এমনকি চুক্তিভিত্তিক চাকরিতে যোগ দিয়ে নিয়মিত কর্মীদের সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন। এতে অস্বাভাবিক বেতনের পাশাপাশি অন্যান্য সুবিধা নিয়ে যাচ্ছেন তারা। অথচ তাদের বেতন সমন্বয় করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডিএসইতে দীর্ঘদিন ধরেই যোগ্য কর্মীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিপরীতে একটি সুবিধাবাদী পক্ষ বছরের পর বছর সুবিধা নিয়ে যাচ্ছে। বেতন কাঠামোর এই নৈরাজ্য ঠেকানোর জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) উদ্যোগ নিয়েছিল। এরই অংশ হিসেবে ডিএসইর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি খসড়া চাকরি বিধিমালাও করে দেয় বিএসইসি। কিন্তু তা আলোর মুখ দেখেনি। অপরদিকে বিএসইসির আগের কমিশনের একজন কমিশনার বাদে সবাই বিদায় নিয়েছেন। নতুন কমিশন এ বিষয়ে কিছু জানে কি না তাও জানি না।’

ডিএসইর আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘একজন শেয়ারহোল্ডার পরিচালকের ইন্ধনে আমাদের বেতন কাটার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, বিষয়টি আমরা জানি। বেতন কাটার এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করলে তার ফল ভালো হবে না। ব্যাংকের কর্মীদের মতো আমরাও কঠোর আন্দোলনে যাব।’

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩৩৮ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged