নিজস্ব প্রতিবেদক : আরো দুটি মেট্রোরেলের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-১) ও (লাইন-৫) । লাইন-১ এর মাধ্যমে রুট ধরা হয়েছে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর স্টেশন এবং নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত। আর লাইন-৫ এর মাধ্যমে রুট ধরা হয়েছে, হেমায়েতপুর-আমিনবাজার-গাবতলি-মিরপুর ১-মিরপুর-১০-কচুক্ষেত-বনানী-গুলশান ২-নতুন বাজার হয়ে ভাটারা পর্যন্ত।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এবং ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গীস।
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘প্রকল্পগুলোকে সড়কের সবচেয়ে বেশি ব্যয়ের প্রকল্প বলা যায়। তবে নির্মাণ শেষ হলে ঢাকা হবে বিশ্বমানের শহর। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়ে মন্ত্রী জানান, মেট্রোরেলের জন্য হাতিরঝিল যেন নষ্ট না হয়। এছাড়া, মেট্রোরেলের কারণে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হলেও কোনো ব্যাঘাত ঘটানো যাবে না।’
মেট্রোরেলের বাস্তবায়নকারী সংস্থার এমডি এমএন সিদ্দিকী বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ের আগে এবং যতটা সম্ভব অর্থ সাশ্রয় করে প্রকল্প দুটি সমাপ্ত করা হবে। এই মেট্রোরেল হবে ব্যয় সাশ্রয়ী, আরামদায়ক। ইলেকট্রনিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে ফলে নির্দিষ্ট সময় এমনকি সেকেন্ডের হিসাবও ঠিক থাকবে।’
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (লাইন-৫) আওতায় নর্দার্ন রুটটি হবে হেমায়েতপুর-আমিনবাজার-গাবতলি-মিরপুর ১-মিরপুর ১০-কচুক্ষেত-বনানী-গুলশান ২-নতুন বাজার-ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার। এটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১২ হাজার ১২১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা) থেকে ২৯ হাজার ১১৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। চলতি বছর থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
এছাড়া ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-১) প্রকল্পটির মাধ্যমে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর স্টেশন এবং নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণ হবে। এটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১৩ হাজার ১১১ কোটি টাকা এবং জাপান আন্তর্জাতিক সংস্থা (জাইকা) থেকে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা খরচ করা হবে। চলতি বছর থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
অন্যদিকে, বর্তমানে ঢাকার উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলমান এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হচ্ছে ২১ হাজার কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বলেও জানানো হয় একনেক বৈঠকে।
গতকাল মঙ্গলবার মেট্রোরেলের এই দুটি প্রকল্প ছাড়া আরও ৮টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩০ হাজার ৪৬৬ কোটি, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৫১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৬৯ হাজার ৪৩ কোটি টাকা খরচ করা হবে।
অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হচ্ছেÑ ফেনী-নোয়াখালী জাতীয় মহাসড়কের বেগমগঞ্জ থেকে সোনাপুর পর্যন্ত ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৮৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ডোমার-চিলাহাটি-ভাউলাগঞ্জ-জলঢাকা এবং জলঢাকা-ভাদুরদরগাহ-ডিমলা জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪২১ কোটি টাকা। কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামড়াঘাট জেলা মহাসড়ক যথাযথমানে উন্নীতকরণসহ ছয়না-চৌদ্দশত বাজার সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭৩১ কোটি ৩১ লাখ টাকা । ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। ঢাকাস্থ মিরপুর পাইকপাড়ায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ঢাকার আজিমপুরে বিচারকদের জন্য বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১২৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ইরিগেশন ম্যানেজমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট ফর মুহুরী ইরিগেশন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৫৮০ কোটি টাকা। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব নিরসনে সিলেট বন বিভাগ পুনঃবনায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭০ কোটি টাকা।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান