রবি’র আইপিওকে ঘিরে সেল প্রেসার

বাড়বে তারল্য সঙ্কট

সময়: মঙ্গলবার, নভেম্বর ১৭, ২০২০ ১১:০২:১৭ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : বর্তমান পুঁজিবাজারে একটু বেশিই সেল প্রেসার দেখা যাচ্ছে। বেশিরভাগ সিকিউরিটিজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করলে যে কয়েকটি কারণ উঠে এসেছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রবি’র আইপিও। কারণ সিকিউরিটিজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক তথা ইলিজিবল ইনভেস্টররা রবি’র আইপিওতে আবেদন করার জন্য শেয়ার বিক্রি করে এবং নতুন বিনিয়োগে না গিয়ে টাকা ক্যাশ করে রাখছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কীম (সিআইএস), সাধারণ বিনিয়োগকারী ও এনআরবি বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও রবি নিয়ে টান টান উত্তেজনা চলছে। মনে হচ্ছে ৫২৩ কোটি টাকা আইপিও’র বিপরীতে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি আবেদন জমা পড়বে। আর এতো বিপুল পরিমাণ অর্থ এই পুঁজিবাজার থেকেই যাবে যা তারল্য সংকটকে আরো বাড়িয়ে তুলবে।

দেশের মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর মধ্যে গ্রামীন ফোনের পরেই রবি আজিয়াটা লিমিটেডের অবস্থান। বিটিআরসির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গেল সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত দেশে মোট মোবাইল ফোন সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৭১ লাখ ৯ হাজার। এর মধ্যে প্রথম অবস্থানে থাকা গ্রামীন ফোনের সাবস্ক্রাইবার ৭ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার এবং দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রবি আজিয়াটার সাবস্ক্রাইবার ৫ কোটি ১ লাখ ২৬ হাজার। তাই পুঁজিবাজারে গ্রামীন ফোন আসার পর রবি’র তালিকাভুক্তি নি:সন্দেহে বিনিয়োগকারীদের জন্য সুখবর। কিন্তু এ মুহূর্তে রবি’র আইপিও হবে পুঁজিবাজার তথা বিনিয়োগকারীদের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

দেশের পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন পেয়েছে রবি আজিয়াটা লিমিটেড। আগামী ১৭ নভেম্বর এ কোম্পানির আইপিও আবেদন শুরু হবে। কোম্পানিটি অভিহিত মূল্যে অর্থাৎ প্রতিটি ১০ টাকায় ৫২ কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৪টি শেয়ার ইস্যু করে ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪০ টাকা সংগ্রহ করবে।
টেলিকম খাতের অন্যতম বৃহৎ কোম্পানি রবি এবং এরকম কোম্পানি বাজারে আসুক তা বিনিয়োগকারীরাও চায়। কিন্তু বর্তমান তারল্য সংকটের বাজারে এ মুহূর্ত্বে রবি এতো বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলন করলে তা বিনিয়োগকারী এবং সামগ্রিক পুঁজিবাজারের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।

কারণ প্রথমত রবি আজিয়াটা লিমিটেড ফিন্যান্সিয়াল হেলদি কোম্পানি নয়। সর্বশেষ প্রকাশিত প্রান্তিক প্রতিবেদন অর্থাৎ এপ্রিল’২০২০-জুন’২০২০ পর্যন্ত সময়ে রবি’র শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে মাত্র ১২ পয়সা। গত অর্থবছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ০.০৭ টাকা। অন্যদিকে গ্রামীন ফোনের এপ্রিল-জুন ২০২০ সময়ে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫.৩৮ টাকা। অর্থাৎ তুলনায়মূলক চিত্রে গ্রামীন ফোন থেকে রবি এতোটাই পিছিয়ে যে কোম্পানিটির ফিন্যান্সিয়াল পজিশন ভালো করতে হলে অনেক বছর সময় প্রয়োজন। আর এতোবছর বিনিয়োগকারীদের পুঁজি এক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কারণ রবি’র বর্তমানে ৪৭১ কোটি ৪১ লাখ ৪০ হাজার ১টি শেয়ার রয়েছে। এর সঙ্গে আইপিও’র আরো ৫২ কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৪টি শেয়ার যোগ হবে। তাতে মোট আইপিও পরবর্তী শেয়ার সংখ্যার পরিমাণ দাঁড়াবে ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৫টি। এতো বিপুল পরিমাণ শেয়ারের বিপরীতে রবি বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিতে কতটুকু সক্ষম তা সহজেই অনুমেয়। কারণ ২০১৬ সাল থেকে রবি’র ডিভিডেন্ড দেওয়ার কোন রেকর্ড নেই। আর কোম্পানিটি তার অপারেশনাল ক্যাশ ফ্লো পজেটিভ না থাকলে এবং ভালো পরিমাণ মুনাফা করতে না পারলে কোন ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না বলে প্রসপেক্টাসে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। তাই রবি আজিয়াটায় বিনিয়োগ নিয়ে ব্যাপক দুশ্চিন্তা আসাটাই স্বাভাবিক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যেহেতু রবি আজিয়াটার নিজস্ব ফিন্যান্সিয়াল হেলথি হওয়াটা জরুরি এবং বর্তমান বাজার পরিস্থিতি অনুকূলে নয়; তাই এ মুহূর্তে রবি’র আইপিও প্রক্রিয়া চলমান রাখাটা সমীচীন হবে না। আগামী বছর অনুকূল পরিবেশ পেলে রবি’র আইপিও পুনরায় চালু করা যেতে পারে বলে মনে করেন তারা।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ১৮৯৯ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged