editorial

শেয়ারবাজার উন্নয়নে বিশেষ তহবিল একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ

সময়: সোমবার, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২০ ১২:৫৪:৩৯ পূর্বাহ্ণ


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় শেয়ারবাজার উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বাজার বিশ্লেষকগণ মনে করছেন, এসব সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ইতিবাচক এবং এগুলো দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ার বাজারের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে ব্যবসায়রত প্রত্যেকটি সিডিউল ব্যাংকের জন্য ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের উদ্যোগটি বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে। এতে শেয়ারবাজারে ১২ হাজার ৮০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত তারল্যের যোগান দেয়া সম্ভব হবে। তারল্য যোগানের এই পরিমাণ বিনিয়োগ সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন(বিএমবিএ) অনেক দিন ধরেই বাজারের তারল্য সরবরাহ বাড়ানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা যোগান দেবার কথা বলে আসছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বাজারে তারল্যের যোগান প্রত্যাশার চাইতেও ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বেশি হবে। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের কার্য নির্বাহী কমিটির নবনির্বাচিত কর্মকর্তাগণ গতকাল রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত সংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে শেয়ার বাজারের জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের এই উদ্যোগকে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তারা বলেছেন, এই মুহূর্তে শেয়ারবাজারে তারল্য সঙ্কট বিরাজ করছে। কাজেই তারা অনেক দিন ধরেই বাজারে তারল্য যোগান দেবার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট বিভিন্নভাবে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে তাদের সেই দাবি পূরণ হয়েছে। বিএমবিএ’র নবনির্বাচিত সভাপতি মো: ছায়েদুর রহমান সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন,গত দশ বছরে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে আর কখনোই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কার্যকর উদ্যোগের ফলে শেয়ারবাজারে এক ধরনের চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই নতুন করে বিনিয়োগে আসার জন্য চিন্তা-ভাবনা করছেন। কোনো কোনো মহল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগকে নানাভাবে সমালোচনার চেষ্টা করা হচ্ছে। সাংবাদিক সম্মেলনে মহল বিশেষের সমালোচনার জবাব দেয়া হয়। তারা বলেন,বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় দেশের সিডিউল ব্যাংকগুলো যে বিশেষ ফান্ড গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে তা কোনো অনুদান বা ভর্তুকি নয়। কেউ কেউ বলছেন, এই বিশেষ ফান্ড গঠনের কারণে ব্যাংকগুলোর লোকসানের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে, ট্যাক্সের টাকায় এই ফান্ড গঠিত হচ্ছে। আসলে বিষয়টি তেমন নয়। এ ধরনের নেতিবাচক প্রচারণা সাধারণ বিনিয়োগকারিদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে পারে বলেও তারা মন্তব্য করেন। তারা আরো বলেন, দেশের সিডিউল ব্যাংকগুলোর প্রত্যেকে ২০০ কোটি টাকার যে বিশেষ ফান্ড তৈরি করবে তা কোনো ট্যাক্সের টাকা নয়। এতে ব্যাংকের স্বাভাবিক বিনিয়োগ কার্যক্রমের উপর কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে না। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক সিডিউল ব্যাংকগুলোকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার যে বিশেষ ফান্ড গঠনের অনুমতি দিয়েছে তা তাদের আগের বিনিয়োগ লিমিটের অতিরিক্ত। এই ফান্ডের অর্থ তাদের মূল লেজারের হিসাবের বাইরে থাকবে। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে বিশেষ কিছু সুবিধাও দেয়া হচ্ছে। কাজেই এই বিশেষ ফান্ডের মতো একটি সুন্দর উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনার কিছু নেই। এ ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে বাজারের উন্নয়নের জন্য আরো কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দেশের ৪টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ২৫ শতাংশ শেয়ার বাজারে নিয়ে আসা হবে। এ ছাড়া রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের আরে ১৫ শতাংশ শেয়ার বাজারে ছাড়া হবে। বর্তমানে এই ব্যাংকের ১০ শতাংশ শেয়ার বাজারে রয়েছে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের লাভজনক ৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারও বাজারে নিয়ে আসা হচ্ছে। এসব উদ্যোগের ফলে বাজারে ভালো শেয়ারের স্বল্পতা দূর হবে। বিনিয়োগকারীরা দেখেশুনে ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে।
সাম্প্রতিক সময়ে সরকার শেয়ার বাজারের উন্নয়নে যে সব পদক্ষেপ নিয়েছেন তা অত্যন্ত ইতিবাচক এবং দীর্ঘ মেয়াদে তা বাজারের উন্নয়নে কার্যকর অবদান রাখবে। আমরা এ জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে অভিনন্দন জানাই। আগামীতে শেয়ার বাজার উন্নয়নে সময়ের প্রেক্ষিতে আরো যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন তাও গৃহীত হবে বলে আমরা আশায় রইলাম।

পদ্মা সেতু অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাইল ফলক হতে পারে
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন,পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষ হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার চেহারা পরিবর্তিত হয়ে যাবে। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হবে। সরকার এই এলাকার উন্নয়নের জন্য ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করেছে। এই অঞ্চলের যেসব ছেলে মেয়ে এখন পড়াশুনা করছে তাদের চাকরি এবং কর্মসংস্থানের কোনো সমস্যা হবে না। তিনি আরো বলেন,বিশ্বে কর্মসংস্থানের জন্য মানুষ অনেক কষ্ট করে। আবার কোনো কোনো দেশে কাজ করার মতো মানুষ পাওয়া যায় না। আমাদের দেশে কাজ করার মতো প্রচুর মানুষ রয়েছে। কিন্তু কর্মসংস্থানের সুযোগের অভাব রয়েছে। বর্তমান সরকার সবার জন্য কর্মসংস্থানের জন্য সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করা হচ্ছে। ফলে আগামীতে দেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে জোয়ার সৃষ্টি হবে। উল্লেখ্য,বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন কাজ বেশ দ্রুত গতিয়ে এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যেই এই সেতুর বেশির ভাগ অংশ দৃশ্যমান হয়েছে। পদ্মা সেতু সংলগ্ন জাজিরা পয়েন্টে ব্যাংক অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন,পদ্মা সেতু নির্মিত হবার পর তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবে। বিশেষ করে দেশের জিডিপি’র পরিমাণ অন্ত ২ শতাংশের মতো বৃদ্ধি পাবে। অর্থমন্ত্রী প্রসঙ্গক্রমে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের দেশে এখন কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বেশি। মোট জনসংখ্যার ৬১ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে অর্থাৎ এরা কর্মক্ষম। একটি দেশের মোট জনসংখ্যার দু-তৃতীয়াংশ বা তারও বেশি যখন কর্মক্ষম থাকে সেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হয়। একটি জাতির জীবনে এই অবস্থা একবারই আসে। যারা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সুফল কাজে লাগাতে পারে তারাই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারে। অর্থমন্ত্রী যে কথা বলেছেন তা খুবই বাস্তবসম্মত এবং ইতিবাচক। পদ্মা সেতু নির্মিত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে। কোনো একটি অঞ্চলে উন্নয়নের ছোঁয়া কিন্তু এমনি এমনি লাগে না। এ জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। দেশবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে এটা আমাদের সবার জন্যই অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। এই সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে দেশের অর্থনীতিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে এতে কোনোই সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের এ জন্য বেশ কিছু কাজ করতে হবে। পদ্মা সেতুতে প্রত্যক্ষভাবে হাজার খানেক মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে। তবে এই সেতু পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে। উল্লেখ্য, সরকার যে উন্নয়ন কাজ করে তার উদ্দেশ্য থাকে উন্নয়নের জন্য রাস্তা বা পথ তৈরি করে দেয়া। সেই উন্নয়নের রাস্তাকে ব্যবহার করে ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তারা শিল্প-কারখানা গড়ে তেলে। সেই সব প্রতিষ্ঠানে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। দারিদ্র্য বিমোচনের কর্মসংস্থান সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। পদ্মা সেতু তৈরি হলে সংশ্লিষ্ট জেলাসমূহে উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য আমাদেরকে ব্যক্তি খাতের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। বিনিয়োগ বাড়ানোর মতো অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পদ্মা সেতু এককভাবে অর্থনেতিক ক্ষেত্রে তেমন কোনো অবদান রাখতে পারবে না। অন্যদের অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে মাত্র। তাই আমাদের পদ্মা সেতু নির্মাণের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট জেলাসমূহে শিল্পায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

ভুল সংশোধনী

গত ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’ এর অষ্টম পৃষ্ঠায় কোম্পানি প্রোফাইল শিরোনামে প্রকাশিত ‘জেমিনি সি ফুড লিমিটেড’-এর কোম্পানি প্রোফাইলে উক্ত কোম্পানির চেয়ারপার্সন মিসেস আমেনা আহমেদ-এর ছবির পরিবর্তে ভুলক্রমে শমরিতা হসপিটাল লিমিটেড-এর চেয়ারম্যানের ছবি প্রকাশিত হয়েছে। একই ভাবে জেমিনি সি ফুড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক-এর ছবির পরিবর্তে শমরিতা হসপিটাল লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ছবি ছাপা হয়েছে। সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দু:খ প্রকাশ করছি।
Ñ সম্পাদক

Share
নিউজটি ৪৯৮ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged