বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারনা ক্রমশ পরিবর্তিত হচ্ছে। এক সময় মনে করা হতো কৃষির উপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপের মাধ্যমেই একটি দেশ কাঙ্খিত মাত্রায় উন্নয়ন অর্জন করতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য শস্য উৎপাদন না করতে পারলে একটি দেশ কখনোই অর্থনৈতিক উন্নতি অর্জন করতে পারে না। কিন্তু কালের বিবর্তনে এটা প্রতীয়মান হয়েছে যে, কৃষি নয় একমাত্র শিল্পের উপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপের মাধ্যমেই একটি দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন করতে পারে। কিন্তু অষ্টাদশ শতাব্দিতে ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব সাধিত হবার পর এই ধারনা রাতারাতি প্রতিষ্ঠিত হয় যে,কৃষি নয় একমাত্র শিল্পের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপের মাধ্যমে একটি দেশ তার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য এবং অন্যান্য চাহিদা পূরণ করতে পারে। আর একটি দেশ যদি শিল্পে উন্নতি অর্জন করতে পারে তাহলে তার পক্ষে খাদ্য এবং জীবন ধারনের মতো অন্যান্য উপকরণ আমদানির মাধ্যমেও পূরণ করা সম্ভব। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় জ্যামিতিক হারে, শিল্প উৎপাদনও জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পায়। কিšুÍ খাদ্য উৎপাদন বাড়ে গাণিতিক হারে। কাজেই জনসংখ্যা বৃদ্ধি চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করতে হলে খাদ্য নয় শিল্প উৎপাদনের উপরই বেশি জোর দিতে হবে। শিল্প উৎপাদন বাড়াতে হলে শুধু দক্ষ শ্রমিক গড়ে তুললেই হবে না। দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তা সৃষ্টি করাটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত ২৪ জানুযারি রাজধানীর ধানমন্ডির একটি কনভেনশন সেন্টারে চায়না-বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ফিউচার এন্ট্রারপ্রেনিউর সামিট-২০২০ এ বলা হয়, আজকের উদ্যোক্তারাই আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ার কারিগর। তাই তাদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। একজন উদ্যোক্তা তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বিষয় উল্লেখ করে বলেন, উদ্যোক্তা হতে হলে নিজের ইচ্ছাশক্তি,সততা আর পরিশ্রম দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখলে ভয় পেলে চলবে না। পোশাক মিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক বলেন,উদ্যোক্তা হতে গেলে পিছিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জীবনে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। উদ্যোক্তা হতে গেলে ব্যাংক ঋণ দেবে না,কারো কাছ থেকে সুযোগটা পাচ্ছেন না,সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়- এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকবেই। তাই বলে পিছিয়ে গেলে চলবে না। আমাদের দ্রুত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। দেশে বর্তমানে বেকার সমস্যা প্রকট। কিন্তু সাধারণভাবে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রদানের মাধ্যমে বেকারত্ব নিরসন করা সম্ভব নয়। এ জন্য আমাদের এমন একটি অবস্থা সৃষ্টি করতে হবে যেখানে যুুবকরা চাকরির পেছনে না ঘুরে অন্যদের চাকরি দেবার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকবে। অর্থাৎ চাকরির মাধ্যমে বেকার সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। বরং তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। একমাত্র উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে পারলেই যুব সমাজের বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছেন যুবকদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। কিন্তু আমাদের মধ্যে এখনো চাকরি করার মানষিকতা দূর হয় নি। আমাদের চাকরি প্রত্যাশী যুব সমাজ নয় উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী যুব সমাজ তৈরি করতে হবে, যারা শিক্ষা জীবন শেষে চাকরির জন্য না ঘুরে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলবে। এ জন্য রাষ্ট্রীয় ভাবে সুনির্দিষ্ট এবং কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
উদ্যোক্তা উন্নয়ন ব্যতীত টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়
সময়: রবিবার, জানুয়ারি ২৬, ২০২০ ১২:০৩:৩৪ পূর্বাহ্ণ