ইউনিয়ন ব্যাংকে ৮ কোটির জালিয়াতি, গ্রাহকদের অর্থ ফেরত না পাওয়ায় চরম হতাশা

সময়: সোমবার, জুন ২৩, ২০২৫ ১:৩৯:০৬ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রায়ত্ত ও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেডের হাটখোলা শাখায় ভয়াবহ আর্থিক জালিয়াতির ঘটনা উন্মোচিত হয়েছে। ব্যাংকটির সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন গ্রাহকদের হিসাব থেকে অনুমতি ছাড়া টাকা তুলে নিয়ে প্রায় ৮ কোটি ৬ লাখ টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন বলে অভ্যন্তরীণ তদন্তে উঠে এসেছে।

তদন্তে বলা হয়েছে, তিনি বছরের পর বছর ধরে গ্রাহকের সঞ্চয় ও মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রসিদের (MTDR) বিপরীতে গ্রাহকের সম্মতি ছাড়া ভুয়া ঋণ তৈরি করেছেন, অ্যাকাউন্ট নকল করে তহবিল স্থানান্তর করেছেন এবং একাধিক হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন ঘুরিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

জালিয়াতির বিষয়টি সামনে আসে চলতি বছরের জানুয়ারিতে, যখন একজন গ্রাহক নিজের MTDR থেকে টাকা তুলতে গিয়ে দেখতে পান, তার নামে অজান্তেই ঋণ দেখানো হয়েছে। বিষয়টি প্রকাশ পেলে ব্যাংক তৎক্ষণাৎ অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করে এবং জাকির হোসেনের অনিয়মের প্রমাণ পায়। পরবর্তীতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

জালিয়াতির প্রমাণ মিললেও এখনো ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেয়নি ইউনিয়ন ব্যাংক। অন্তত ২০ জন গ্রাহক মাসের পর মাস ধরে হাটখোলা শাখা ও প্রধান কার্যালয়ের দুয়ারে ঘুরলেও কোনো ফল পাচ্ছেন না। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কেবল আশ্বাস দিয়ে বলছে, অভিযুক্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে অর্থ আদায় করে ফেরত দেওয়া হবে, কিন্তু এখনও কোনো সুনির্দিষ্ট ফেরত পরিকল্পনা বা সময়সূচি ঘোষণা করা হয়নি।

ভুক্তভোগী গ্রাহক মিজানুর রহমান জানান, তিনি সাভারে জুতা তৈরির ব্যবসা পরিচালনা করেন এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের হাটখোলা শাখায় MTDR-এর মাধ্যমে ৬০ লাখ টাকা জমা রেখেছিলেন। প্রথম MTDR ঋণমুক্ত হলেও দ্বিতীয় MTDR-এর বিপরীতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভুয়া ঋণের দাবি করে টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

তিনি বলেন, “ব্যবস্থাপক আমাকে MTDR এর আসল কপি জমা দিতে বলেন। এরপর জানতে পারি, সেই কাগজ ব্যবহার করে আমার নামে ৬০ লাখ টাকার ভুয়া ঋণ দেখানো হয়েছে। অথচ আমি কোনো ঋণই নেইনি।”

তিনি আরও বলেন, “আমার কারখানায় অর্ডার আছে, কিন্তু মূলধনের অভাবে সময়মতো সরবরাহ দিতে পারছি না। আমি বারবার চেষ্টা করেও আমার টাকা ফেরত পাইনি।”

তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, জাকির হোসেন ২০১৬ সাল থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে দুই মেয়াদে ওই শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন এবং উভয় মেয়াদেই তিনি অবৈধ আর্থিক কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। ভুয়া বিনিয়োগ, ব্লকড MTDR নকল করে তহবিল উত্তোলন, গ্রাহকের সঞ্চয়ী হিসাব থেকে টাকা সরিয়ে অন্য হিসাব ঘুরিয়ে ঋণ সমন্বয়—এমন একাধিক জালিয়াতি করেছেন তিনি।

ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত তদন্তে দেখা যায়, হাটখোলা শাখার গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে ৮ কোটি ৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকার বেশি আত্মসাৎ করা হয়েছে।

ব্যাংকিং খাতে আস্থার সঙ্কটরাজনৈতিক পরিবর্তনের পর অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠানের মতো ইউনিয়ন ব্যাংকও মূলধন সংকটে পড়েছে। ব্যাংকটি এখন বড় অঙ্কের আমানত পরিশোধেও ব্যর্থ হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি জানিয়েছেন, ইউনিয়ন ব্যাংকসহ পাঁচটি ইসলামিক ব্যাংককে একীভূত করে একটি একক সত্তা গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যা ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়ক হতে পারে।

Share
নিউজটি ৫৪ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged