মন্দা বাজারে বিনিয়োগে ভাটা : বিদেশি কৌশলগত অংশীদার পাচ্ছে না সিসিবিএল

সময়: রবিবার, জুলাই ২১, ২০১৯ ৪:৫৯:৩১ পূর্বাহ্ণ


এম সাইফুল শুভ : নবগঠিত ‘সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড’ (সিসিবিএল)-এর জন্য বিদেশি কৌশলগত অংশীদার পাচ্ছে না ‘ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ’ (ডিএসই)। অথচ বছর খানেক আগেও একাধিক বিদেশি বিনিয়োগকারী সংস্থা কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছিল। এ জন্য ডিএসই’র ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতার অভাবকেই দায়ী করছেন কেউ কেউ। অন্যদিকে গত কয়েকমাস ধরে মন্দার কারণে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে, একই সঙ্গে কমছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে পৃথক ক্লিয়ারিং হাউস (নিকাশ ঘর) প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘সিসিবিএল’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করেছে ‘ডিএসই’। এর পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ৩০০ কোটি টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের মধ্যে ৪৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ডিএসই’র অধীনে। এছাড়া সিএসই’র কাছে ২০ শতাংশ, বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১৫ শতাংশ, ‘সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড’ (সিডিবিএল)-এর কাছে ১০ শতাংশ এবং অবশিষ্ট ১০ শতাংশ কৌশলগত অংশীদারের (স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার) কাছে বিক্রির সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু কোনো কৌশলগত অংশীদার না পাওয়ায় ওই অবশিষ্ট ১০ শতাংশ শেয়ার ‘সিডিবিএল’-এর ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এজন্য ‘সিডিবিএল’-কে অতিরিক্ত ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএসই’র পরিচালক শরীফ আতাউর রহমান ‘শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়া যায়নি সত্য। তবে প্রতিষ্ঠান চালু হয়ে গেলে বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়া যাবে। এখনও যেহেতু কার্যক্রম শুরু হয়নি, শুরু হলে নিশ্চয় পাওয়া যাবে।’
এদিকে বিদেশি কৌশলগত অংশীদারদের কাছে বৈদেশিক মুদ্রায় শেয়ার বিক্রির বিপরীতে সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা প্রত্যাশা করেছিলেন ডিএসই’র শেয়ারহোল্ডাররা। কিন্তু প্রণোদনা প্রদানের পরিবর্তে বিক্রিত অর্থের ওপর করারোপ করায় তারা কিছুটা হতাশ। প্রণোদনা প্রদানের ক্ষেত্রে পণ্য রফতানি কিংবা প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রেরণের ক্ষেত্রে সরকার যে ধরণের প্রণোদনা দিয়ে থাকে, সে প্রসঙ্গ টেনেছেন কেউ কেউ।
প্রসঙ্গত: বিদেশি কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি বাবদ ডিএসই সদস্যরা যে অর্থ লাভ করেছেন, এর ওপর ১৫ শতাংশ করারোপ করেছে ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড’ (এনবিআর)। তবে বিক্রি বাবদ প্রাপ্ত অর্থ পুনরায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে সেক্ষেত্রে মাত্র ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে, আর বাজারের স্বার্থে বিনিয়োগকৃত অর্থ তিন বছরের জন্য লক-ইন রাখার শর্তারোপ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী ‘শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি বাবদ নগদ প্রায় এক হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এসেছে। এখানে সরকার একটি প্রণোদনা দিতে পারতো। অন্যদিকে বিনিয়োগের শর্তটাও কঠিন। তারপরও ৭০ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ অর্থ যথাযথ কর দিয়ে অনেকেই অন্যত্র নিয়ে গেছে।’
পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চীনের বিনিয়োগ আসার পর আমরা আশা করেছিলাম বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ বেড়ে যাবে। কিন্তু আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। এজন্য স্টক এক্সচেঞ্জকে আরো প্রচারণা চালাতে হবে। কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছে যেতে হবে।’ এ বিষয়ে ডিএসই-কে উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে ডিএসই’র কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চীনা জোটের বিনিয়োগের পরও সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের চিত্র নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পুঁজিবাজারে যে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে, তা গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এছাড়া গত কয়েকমাস ধরে মন্দার কারণে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে, একই সঙ্গে কমছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব। প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত মাসের (জুন ২০১৯) শেষে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৩২৮টি। এর আগের মাসে (মে) এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৬৮টি। অর্থাৎ এক মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বন্ধ হয়েছে ২ হাজার ৬৮০টি।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৪১৪ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged