‘জিডিপি-শেয়ারবাজার মূলধন অনুপাতে পিছিয়ে বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ গত কালের দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’ এ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদটি নিয়ে গভীরভাবে ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে। কারণ আমাদের দেশের শিল্পায়ন তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুঁজি সবরাহের ক্ষেত্রে শেয়ারবাজার যে যথাযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারছে না। প্রকারান্তরে সেই কথাটিই সংবাদে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শেয়ারবাজার কাঙ্খিত মাত্রায় অবদান রাখতে পারছে না। দেশের জিডিপি’তে শেয়ারবাজারের অবদান মাত্র ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। উন্নত দেশগুলোতে জিডিপি’তে পুঁজিবাজারের অবদান অনেক বেশি। সেই সব দেশের তুলনায় বাংলাদেশের জিডিপি’তে শেয়ারবাজারে অবদান অতি সামান্য, এমনি কি দক্ষিণ এশীয়ান দেশগুলোর তুলনায় এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে তলানিতে। এই অবস্থা থেকে দ্রুত উত্তরণ ঘটানো না গেলে আগামীতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। দক্ষিণ এশীয় অন্যতম অর্থনীতি থাইল্যান্ডে জিডিপি-বাজার মূলধন অনুপাত হচ্ছে ১০৬দশমিক ৫৩ শতাংশ। ভারতে এটা ৭৩দশমিক ৪৭ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১৭দশমিক ৬৬ শতাংশ, ফিলিপাইনে ৭৬ দশমিক ৬০ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ১০৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ,জাপানে ১১৭ দশমিক ৫২ শতাংশ,সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জে ৩৩ দশমিক ১০ শতাংশ। অর্থাৎ দক্ষিণ এশীয় যে সব দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে তাদের সবারই জিডিপি-শেয়ারবাজার মূলধন অনুপাত আমাদের তুলনায় বেশি। বাংলাদেশ শিল্প খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এসব দেশ থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। উদ্যোক্তারা ব্যাংকের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। কিন্তু তারা চাইলেই ব্যাংক প্রয়োজনীয় পুঁজির যোগান নিশ্চিত করতে পারছে না। এদিকে সরকারি উদ্যোগে যে সব বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে তারাও ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভর করছে কিন্তু শেয়ারবাজারে আসছে না। এগুলো শেয়ারবাজারে নিয়ে আসা হলে বাজারে ভালো শেয়ারের যোগান বৃদ্ধি পেতো। সাধালন বিনিয়োগকারিরা এসব প্রকল্পের শেয়ারে বিনিয়োগ করে লাভবান হতে পারতেন।
খেলাপি ঋণের সমস্যা এবং অন্যান্য সীমাবদ্ধতার কারণে ব্যাংকগুলো প্রায়শই জটিলতার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। তারা তারল্য সঙ্কটে পতিত হচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে ব্যাংক শিল্প খাতে দীর্ঘ মেয়াদি ঋণদানের জন্য উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান নয়। সাধারণ মানুষ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের সঞ্চিত অর্থ ব্যাংকে আমানত হিসেবে সংরক্ষণ করে। কাজেই চাইলেই ব্যাংকগুলো সব সময় চাহিদা মতো উদ্যোক্তাদের দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ সরবরাহ করতে পারে না। উন্নত দেশগুলোতে উদ্যোক্তাগণ তাদের প্রয়োজনীয় পুঁজি শেয়ারবাজার থেকেই সংগ্রহ করে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে শেয়ার বাজারের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ব,ব্যক্তি মালিকানাধীন স্থানীয় বড় বড় প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠান, যারা বাংলাদেশে ব্যবসায় করছে তাদের শেয়ার দ্রুত বাজারে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। এটা করা গেলে বাজারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারিদের আস্থা ফিরে আসবে। তারা আবারো বাজারমুখি হবে। আমরা যদি দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চাই তাহলে ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার বাজারে নিয়ে আসা ব্যতীত কোনো গত্যন্তর নেই। আগামীতে বিশ্ব অর্থনীতি আরো চ্যালেঞ্জিং হতে যাচ্ছে। সেই অবস্থায় টিকে থাকতে হলে প্রতিটি দেশকেই তাদের অবস্থান দৃঢ় করতে হবে। বিশেষ করে আমাদের মতো দেশগুলোকে আরো বেশি মাত্রায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। সেই অবস্থায় টিকে থাকতে হলে জিডিপি-শেয়ারবাজার অনুপাত বাড়াতে হবেই।
উন্নয়নের স্বার্থে জিডিপি-বাজার মূলধন অনুপাত বাড়াতে হবে
সময়: বুধবার, জানুয়ারি ৮, ২০২০ ৫:২৯:১৮ অপরাহ্ণ