নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে এখন চমৎকার বিনিয়োগের পরিবেশ বিরাজ করছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে। আর্জেন্টিনার বিনিয়োগকারীগণ এসব সুযোগ গ্রহণ করতে পাবেন। আর আর্জেন্টিনা বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের আমদানি শুল্ক সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনলে বা এফটিএ স্বাক্ষর করে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা প্রদান করলে রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। আর্জেন্টিনা সফররত বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি আর্জেন্টিনার উৎপাদন ও শ্রমমন্ত্রী ডান্টে সিকার সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমস্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আর্জেন্টিনা বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র। বাংলাদেশ আর্জেন্টিনার সাথে বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সহগোগিতা বৃদ্ধি করতে আগ্রহী। বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। বংলাদেশ উন্নত বিশ্বে সুনামের সঙ্গে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে আসছে। আর্জেন্টিনার বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু উচ্চ আমদানি শুল্ক হারের কারণে বাংলাদেশ আর্জেন্টিায় প্রত্যাশা মোতাবেক তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পাচ্ছে না। বাংলাদেশ গত অর্থবছরে আর্জেন্টিনা থেকে ৬২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে, একই সময়ে মাত্র ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। ফলে দু’দেশের বাণিজ্য ব্যবধান বৃদ্ধি পাচ্ছে।
টিপু মুনশি আরো বলেন, বাংলাদেশ উন্নত ও বিশ্বমানের তৈরি পোশাক স্বল্পমূল্যে বিশ্ব বাজারে রপ্তানি করছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আর্জেন্টিনায় রপ্তানি করতে আমদানির উপর আরোপিত উচ্চ শুল্ক হ্রাস করা একান্ত প্রয়োজন।
এদিকে আর্জেন্টিনার উৎপাদন ও শ্রমমন্ত্রী ডান্টে সিকার বলেন, আগামী মাসে তৈরি পোশাকের উপর শুল্ক হ্রাস বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষের সাথে সভা করা হবে। এ সময় উভয় দেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও পারস্পারিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার খাত চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্যিক জোট মার্কোসারে (ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ের সমন্বয়ে গঠিত) বাংলাদেশের পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি, বাংলাদেশে বিনিয়োগ আকর্ষণ ও ওই জোটের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) স্বাক্ষরের আলোচনাকে বেগবান করার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, এমপি’র নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল আর্জেন্টিনা সফরে রয়েছে। ওই প্রতিনিধি দলে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
এরপর বাণিজ্যমন্ত্রী আর্জেন্টিনার কৃষি, প্রাণি ও মৎস্যপালন বিষয়ক মন্ত্রী লুইস এৎসেভেহারের সঙ্গেও বৈঠক করেন। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে তার বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করে দু’দেশের বাণিজ্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধির আশাবাদ ব্যক্ত করে। বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর এ সফরের মাধ্যমে দু’ দেশের সম্পর্ক দৃঢ়তর হবে। বাংলাদেশ আর্জেন্টিনা থেকে বিপুল পরিমাণ কৃষি পণ্য যেমন- ভোজ্যতেল, শস্য, তৈল বীজ প্রভৃতি আমদানি করে। বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি পণ্য আমদানির জন্য আর্জেন্টিনার মন্ত্রীকে অনুরোধ জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তাছাড়া আর্জেন্টিনা কৃষি, পশুপালন, মৎস্যপালন, ক্রীড়া প্রভৃতি খাতে কারিগরি সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের জন্যও আগ্রহ প্রকাশ করে।
অন্যদিকে আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোরাসিও রেইসারের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশ ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে মার্কোসারের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য প্রস্তাব দেয়। এফটিএ স্বাক্ষর উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক হবে। আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রস্তাবিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়টি মার্কোসারের আগামী শীর্ষ সম্মেলনে আলোচনার বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করেন। এছাড়া শীঘ্রই ঢাকায় কৃষি, মৎস্য ও পশুসম্পদ বিষয়ে আর্জেন্টিনা একটি আঞ্চলিক সেমিনার আয়োজন করার বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী আর্জেন্টিনার চেম্বার ফর ট্রেড অ্যান্ড সার্ভিসের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী আর্জেন্টিনার সঙ্গে বাংলাদেশের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস করার জন্য বাংলাদেশ থেকে অধিক পরিমাণে তৈরি পোশাক, ওষুধ, পাট, জুতা, প্লাস্টিক সামগ্রী আমদানির জন্য উক্ত চেম্বারের সহযোগিতা কামনা করেন। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ১০০টি অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করছে, এখানে বিনিয়োগ করার জন্য তিনি চেম্বারের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান। চেম্বারের নেতৃবৃন্দ উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার জন্য মত প্রকাশ করেন। বাণিজ্যমন্ত্রী উভয় দেশের শীর্ষস্থানীয় চেম্বারের মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব করেন। এতে আর্জেন্টিনা চেম্বারের নেতৃবৃন্দ সম্মত হন।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান