‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’ এর গতকালের সংখ্যায় প্রকাশিত একটি সংবাদ সংশ্লিষ্ট মহলে আশার সঞ্চার করেছে। ‘বাংলাদেশিদের জন্য কাতারের শ্রমবাজার খুলছে’ শিরোনামীয় সংবাদে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদের উদ্বৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, অচিরেই বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য কাতারের শ্রম বাজার খুলে দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি দোহায় অনুষ্ঠিত উভয় দেশের কারিগরি কমিটির এক যৌথ সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। গত প্রায় ৯ মাস ধরে কাতারে বাংলাদেশি শ্রমিক রপ্তানি বন্ধ ছিল। ২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা। এ উপলক্ষে দেশটিতে এখন ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধুনিকায়ন ও নতুন স্থপনা নির্মাণ কাজ চলছে। কিন্তু বাংলাদেশি শ্রমিক রপ্তানি বন্ধ থাকার কারণে বাংলাদেশিরা সেই বিশাল কর্মযজ্ঞে অংশ গ্রহণ করতে পারছে না। উল্লেখ্য,বাংলাদেশ মধ্যপ্রচ্যের যে সব দেশে বিপুল সংখ্যক শমিক রপ্তানিকরে তার মধ্যে কাতার অন্যতম। কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক রাষ্ট্রীয় সম্পর্কও বেশ নিবিড়। কিন্তু তারপরও দেশটি বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানি ববন্ধ করে দিয়েছিল। কাতারের এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছিল। মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ দেশে বর্তমানে অর্থনৈতিক মন্দা বিরাজ করছে। জ্বালানি তেল,যা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর বৈদিশেক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস আন্তর্জাতিক বাজারে তার মূল্য হ্রাস পাবার কারণে বেশির ভাগ আরবীয় দেশ তাদের অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে অথবা স্থগিত রেখেছে। এ ছাড়া দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ভোগ চাহিদাও কমে গেছে। ফলে তারা বিদেশ থেকে জনশক্তি আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। এই অবস্থায় কাতারে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব কাপ ফুটবল আসরকে কেন্দ্র করে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে বেশ জোরে সোরেই। কিন্তু দেশটি বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানি বন্ধ করে দেয়ার কারণে বাংলাদেশি শ্রমিকরা সেই উন্নয়ন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছিল না। সরকার নানাভাবে চেষ্টা করেও এ ব্যাপারে কোনো সুরাহা করতে পারছিলেন না। অবশেষে কাতার তাদের আগের সিদ্ধান্ত বাতিল করে বাংলাদেশ থেকে নতুন করে শ্রমিক আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাতারের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি,বিশেষ করে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচক এখন মন্থর গতিতে প্রবাহমান থাকলেও একমাত্র জনশক্তি রপ্তানি খাতটি এখনো ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ রেকর্ড পরিমাণ ১ হাজার ৬৪২ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে জনশক্তি রপ্তানি খাত থেকে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ১ হাজার ০৪ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি রেমিটেন্স এসেছে। অর্থবছরের অবশিষ্ট সময়ে আরো বেশি হারে রেমিটেন্স আসার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ পবিত্র ঈদ উল ফিতর এবং ঈদ উল আযহা উপলক্ষে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বেশি হারে রেমিটেন্স প্র্রেরণ করে। এ বছর থেকে প্রবাসী আয়ের উপর ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দেবার কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রেরণের ব্যাপারে উৎসাহি হয়েছেন। এই অবস্থায় বাংলাদেশের অন্যতম জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্র কাতার তার বাজার বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানির জন্য উন্মুুক্ত করায় বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রবাহ নিশ্চিতভাবেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে। শুধু কাতারই নয় অন্যান্য যে সব দেশে জনশক্তি রপ্তানির ব্যাপারে সমস্যা রয়েছে তা নিরসন করার উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানির নতুন নতুন গন্তব্য অনুসন্ধান করতে হবে।
কাতারের শ্রমবাজার খুলে দেয়া হচ্ছে
সময়: সোমবার, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০ ১২:৫০:১৮ পূর্বাহ্ণ