সাইফুল শুভ : অভিনব কায়দায় নর্দার্ন জুট থেকে ‘ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’ (আইডিবি) তাদের বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে নর্দার্ন জুটের পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করে এবং পরবর্তীতে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই তাদের শেয়ার বিক্রি করে দেয়। ফলে ঘটনাটি সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কাছে অজানাই থেকে যায়। তবে নর্দার্ন জুটের দাবি বিষয়টি তারা স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়েছে। কিন্তু স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
জানা গেছে, গত বছরের শুরুতে আইডিবি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করে। এর ফলে তারা সাধারণ শেয়ারহোল্ডার হয়ে যায়। পরবর্তীতে সাধারণ শেয়ারহোল্ডার হিসেবে চুপিসারে প্রতিষ্ঠানটি তাদের শেয়ার বিক্রি করে দেয়। এতে নর্দার্ন জুটে বিদেশি বিনিয়োগ শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে। এদিকে বিদেশি বিনিয়োগ চলে যাচ্ছে বা তারা শেয়ার বিক্রি করে দেবে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের এমন কোনো ঘোষণাই দেয়নি নর্দার্ন জুট।
প্রসঙ্গত: আইডিবি’র কাছে নর্দার্ন জুটের ৩০ শতাংশ শেয়ার ছিল। কোম্পানিটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে জানায়, আইডিবি পরিচালনা পর্ষদ থেকে বের হয়ে গেলে পরিচালকদের হাতে মাত্র ১৪.০৬ শতাংশ শেয়ার থাকবে।
এরপর নর্দার্ন জুটের পরিচালকরা এখনও পর্যন্ত আইন অনুযায়ী ৩০ শতাংশ শেয়ার পূরণ করতে পারেনি। গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কোম্পানির পরিচালকদের হাতে ২১ দশমিক ০৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। অবশিষ্ট ৭৮ দশমিক ৯১ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। এছাড়া বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বা বিদেশি কোনো বিনিয়োগ নেই।
জানা গেছে, কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় আইডিবি বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে। তবে নর্দার্ন জুট বলছে, তারা আইডিবির শেয়ার বিক্রির তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়েছে। কিন্তু স্টক এক্সচেঞ্জ ওয়েবসাইটে দেয়নি।
কিন্তু ডিএসই’র একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে জানিয়েছেন, কোম্পানি চিঠি দিলে তা অবশ্যই শেয়ারহোল্ডারদের জানানো হতো।
এ বিষয়ে কোম্পানির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) উজ্জ্বল কান্তি ধর ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘আমরা স্টক এক্সচেঞ্জকে লিখিতভাবে জানিয়েছি আইডিবি পদত্যাগ করছে এবং তারা শেয়ার বিক্রি করে চলে যাবে।’
কিন্তু ডিএসই’র ওয়েবসাইটে দেয়া কোম্পানির পক্ষ থেকে ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বরের মূল্যসংবেদনশীল তথ্যে কোথাও উল্লেখ নেই যে, আইডিবি শেয়ার বিক্রি করে দেবে। শুধু কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগের তথ্য দেয়া আছে। এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোম্পানির পরিচালকদের শেয়ার ৩০ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। যেহেতু আইডিবি পরিচালক থেকে সাধারণ শেয়ারহোল্ডার হয়ে যাচ্ছে তাতে পরিচালকদের শেয়ার কমে যেতে পারে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সাধারণ শেয়ারহোল্ডার হয়েই তারা শেয়ার বিক্রি শুরু করে দেয়।
নর্দার্ন জুটের পরিশোধিত মূলধন মাত্র ২ কোটি ১৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। ২০১৪ সালে ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ শেয়ার, ২০১৫ সালে ২০ শতাংশ নগদ, ২০১৬ সালে ৫ শতাংশ নগদ, ২০১৭ সালে ২০ শতাংশ নগদ ও ২০ শতাংশ শেয়ার লভ্যাংশ দেয়। ২০১৮ সালে কোনো লভ্যাংশই দেয়নি।
১৯৯৪ সালে পাট খাতের এ কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। ৩১ আগস্ট ২০১৯ পর্যন্ত কোম্পানির পরিচালকদের হাতে ২১.০৯ শতাংশ এবং বাকি ৭৮.৯১ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।
সর্বশেষ গতকাল রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) নর্দার্ন জুটের শেয়ারের দর ৪৭ টাকা ৮০ পয়সা কমে ৯৭২ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়। বর্তমানে কোম্পানির শেয়ারের প্রকৃত সম্পদ মূল্য (এনএভি) ৭৫.১৬ টাকা। কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা মাত্র ২১ লাখ ৪২ হাজার।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান