সালাহ উদ্দিন মাহমুদ : প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও)-এর মাধ্যমে উত্তোলিত ৯১ শতাংশেরও বেশি অর্থ ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ‘আমান কটন অ্যান্ড ফেব্রিক্স লিমিটেড’। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি উত্তোলিত অর্থের মাত্র ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ ব্যবহার করতে পেরেছে। গত ৫ আগস্ট কোম্পানিটির আইপিও অর্থ ব্যবহারের সময়সীমা শেষ হয়েছে। এই অর্থ ব্যবহারের জন্য নতুন করে কোনো সময় আবেদনও করেনি কোম্পানিটি। এতে কোম্পানিটির প্রসপেক্টাসে দেয়া আবেদন প্রক্রিয়া পার্ট-৩ এর ৬ ধারা লঙ্ঘন হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
প্রসপেক্টাসে দেয়া আবেদন প্রক্রিয়ার ওই ধারায় বলা হয়েছে, কোনো বৈধ ভিত্তি ছাড়াই এ অর্থ অন্য কোনো খাতে ব্যবহার করা যাবে না। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই অর্থ ব্যবহারে যদি কোনো বিচ্যুতি থাকে, তাহলে এজিএম-এ শেয়ারহোল্ডারদের থেকে অবশ্যই পূর্ব অনুমোদন নিতে হবে, যা কোম্পানির বোর্ড অনুমোদিত কর্মসূচি হতে হবে। যদি শেয়ারহোল্ডাররা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনুমোদন প্রদান করে তবে তা কমিশনে দাখিল করতে হবে। তবে কোম্পানিটির আইপিও অর্থ ব্যবহারের সময়ে শেষ হলেও এখনও কোনো আবেদন করেনি বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে, ৩১ আগস্ট ২০১৯ পর্যন্ত কোম্পানিটি আইপিও অর্থের মোট ৭ কোটি ৭৫ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫৩ টাকা বা ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ খরচ করেছে। তবে আইপিও খরচ বাদ দিয়ে কোম্পানিটি ৪ কোটি ২৭ লাখ ৪৭ হাজার ৪২৫ টাকা ব্যয় করেছে। এখনো ৯১ দশমিক ২৩ শতাংশ বা ৭২ কোটি ২৪ লাখ ৪১ হাজার ৫৪৭ টাকা খরচ করতে পারেনি।
কোম্পানিটি তার আইপিও বাবদ খরচের বরাদ্দ ছিল সাড়ে ৩ কোটি টাকা। তবে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ১১ হাজার ২৮ টাকা পরিশোধ করেছে। আর যন্ত্রপাতি অধিগ্রহণ এবং স্থাপন বাবদ বরাদ্দ ছিল ৬৬ কোটি ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো অর্থই খরচ করতে পারেনি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এদিকে কোম্পানির ঋণ পরিশোধ করার কথা ছিল ১০ কোটি ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। তবে সেখানেও ব্যর্থ হয়েছে কোম্পানি। নির্ধারিত সময়ে ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা ৪৭ হাজার ৪২৫ টাকা ঋণ পরিশোধ হয়েছে। এখনও ৫ কোটি ৮৮ লাখ ৭৭ হাজার ৫৭৫ টাকা ঋণ পরিশোধ করা বাকি রয়েছে কোম্পানিটির। কোম্পানির আইপিও তহবিল থেকে এখন পর্যন্ত সুদ বাবদ আয় এসেছে ৩ কোটি ৭০ লাখ ৮ হাজার ৬৫ টাকা। এখন আইপিও এবং সুদ মিলে কোম্পানির কাছে মোট ৭৫ কোটি ৯৪ লাখ ৪৯ হাজার ৬১২ টাকা রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কোম্পানি সচিব মো. মনিরুল ইসলাম ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘আমরা কেন টাকাগুলো ব্যবহার করতে পারিনি, এর বিস্তারিত প্রতিবেদন বিএসইসি-কে জমা দিয়েছি। আর সময় বাড়ানোর বিষয়টি আমরা আগামী এজিএমে উপস্থাপন করে বিনিয়োগকারীদের থেকে অনুমোদন করে নেব।’
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আইপিও অর্থ ব্যবহার না করতে পারার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন স্পিনিং মিল শিল্প দুরাবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখন টাকা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আর এ ব্যাপারে সব আইন পরিপালন করা হচ্ছে’ বলে দাবি করেন তিনি।
উল্লেখ্য. ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৬১১তম কমিশন সভায় আমান কটন অ্যান্ড ফেব্রিক্স লিমিটেডকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ৮০ কোটি টাকা উত্তোলনের জন্য অনুমোদন দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। উত্তোলিত অর্থ গ্রহণ করার সময় থেকে ১২ মাসের মধ্যে ব্যবহার করার কথা ছিল।
এদিকে, কোম্পানিটির মোট রিজার্ভ রয়েছে ২৫৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। স্বল্প মেয়াদে ঋণ রয়েছে ৫ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার টাকা। আর দীর্ঘমেয়াদে ঋণ রয়েছে ৯০ কোটি ৩৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটির বর্তমান পিই রেশিও ৭ দশমিক ৬১ পয়েন্ট, ডায়লোটেড ইপিএস অনুয়ায়ী পিই রেশিও ৯ দশমিক ৬১ পয়েন্ট এবং সর্বশেষ অ-নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটির বর্তমান পিই রেশিও ৯ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট।
গত ৩০ জুন ২০১৮ সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ সুপারিশ করে। এসময় শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয় ৩ টাকা ২২ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ৪২ টাকা ৩৩ পয়সায়। আর ৯ মাসে (জুলাই ’১৮-মার্চ ’১৯) কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৯৪ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে আয় ছিল ১ টাকা ৯৭ পয়সা। আর ৩ মাসে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৪৮ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৬২ পয়সা। এ সময়ে কোম্পানির এনএভি হয়েছে ৪৩ টাকা ৪২ পয়সা।
‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটি ২০১৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানির মোট শেয়ারের ৭২ দশমিক ২০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ শেয়ার, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে দশমিক ০৩ শতাংশ এবং ১৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান