ভুল তথ্য দিচ্ছে ডিএসই!

তালিকাচ্যুত হলেও বাজার মূলধনে ট্রেজারি বন্ডের হিসাব

সময়: বুধবার, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯ ৯:১১:০৮ পূর্বাহ্ণ


সাইফুল শুভ : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর বিরুদ্ধে বন্ড তালিকাচ্যুতির তথ্য গোপন করার অভিযোগ ওঠেছে। গত ২০১১ সালের পর থেকে সরকারি ট্রেজারি বন্ডগুলো তালিকাভুক্ত না থাকার পরও বাজার মূলধনে দেখানো হচ্ছে। গত ৮ বছর ধরে সব জায়গায় ভুল তথ্য উপস্থাপন করে আসছে ডিএসই। তালিকাচ্যুতির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা বাজার মূলধন দেখিয়েছে। এর মধ্যে ৫৪ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকার ট্রেজারি বন্ড রয়েছে। কিন্তু বন্ডগুলো তালিকাভুক্ত না থাকায় এ টাকা বাজার মূলধন হিসেবে দেখানো যায় না। সে হিসেবে ডিএসই’র প্রকৃত বাজার মূলধন হবে ৩ লাখ ২১ হাজার ১১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারিতে ২২১টি ট্রেজারি বন্ড ডিএসই-তে তালিকাভুক্ত হয়। কিন্তু তালিকাভুক্তির পর কোনো লেনদেন হয়নি। দীর্ঘদিন কোনো লেনদেন না হওয়ায় ২০১১ সালে ডিএসই থেকে বন্ডগুলো তালিকাচ্যুত করার চিঠি দেয়া হয়।
এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক ‘এমআই মডিউল’ নামে নিজস্ব একটি বন্ড মার্কেট তৈরি করে। বর্তমানে ওই মার্কেটে নিয়মিত এসব বন্ড লেনদেন হচ্ছে। এমআই মডিউলে বন্ডের বাজার মূলধন ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রটি বলছে, ডিএসইতে তালিকাভুক্ত করতে তাদের বড় অংকের ফি দিতে হয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। এরপরও তারা ২০১১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে। কিন্তু কোনো উন্নয়ন না হওয়ায় তারা ডিএসই থেকে বের হয়ে আসে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ‘ দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘তালিকাভুক্তির পর দীর্ঘদিন বন্ডগুলো লেনদেন হয়নি। স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হলে ০.৫ শতাংশ ট্রেডিং ফি দিতে হয়। এত টাকা দিয়ে কেউ লেনদেন করতে চায় না। ফলে ২০১১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিএসই থেকে বের হয়ে আসে। ডেট ম্যানেজমেন্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিএসই-কে জানিয়েও দেয়া হয়। বর্তমানে বন্ডগুলো এমআই মডিউল-এর অধীনে এখন লেনদেন হচ্ছে। এখানে লেনদেন করতে কোনো ফি দিতে হয় না।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের একটি সূত্র বলছে, ডিএসই তাদের বাজার মূলধন বাড়িয়ে দেখানোর জন্যই হয়তো এ তথ্য প্রকাশ করেনি। এটি ডিএসইর নিজস্ব বিষয়। বন্ড মার্কেটে ট্রেডিং ফি রাখতে হয় কম। কারণ বন্ড মার্কেটে লেনদেন হয় বড় অংকের। একশ’ থেকে ৫শ’ কোটি বা তারও বেশি। কিন্তু ট্রেডিং ফি বেশি থাকায় কেউ লেনদেন করবে না। একটা ট্রেডে হয়তো কয়েক লাখ টাকা ফি চলে আসে। তাই এটি কার্যকর হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মতিন পাটোয়ারি ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘আমার জানামতে এগুলো এখনো তালিকাভুক্ত আছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক কেন তালিকাচ্যুতির বিষয়টি বলেছেÑ সেটি খতিয়ে দেখবো। তালিকাভুক্তির পর লেনদেন হয়নি এটি সত্য। বন্ড মার্কেট উন্নয়নের জন্য একটি কমিটি কাজ করছে।’
‘বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো তালিকাভুক্তি ফি দেয় কি-না’ Ñজানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘এটি এই মুহূর্তে বলতে পারবো না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসই’র পরিচালক রকিবুর রহমান ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। বিস্তারিত জেনে জানানো হবে।’
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ স্টক এক্সচেঞ্জের বিষয়। তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি বা তহবিল নিয়ে বিএসইসি কোনো মন্তব্য করে না। ডিএসই এর সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারবে। যদি কোনো অসঙ্গতি থাকে বিএসইসি-কে জানালে সেটি খতিয়ে দেখা হবে।’
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে বলেন, ‘স্টক এক্সচেঞ্জ যদি তথ্য গোপন করে থাকে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। কারণ স্টক এক্সচেঞ্জের অনেক তথ্য নিয়ে সরকার বা পরিসংখ্যান ব্যুরো বিভিন্ন সূচক নির্ধারণ করে থাকে। সেক্ষেত্রে সব জায়গায় ভুল তথ্য চলে যাচ্ছে। বিষয়টি বিএসইসি-কে খতিয়ে দেখা উচিত।’

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ড. আবু আহমেদ শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে বলেন, ‘স্টক এক্সচেঞ্জ তথ্য গোপন করে ভুল করেছে। তবে কেন গোপন করলো সেটি ডিএসই বলতে পারবে। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা উচিত হবে না।’

‘বাজার মূলধনের তথ্যে গড়মিলের কারণে সূচকে কোনো প্রভাব পড়েছে কি-না’ Ñজানতে চাইলে আবু আহমেদ বলেন, ‘লেনদেন না হলে সূচকে কোনো প্রভাব পড়বে না’।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৪০৮ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged