ছাড়পত্র ছাড়াই প্রাইম ইসলামী লাইফের সিইও আপেল মাহমুদ

সময়: মঙ্গলবার, নভেম্বর ৫, ২০১৯ ৯:৩৪:৩৯ পূর্বাহ্ণ


অনুপ সর্বজ্ঞ : ‘আলফা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স’ থেকে যথাযথ নিয়মে পদত্যাগ করেননি আপেল মাহমুদ। দায়িত্ব পালনকালীন নানান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অমিমাংসিত রেখেই গত ২১ আগস্ট কোম্পানিটির সিইও পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে ই-মেইলের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র প্রেরণ করেন তিনি।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ অমিমাংসিত বিষয়গুলো দ্রুত নিষ্পন্ন করে যথাযথ নিয়মে পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার জন্য গত ২৮ আগস্ট একটি চিঠি দেন আপেল মাহমুদ-কে। কিন্তু বিষয়গুলো অমিমাংসিত রেখে আলফা লাইফ থেকে ছাড়পত্র না নিয়েই গত ১১ সেপ্টেম্বর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সিইও পদে যোগদান করেন তিনি।

বিষয়টি জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ২৩ অক্টোবর বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ করেন আলফা লাইফের চেয়ারম্যান আলমগীর শামসুল আলামিন। লিখিত অভিযোগে তিনি বলেছেন, ‘সিইওর পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করা এবং অমিমাংসিত বিষয়গুলো নিষ্পত্তির জন্য তাকে পুনরায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর চিঠি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এক্ষেত্রেও কোন ব্যাখ্যা প্রদান করেননি আপেল মাহমুদ।’

জানতে চাইলে আলফা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান আলমগীর শামসুল আলামিন ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘আপেল মাহমুদ বীমা আইন লঙ্ঘন করেছেন। যা আমরা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘প্রাইম ইসলামী লাইফ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান। তাই এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানে সিইও হিসেবে কোন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়ার পূর্বে সংশ্লিষ্ট পরিচালনা পর্ষদের যাচাই করা উচিত ছিল আপেল মাহমুদের পূর্বের প্রতিষ্ঠান থেকে ক্লিয়ারেন্স নেয়া আছে কিনা।’

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘গত চার বছরের বেশি সময় আলফা লাইফে সিইও’র দায়িত্ব পালন করেছেন আপেল মাহমুদ। বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন সময়ে ব্যবসা অর্জনের যেসব তথ্য বা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে তার সাথে সফটওয়্যার জেনারেটেড রিপোর্টের যথেষ্ট গরমিল রয়েছে। শুধু তাই নয়, পরিচালনা পর্ষদকে না জানিয়ে বাহরাইন ভিত্তিক ট্রাস্ট রি নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন আপেল মাহমুদ এবং প্রায় এক বছর ছয় মাস পর্যন্ত তাদের বকেয়া বিল বাবদ ১০ লাখ ৫৬ হাজার ২৪৮ টাকা পরিশোধের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।’

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, ‘কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মতো দায়িত্বশীল ব্যক্তির পক্ষে এহেন কর্মকাণ্ড অপ্রত্যাশিত ও অগ্রহণযোগ্য। যেহেতু বিষয়টি বীমা আইন ২০১০ এর ৮০ ধারা এবং মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা ২০১২-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন তাই আপেল মাহমুদকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশও প্রদান করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে আপেল মাহমুদ বলেন, ‘আমি ছাড়পত্র এখন পর্যন্ত হাতে পাইনি এটা সত্য। তবে বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে বলে আমি জেনেছি।’

এদিকে আলফা লাইফে আপেল মাহমুদের ব্যয়সায়িক কার্যক্রম সন্তোষজনক ছিল না বলে জানা গেছে আইডিআরএ সূত্রে। কোম্পানিটির মাঠপর্যায়ে এজেন্টের তুলনায় সুপারভাইজার পদের আধিক্য বেশি। পলিসি তামাদির হারও আশঙ্কাজনক। এছাড়া নিয়ম অনুযায়ী সরকারি সিকিউরিটিজ খাতে কোন ধরনের বিনিয়োগ নেই।

জানা গেছে, বীমা আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা ব্যয় অনুমোদিত সীমার তুলনায় অনেক বেশি। মাঠপর্যায়ে এজেন্ট নিয়োগকারী এবং সুপারভাইজারদের কোন পেশাগত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এছাড়া প্রিমিয়ামের সাথে কমিশনসহ অন্যান্য প্রত্যক্ষ ব্যয় সমন্বয় হওয়ার কারণে আলফা লাইফের কোন নগদ তহবিল সৃষ্টি হয়নি। এছাড়াও মাঠপর্যায়ের সাংগঠনিক কাঠামো অত্যন্ত দুর্বল হওয়ায় কর্মীরা বেশিদিন স্থায়ী হয় না। ফলে এ কোম্পানির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শাখা অফিস এখন বন্ধ।

এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ’র সদস্য বোরহান উদ্দীন বলেন, ‘আমরা অভিযোগপত্র পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩৫৯ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged