সংশোধন হচ্ছে ‘বীমা আইন ২০১০’

সময়: মঙ্গলবার, অক্টোবর ১, ২০১৯ ৯:৩৭:১৯ পূর্বাহ্ণ


অনুপ সর্বজ্ঞ : অবশেষে সংশোধন হচ্ছে ‘বীমা আইন ২০১০’। বীমা কোম্পানির উদ্যোক্তাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি বীমা কোম্পানিগুলোর চেয়ারম্যান ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বিদ্যমান বীমা আইনটি পর্যালোচনার নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর আগে বীমা আইনের ত্রুটিপূর্ণ ধারাগুলো সংশোধনের জন্য একাধিকবার সুপারিশ করে বীমা উদ্যোক্তাদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন’ (বিআইএ) ।

এ প্রসঙ্গে ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ (আইডিআরএ) নির্বাহী পরিচালক (যুগ্ম সচিব) খলিল আহমদ ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘আইন সংশোধনের নির্দেশনা এসেছে অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে। তবে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করেই বীমা আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হবে।’

জানা যায়, আইন সংশোধনের পদক্ষেপ হিসেবে প্রথমেই একটি কমিটি গঠন করবে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইডিআরএ। কমিটি বীমা আইন পর্যালোচনা করে ত্রুটিপূর্ণ ধারাগুলো চিহ্নিত করবে। এরপর সংশোধন জরুরি এমন ধারাগুলো নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে সংশ্লিষ্ট কমিটি। কমিটির প্রস্তাবনা নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

বীমা খাতের একাধিক উদ্যোক্তা জানান, সংশোধন জরুরি বীমার এমন আইনগুলোর মধ্যে অন্যতম বীমাকারীর মূলধন ও শেয়ার ধারণ বিধিমালা ২০১৬।

এই বিধি অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি বা তার পরিবারের সদস্যরা এককভাবে বা যৌথভাবে কোন বীমা কোম্পানির ১০ ভাগের অতিরিক্ত শেয়ার ধারণ করতে পারবেন না। এছাড়াও বিধি চূড়ান্ত হবার তিন বছরের মধ্যে পদ ছেড়ে দিতে হবে ১০ শতাংশের অধিক শেয়ারধারণকারী একই পরিবারের সদস্যদের। ২০১৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশ হওয়া এ বিধিমালাটির বেধে দেয়া তিন বছরের সময়সীমা শেষ হয়েছে গত ২৫ সেপ্টেম্বর। ফলে এ সময়ের মধ্যেই পদ ছেড়ে দেয়ার কথা রয়েছে বীমা খাতের একই পরিবারের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারধারণকারী শতাধিক পরিচালককে।

বীমাকারীর মূলধন ও শেয়ার ধারণ বিধিমালায় বলা হয়েছে, বিধিমালা কার্যকর হবার তিন বছরের মধ্যে অতিরিক্ত শেয়ার পরিচালক এমন কোন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করবেন যিনি তাদের পরিবারের সদস্য নন। অথবা এমন কোন কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করবেন যেখানে তার পরিবারের কোন শেয়ার নেই। বীমা আইন ২০১০ এ পরিবারের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘পরিবার’ অর্থ স্বামী বা স্ত্রী, বাবা, মা, ছেলে, মেয়ে, ভাই ও বোন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল সবাই অন্তর্ভুক্ত হবেন।

বীমার ত্রুটিপূর্ণ আইনগুলোর মধ্যে আরেকটি হলো একই সঙ্গে একাধিক ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হওয়ার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ। বীমা আইনের ৭৫ ধারা অনুযায়ী আপাতত: বলবৎ অন্য কোন আইনে যা-ই থাকুক না কেনো, কোন বীমা কোম্পানির পরিচালক একই শ্রেণির বীমা ব্যবসার জন্য নিবন্ধীকৃত অন্য কোন বীমা কোম্পানি, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না।

বীমা খাতের উদ্যোক্তরা বলছেন, বীমা পরিচালকদের ব্যাংক বা অন্য কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালক হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ব্যাংক আইনে এ ধরনের বিধিনিষেধ নাই। তাই ব্যাংক আইনের সঙ্গে বীমা আইনের ৭৫নং ধারাটি সংঘর্ষিক হওয়ায় এর সংশোধন জরুরি।

এদিকে, স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ নিয়েও ‘বীমা আইন ২০১০’ এবং কর্পোরেট গভর্নেন্স গাইডলাইনে (সিজিজি) বীমা কোম্পানির প্রতি দুই রকমের নির্দেশনা রয়েছে। আর এ নির্দেশনার পরিপালন নিয়ে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ এর সঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দ্বন্দের সৃষ্টি হয়েছে। তাই এ সমস্যা সমাধানের জন্য উভয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্ত হয়েছে।

বীমা আইন, ২০১০-এর ৭৬ ধারার এক উপ-ধারায় বলা হয়েছে বীমাকারী কোম্পানি আইন এর অধীনে নিবন্ধিত হলে, উহার সংঘস্মারক বা সংঘবিধিতে যাই থাকুক না কেন উহার পরিচালকের সংখ্যা ১৫ জনের অধিক হবে না এবং সেইক্ষেত্রে ৬ জন উদ্যোক্তা পরিচালক ও ৬ জন জনগণের অংশের শেয়ারপ্রহীতা পরিচালক এবং ৩ জন স্বাধীন অর্থাৎ নিরপেক্ষ পরিচালক থাকবেন। পরবর্তীতে আইডিআরএ বীমা আইন ২০১০ এর ১৪৮ ধারায় প্রাপ্ত ক্ষমতা বলে বীমাকারীর নিবন্ধন প্রবিধানমালা নামে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। যার এসআরও নং ৩৯-আইন/২০১৩। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী দুজন স্বাধীন, স্বতন্ত্র বা নিরপেক্ষ পরিচালকসহ কোম্পানির পরিচালক ২০ জনে সীমাবদ্ধ থাকবে। এর মধ্যে ১২ জন উদ্যোক্তা-পরিচালক ও চারজন জনগণের অংশের শেয়ারগ্রহীতা পরিচালক এবং দুজন নিরপেক্ষ পরিচালক দিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করতে হবে।
অন্যদিকে ২০১২ সালের ৩০ আগস্ট শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির জারি করা করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইনে বলা হয়, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের নূন্যতম সদস্য হতে হবে পাঁচজন ও সর্বোচ্চ ২০। এছাড়া পরিচালনা পর্ষদে ৫ ভাগের ১ ভাগ স্বাধীন পরিচালক থাকতে হবে। এ নির্দেশনা মোতাবেক তালিকাভুক্ত বীমা কোম্পানিতে প্রতি পাঁচজনে একজন নিরপেক্ষ পরিচালক অর্থাৎ মোট ২০ জনে চারজন নিরপেক্ষ পরিচালক থাকবে।

বিএসইসি বীমা কোম্পানিগুলোর ওপর কর্পোরেট গভর্নেন্স গাইডলাইন অনুযায়ী স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ বিধান পালন নিশ্চিত করতে গেলে আইডিআরএর সাথে দ্বন্দের সূত্রপাত ঘটে।

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) চেয়ারম্যান শেখ কবীর হোসেন বলেন, ‘বীমা আইনের বেশ কিছু ধারা ত্রুটিপূর্ণ। যা সংশোধনের জন্য একাধিকবার বিআইএ-এর পক্ষ থকে আইডিআরএ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অবশেষে তা নীতি-নির্ধারণী মহলের নজরে পড়েছে। আশা করছি নিয়ম অনুযায়ী দ্রুত আইন সংশোধনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে।’
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৪৭৪ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged