স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিতের উদ্যোগ

‘শেয়ারহোল্ডিং ইনফরমেশন সিস্টেম’ সফটওয়্যার আনছে ডিএসই

সময়: রবিবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৯ ১০:২১:১৯ পূর্বাহ্ণ


নুরুজ্জামান তানিম/নাজমুল ইসলাম ফারুক:

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে ‘শেয়ারহোল্ডিং ইনফরমেশন সিস্টেম’ নামে একটি স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার চালু করতে যাচ্ছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। সরকারের ইনোভেশন প্রজেক্টের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই ডিএসই স্ব-উদ্যোগে এ সফটওয়্যারটি তৈরি করেছে। এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারধারণ সংক্রান্ত তথ্য যথাসময়ে দ্রুত হালনাগাদ করা সম্ভব হবে। আর এসব তথ্য পেয়ে বিনিয়োগকারীরা সঠিক সময়ে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন বলে মনে করছেন ডিএসই কর্তৃপক্ষ।

তথ্যমতে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিস্টিং রেগুলেশন, ২০১৫ এর ৩৫ বিধিতে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে তাদের উদ্যোক্তা পরিচালক, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বিদেশী বিনিয়োগকারী ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারধারণ সংক্রান্ত তথ্যের প্রতিবেদন প্রতি মাসে স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) জমা দিতে হবে। প্রতি মাসের ৭ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে আগের মাসের শেয়ারধারণ সংক্রান্ত তথ্য ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে হবে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যটি ডিএসই’র ওয়েবসাইটে কোম্পানি প্রোফাইলে হালনাগাদ করা হয়। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর এসব তথ্য আদান-প্রদান এবং পরবর্তীতে তা যাচাই ও হালনাগাদ করতে মাস শেষ হওয়ার পর ১০ থেকে ১৫ দিন বা আরো বেশি সময় লেগে যায়। এতে অনেক সময় এক মাসের তথ্য পরের মাসের শেষ দিকে হালনাগাদ হয়। সঠিক সময়ে বিনিয়োগকারীরা হালনাগাদ তথ্য না পাওয়ায় বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়। একই সঙ্গে ভুল তথ্য দিলে তা প্রকাশ করলে স্বচ্ছতা, সুশাসনের বিঘ্ন ঘটে। আর এসব কারণে ডিএসই ‘শেয়ারহোল্ডিং ইনফরমেশন সিস্টেম’ সফটওয়্যার তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে কোম্পানি নিজেই তার তথ্য হালনাগাদ করবে। তাতে একদিকে যেমন সময় কম লাগবে, অন্যদিকে সময়মতো হালনাগাদ তথ্য পাবেন বিনিয়োগকারীরা।

জানা গেছে, ইতোমধ্যে সফটওয়্যারটির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের পর্যায়ক্রমে সফটওয়্যারটির ব্যবহার সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ডিএসই। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোম্পানির প্রতিনিধিরা সফটওয়্যারটি ঠিক মতো পরিচালনা করতে পারছে কি-না বা পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি-না তা যাচাই করা হচ্ছে। এছাড়া নতুন এ সফটওয়্যারটিতে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষীত হচ্ছে কি-না তাও দেখভাল করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সফটওয়্যারটির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনাকালে দেখা দেয়া কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি সমাধানেরও কাজ চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে সফটওয়্যারটির মক টেস্ট ও গো-লাইভ প্রক্রিয়া শেষ করে এ বছরের মধ্যেই উদ্বোধন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ইনচার্জ) আব্দুল মতিন পাটোয়ারি ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’কে বলেন, “সরকারের ইনোভেশন প্রজেক্টের উদ্দেশ্য বাস্তবানের লক্ষ্যে ডিএসই স্ব-উদ্যোগে ‘শেয়ারহোল্ডিং ইনফরমেশন সিস্টেম’ সফটওয়্যার তৈরি করেছে। বর্তমানে সফটওয়্যারটির পরীক্ষমূলক কার্যক্রম চলছে। আশা করি সফটওয়্যারটি ব্যবহারে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”

ডিএসই’র পরিচালক ও সাবেক সভাপতি মো. রকিবুর রহমান ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’কে বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করে নতুন এ সফটওয়্যার তৈরি করেছে ডিএসই। বর্তমানে সফটওয়্যারটির পরীক্ষমূলক কার্যক্রম চলছে। সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা দ্রুত হালনাগাদ তথ্য পাবেন।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ম্যান্যুয়েল পদ্ধতিতে একটি তথ্য প্রেরণ বা গ্রহণ করার ফলে অনেক সময় তা হারিয়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে। কয়েক বছরের তথ্য একসঙ্গে পেতে করতে অনেক খোঁজাখুঁজি করতে হয়। তাতে সময় ও খরচ বেশি লাগে। কিন্তু সফটওয়্যারের মাধ্যমে কোনো তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সময় কম লাগে, যে কোনো তথ্য খুঁজে বের করতেও সময় ও খরচ কম লাগে। হিস্ট্রিক্যাল কোনো তথ্য অ্যানালাইসিস করতে গেলেও তা সহজে করা সম্ভব হয়। হঠাৎ যে কোনো তথ্য চাইলে তা দ্রুত সময়ে সরবরাহ করা যায়। এসব কারণে সফটওয়্যারটি বেশ উপকারে আসবে।

এ সম্পর্কে ‘ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন’ (ডিবিএ)- এর সভাপতি শাকিল রিজভী ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’কে বলেন, ‘তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারধারণ সংক্রান্ত তথ্য প্রতিমাসে হালনাগাদ করে ডিএসই। পৃথক পৃথক কোম্পানি থেকে তথ্য আদান-প্রদান করতে অনেক সময় বিলম্ব হয়। সফটওয়্যারের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান হলে সময় নষ্ট হবে না। এসব তথ্য হালনাগাদে কোনো ত্রুটি থাকলে স্টক এক্সচেঞ্জের দায় নিতে হবে না। সেক্ষেত্রে দায় নিতে হবে তথ্য হালনাগাদ করা কোম্পানিকে। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে।’

এদিকে ‘বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন’ (বিএমবিএ)-এর মহাসচিব খায়রুল বাসার আবু তাহের মোহাম্মদ ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’কে বলেন, ‘তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারহোল্ডিং পজিশন দেখে অনেক সময় বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। যদি সফটওয়্যারের মাধ্যমে তথ্য দ্রুত হালনাগাদ করা হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত দ্রুত নিতে পারবেন।’

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’কে বলেন, ‘বর্তমানে কোনো কোনো কোম্পানির শেয়ারহোল্ডিংয়ের তথ্য মাসের ১৫ তারিখেও বিনিয়োগকারীরা দেখতে পান না। নতুন এ সফটওয়্যারে যদি দ্রুত শেয়ারহোল্ডিংয়ের তথ্য হালনাগাদ হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো হবে। ডিএসই’র এটি একটি ভালো উদ্যোগ, এর মাধ্যমে স্বচ্ছতা ফিরে আসবে।’

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান/এনটি/

Share
নিউজটি ৪৬৪ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged