বীমা খাতে দুর্বল কোম্পানির দৌরাত্ম্য বাড়ছে

সময়: রবিবার, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯ ৯:৪৫:০৪ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের পুঁজিবাজারে হঠাৎ বেড়ে গেছে বীমা খাতের দুর্বল কোম্পানির দৌরাত্ম্য। বীমা খাতে কিছু ভালো মৌলভিত্তির শেয়ার থাকলেও দুর্বল কোম্পানির দর বাড়ায় সংশয়ে রয়েছে বিনিয়োগকারীরা। এসব কোম্পানির পেছনে কোনো চক্র রয়েছে কি না Ñতা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তথ্যমতে, দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে গত সপ্তাহে অধিকাংশ বীমা খাতের কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। যার প্রভাবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষে তালিকায় যেসব কোম্পানি রয়েছে, তার সবগুলোই বীমা খাতের। এ তালিকায় থাকা বেশ কিছু কোম্পানি রয়েছে দুর্বল মৌলভিত্তি ও স্বল্প মূলধনী সম্পন্ন। এর মধ্যে ৪টি প্রতিষ্ঠান ‘বি’ ক্যাটাগরির। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে ।

দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে যেসব বীমা কোম্পানি দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় ওঠে এসেছে, তার মধ্যে রয়েছে- প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, জনতা ইন্স্যুরেন্স, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, নর্দার্ন জেনারেল, পূরবী জেনারেল, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্স।

লেনদেন তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডিএসই-তে গত সপ্তাহে মোট লেনদেনের ১২ শতাংশ বীমা খাতের দখলে ছিল। এ খাতের কোম্পানিগুলোর দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ৪০ কোটি টাকারও বেশি। আগের সপ্তাহে বীমা খাতের অংশগ্রহণ ছিল ৫ শতাংশ। ওই সময় আলোচ্য খাতের দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছিল প্রায় ২২ কোটি টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে বীমা খাতের লেনদেন বেড়েছে ৫৮ শতাংশ।

তালিকাভুক্ত বীমা কোম্পানিগুলোর ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে নেই বিদেশি বিনিয়োগ। তবে এসব কোম্পানিতে উল্লেখযোগ্যহারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ রয়েছে। আগস্ট মাসের ডিএসই’র হালনাগাদ তথ্যে বিষয়টি ওঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ মন্দা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা যখন দিশেহারা, তখন স্থিতিশীল বাজারের লক্ষ্যে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে স্টেকহোল্ডাররা। ঠিক তখনই বাজারের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে এবং পুঁজিবাজার উন্নয়নে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বাজারের স্বার্থে কিছু পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের কথা জানান। পরবর্তীতে তিনি বীমা খাতের যেসব কোম্পানি এখনো বাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি সেগুলোকে দ্রুত পুঁজিবাজারে আসার নির্দেশনা দেন। তার এ নির্দেশনার পর বাজারে বীমা খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। কিন্তু যেসব কোম্পানির দর বাড়ছে তার অধিকাংশই দুর্বল ও স্বল্পমূলধনী কোম্পানি। বাজারের স্বার্থে অর্থমন্ত্রী ভালো উদ্যোগ নিলেও তার ঘোষণার পর কোনো অসৎ চক্র স্বল্পমূলধনী ও দুর্বল কোম্পানিকে ঘিরে মুনাফার চেষ্টা করছে বলে মনে করছেন তারা। আর এ কারণে এসব কোম্পানির দরে হঠাৎ উল্লম্ফন দেখা গেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত এসব কোম্পানির দর বাড়ার পেছনের কারণ খুঁজে বের করা।
তারা আরো বলছেন, বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারে ‘ভালো’ কোম্পানির চাহিদা রয়েছে। বিদ্যমান আইন-কানুন মেনে দেশের যে কোনো প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারে। কিন্তু বীমা কোম্পানিগুলো বাজারের সেই চাহিদা পূরণ করতে পারবে কি না Ñতা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ সার্বিকভাবে বীমা খাতের কোম্পানিগুলো ইমেজ সঙ্কটে রয়েছে। নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে গ্রাহকদের বীমাদাবি যথাযথ ও যথাসময়ে পরিশোধ না করার অভিযোগ। এমতাবস্থায় বীমা কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ তুলতে বাধ্য করা হলে সেটি সার্বিকভাবে বাজারের চেয়ে বীমা খাতের উদ্যোক্তারাই অধিক লাভবান হবেন।

এ সম্পর্কে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’- কে বলেন, ‘বীমা কোম্পানিগুলোকে বাজারে আসার নির্দেশ দেয়ার সঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানির দর বাড়ার কোনো সম্পর্ক নেই।’ বর্তমানে জুন ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর দিকে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে বেসরকারি খাতে মোট ৭৫টি (জীবন বীমা ও সাধারণ) বীমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা কোম্পানির সংখ্যা ৪৭টি। তালিকার বাইরে রয়েছে ২৮টি বীমা কোম্পানি।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান/এনটি/

Share
নিউজটি ৪৩৩ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged