বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে না পুঁজিবাজারের ৩৬ কোম্পানি : ৩৬ কোম্পানির বোনাসে বাধা

সময়: বৃহস্পতিবার, জুলাই ১৮, ২০১৯ ৪:৪০:৩৬ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬টি কোম্পানি এবার বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে না। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সম্প্রতি জারি করা এক নির্দেশনার কারণে কোম্পানিগুলোর বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। কোম্পানিগুলোর আর্থিক বছর শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। আর্থিক বছর শেষে সামনে এসব কোম্পানির লভ্যাংশের ঘোষণা আসবে।
গত ২১ মে বিএসইসির জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার নেই, সেসব কোম্পানি বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণার মাধ্যমে মূলধন বাড়াতে পারবে না। এ নির্দেশনার কারণে ৩৬ কোম্পানির বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এ ৩৬ কোম্পানির মধ্যে ১৫টি ২০১৮ সালে শেয়ারধারীদের জন্য বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল। এবার এসব কোম্পানিকে হয় নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করতে হবে, নয়তো কোনো লভ্যাংশ দিতে পারবে না। আর তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি শেয়ারধারীদের লভ্যাংশ না দিলে তালিকাভুক্তি আইন অনুযায়ী ওই কোম্পানি দুর্বল বা মানহীন কোম্পানি হিসেবে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত হবে।
বাজার ও কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিএসইসির নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকেরা শেয়ার কিনতে আগ্রহী হলেও বিএসইসির সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ আইনের কারণে তা পারেননি। সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ আইনের ধারা ৪ এর উপধারা ২ অনুযায়ী, কোনো কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারী, নিরীক্ষকসহ কোম্পানির সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা আর্থিক হিসাব বছর শেষ হওয়ার দুই মাস আগে থেকে ওই কোম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর বা গ্রহণ করতে পারেন না। এ নিষেধাজ্ঞা কোম্পানির আর্থিক হিসাব পরিচালনা পর্ষদে চূড়ান্তভাবে অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকে। সেই হিসাবে যেসব কোম্পানির হিসাব বা আর্থিক বছর ৩০ জুন, সেসব কোম্পানির সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর ও গ্রহণ ৩০ এপ্রিলের পর থেকে আইনগতভাবে নিষিদ্ধ।
বিএসইসি সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার না থাকলে বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণার ওপর নিষেধাজ্ঞাটি জারি করে ২১ মে। ফলে সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ আইনের কারণে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ ৩৬ কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের পক্ষে ২১ মের পর নতুন করে শেয়ার কেনার সুযোগ ছিল না। এ বিষয়ে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি আজম জে চৌধুরী জানান, ‘আইনি বাধ্যবাধকতা আরোপের মাধ্যমে বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণার পথ বন্ধ করে দেয়া হলে তাতে শেয়ারধারীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাজারেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমরা মনে করি, কোনো কোম্পানির ব্যালান্সশিটের ভিত্তি যদি বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণার উপযোগী হয়, তাহলে সেই কোম্পানিকে বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণার সুযোগ দেয়া উচিত। ব্যাংকসহ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এমন অনেক কোম্পানি আছে, যাদের নগদ লভ্যাংশ প্রদানের সক্ষমতা কম। এখন যদি সেসব কোম্পানি বোনাস লভ্যাংশও দিতে না পারে, তাহলে শেষবিচারে শেয়ারধারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর প্রথম বিএসইসি তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ারধারণ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে সব সময় সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক করা হয়। পাশাপাশি প্রত্যেক পরিচালকের (স্বতন্ত্র পরিচালক বাদে) জন্য ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক করা হয়। শুরুতে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্ত পরিপালনে ব্যর্থ কোম্পানির জন্য অধিকারমূলক বা রাইট শেয়ার ইস্যু, পুনঃপ্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা রিপিট আইপিওর মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। আর ২১ মে নতুন নির্দেশনার মাধ্যমে বোনাস শেয়ার ঘোষণার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো।
জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, ‘ন্যূনতম শেয়ার ধারণে ব্যর্থ কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকেরা যদি শর্ত পূরণের জন্য বাজার থেকে শেয়ার কেনার আগ্রহ প্রকাশ করে আমাদের কাছে আবেদন করতেন, তবে তা হয়তো কমিশন বিশেষ বিবেচনায় রাখত।’
যেসব কোম্পানি বোনাস দিতে পারবে না
ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রদত্ত শেয়ারধারণসংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণে ব্যর্থ কোম্পানির সংখ্যা ৩৭। এগুলো হলো অগ্নি সিস্টেমস, আলহাজ টেক্সটাইল, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, অ্যাপোলো ইস্পাত, বারাকা পাওয়ার, বিডি কম, বিডি থাই, বেক্সিমকো, বেক্সিমকো ফার্মা, সেন্ট্রাল ফার্মা, কনফিডেন্স সিমেন্ট, ডেল্টা স্পিনিং, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, দুলামিয়া কটন, এমারেল্ড অয়েল, ফ্যামিলিটেক্স, ফাইন ফুডস, ফুওয়াং সিরামিক, ফুওয়াং ফুডস, জেনারেশন নেক্সট, ইমাম বাটন, ইনটেক লিমিটেড, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, কেঅ্যান্ডকিউ, ম্যাকসন্স, মেট্রো স্পিনিং, মিথুন নিটিং, নর্দার্ন জুট, অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ফার্মা এইড, সালভো কেমিক্যাল, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, তাল্লু স্পিনিং ও ইউনাইটেড এয়ার। এর মধ্যে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, সালভো কেমিক্যাল, অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজ, ন্যাশনাল টিউবস, মেট্রো স্পিনিং, ইনটেক লিমিটেড, জেনারেশন নেক্সট, ফুওয়াং ফুডস, ফুওয়াং সিরামিক, ফাইন ফুডস, ফ্যামিলিটেক্স, সেন্ট্রাল ফার্মা, বিডি থাই, বারাকা পাওয়ার, অ্যাপোলো ইস্পাত ও আলহাজ টেক্সটাইল ২০১৮ সালে শুধু বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে। ১০টি কোম্পানি কোনো ধরনের লভ্যাংশ দেয়নি। ৭টি কোম্পানি শুধু নগদ লভ্যাংশ দেয়। আর ৪টি কোম্পানি নগদ ও বোনাস- উভয় ধরনের লভ্যাংশ ঘোষণা দিয়েছে।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৫৩২ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged