‘ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তা তহবিল’ : ২৭ প্রতিষ্ঠানের নাম চূড়ান্ত করেছে আইসিবি

সময়: সোমবার, জুলাই ২২, ২০১৯ ৫:৩৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ


এম সাইফুল শুভ : ‘পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তা তহবিল’ থেকে পুণঃঅর্থায়নের জন্য ২৭ প্রতিষ্ঠানের নাম চূড়ান্ত করেছে ‘ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ’ (আইসিবি)। এসব প্রতিষ্ঠানকে মোট ৮৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিশোধিত মূলধনের ওপর ভিত্তি করে (পরিশোধিত মূলধনের ২০ শতাংশ) ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হচ্ছে। কিন্তু শতাধিক প্রতিষ্ঠান ঋণের জন্য আবেদন করলেও মাত্র ২৭টি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ার উদ্যোগে বঞ্চিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে কিছু ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের অভিমত এ রকম যে, আইসিবি’র কিছু কাছের প্রতিষ্ঠানকেই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তা তহবিল থেকে ঋণ দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে আইসিবি’র সাবেক কর্মকর্তারা বর্তমানে জড়িত রয়েছেন, সেসব প্রতিষ্ঠান প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এমন কী একই প্রতিষ্ঠানের দুটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানিকে ঋণ দেয়ার জন্য মনোনীত করা হয়েছে বলে তাদের দাবি।

ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর এ ধরনের দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হয়নি আইসিবি। তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মতে, যাদের কাছ থেকে ঋণের টাকা ফেরত আসবে, তাদেরকেই ঋণ দেয়া হচ্ছে।

আইসিবি সূত্রে জানা যায়, ২৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ দেয়া হচ্ছে সিটি ব্রোকারেজ লিমিটেডকে, তারা পাচ্ছে ১৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণ পাচ্ছে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ, তারা পাচ্ছে ১২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজ ৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজ ৯ কোটি ৫৮ লাখ, বিএলআই ক্যাপিটাল ৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা, এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ৭ কোটি ১৪ লাখ, বিডি সিকিউরিটিজ ৫ কোটি ৪৩ লাখ, ইউনিক্যাপ ইনভেস্টমেন্ট ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা ঋণ পাচ্ছে। এছাড়া মিউওয়ে সিকিউরিটিজ ৯৯ লাখ টাকা, ক্যান্ডল স্টোন ২৪ লাখ টাকা, কাইয়ুম সিকিউরিটিজ ২৩ লাখ টাকা, বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্ট এক কোটি ২ লাখ টাকা, ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজ এক কোটি ৬ লাখ টাকা, ফিনিক্স সিকিউরিটিজ এক কোটি ২৭ লাখ টাকা, বিডিভি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ২৫ লাখ টাকা, অ্যালায়েন্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ২১ লাখ টাকা, শেলটেক ব্রোকারেজ ৮৭ লাখ টাকা, বিডি বেঞ্চার এক কোটি ১০ লাখ টাকা, এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এক কোটি ১৩ লাখ টাকা, প্রাইলিংক সিকিউরিটিজ এক কোটি টাকা, স্ট্র্যাটেজি ফিন্যান্স এক কোটি ১৯ লাখ টাকা, স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ৭৫ লাখ টাকা, ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন সার্ভিসেস ৮৬ লাখ টাকা এবং নিউ এরা সিকিউরিটিজ ৩৪ কোটি টাকা পাচ্ছে।

অন্যদিকে বিডি ক্যাপিটাল এক কোটি ৬৬ লাখ এবং জিএসপি ইনভেস্টমেন্ট এক কোটি ৫৪ লাখ টাকা ঋণ পাচ্ছে। তবে এ দুটি প্রতিষ্ঠানের কোন্ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছেÑ তা জানা যায়নি। এছাড়া বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিশোধিত মূলধনের উপর ভিত্তি করে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত: বাংলাদেশ ব্যাংক আইসিবি-কে মোট ৮৫৬ কোটি টাকার তহবিল দিলেও পুণঃঅর্থায়ন করার জন্য দেয়া হচ্ছে মাত্র ৯৫ কোটি ৩ লাখ টাকা। আর ৭৬০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা আইসিবি নিজে বিনিয়োগ করবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুণঃঅর্থায়নের জন্য আরো বেশি অর্থ দিলে প্রকৃতপক্ষে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হতো।

এ বিষয়ে আইসিবি বলছে, আইসিবির পরিশোধিত মূলধনের ২০ শতাংশ টাকা নিজেদের কাছে রেখেছে। বাকি টাকা তারা পুণঃঅর্থায়ন করবে। তবে এ বিষয়ে ঋণ মঞ্জুরী কমিটির দায়িত্বে থাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-মহাব্যবস্থাপক মোঃ নজরুল ইসলামের যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের তদারকি কমিটির আহবায়ক ও বিএসইসির মূখপাত্র সাইফুর রহমান এ বিষয়ে ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, “ঋণ বিতরণের বিষয়টি আইসিবি’র। ঋণ মঞ্জুরির জন্য আলাদা কমিটি আছে। তদারকি কমিটি শুধু নীতিমালা দেয়।”

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ১৪৭৬ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged