যারা সুইস ব্যাংকে টাকা রাখছেন, এক অর্থে তারা এদেশে পরবাসী! একদিকে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমানো টাকার পরিমাণ বাড়ছে, অন্যদিকে একশ্রেণির মানুষ দেশের ব্যাংকগুলো খালি করে ফেলছেন। এ দুইয়ের মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কিনা, সেটা ভাবার বিষয়। এছাড়া যারা কানাডা, মালয়েশিয়া, দুবাই, আবুধাবি, ভারত, সিঙ্গাপুরে সেকেন্ড হোম বানাচ্ছেন, তারাই বা টাকা কোথায় পাচ্ছেন? যে অর্থ বৈধ পথে অর্জিত হয়নি, সেটি বিদেশে পাচার হয়েছে। এভাবে ধনবানরা প্রথমে টাকা পাঠান, তারপর পরিবারের সদস্যদের পাঠান এবং সবশেষে নিজেকেও পাচার করে দ্বৈত নাগরিকত্ব নেন!
২০১৭ সালে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে বর্তমানে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ ১২০০ কোটি টাকা বেড়েছে। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড-২০১৮’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশিদের অর্থ জমার এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এই ১২০০ কোটি টাকা যদি শুধু বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের হিসাব থেকে হয়, তাহলে বিদেশি পাসপোর্টধারী বাংলাদেশি, যারা নাগরিকত্ব গোপন রেখে টাকা জমা করছেন, তাদের হিসাবটা কত? যারা বাংলাদেশি নাগরিকত্ব গোপন রেখে টাকা জমা করেছেন, তাদের তথ্য এ প্রতিবেদনে নেই। সুইস ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বাংলাদেশিদের মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ ৬১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্র্যাংক, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা।
অতীতে দেখা গেছে, নির্বাচনের বছর দেশ থেকে অর্থ পাচার বেড়েছে। গত বছর দেশে নির্বাচন হওয়ায় টাকা পাচার বেড়েছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পণ্য আমদানির নামে বিদেশে টাকা পাচার করা হয়। এতে খেলাপি ঋণও বাড়তে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত বছর আমদানি ব্যয় ২৫ শতাংশ বেড়েছে। ধারণা করা যায়, এর একটি অংশ পাচার হয়ে সুইজারল্যান্ডে জমা হয়েছে। কোনো অনিয়ম বন্ধ করা না গেলে তা আরও বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। বিনিয়োগ পরিবেশের ঘাটতি এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাই বিদেশে অর্থ নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ার অন্যতম কারণ।
এর আগে মালয়েশিয়া সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বিদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ান সরকারের সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী। কিন্তু এ পর্যন্ত কাউকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ ধরনের কোনো অনুমোদন দেয়া হয়নি। তারপরও বাংলাদেশ মালয়েশিয়ায় কীভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী দেশ হল? এ ছাড়া ব্রিটেন, হংকং, সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন ব্যাংকেও বাংলাদেশিদের টাকা রয়েছে বলে জানা যায়।
আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় সরকার চাইলে অর্থ পাচার ও পাচারকারীদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। সেই কাজটি সরকার কেন করছে না? সারা দুনিয়া থেকে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে অর্থ জমার পরিমাণ যখন কমছে, তখন বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ বাড়ছে। ভারত অর্থ পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে সুইস ব্যাংকে অর্থ জমার পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। আমাদেরও এমন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
মোহাম্মদ আবু নোমান : প্রাবন্ধিক