নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সংসদে অর্থ বিলের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে সরকার খরচ শুরু করেছে। তাই রাজস্ব শতভাগ আদায় করতে হবে।
গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে রাজস্ব পরিস্থিতি পর্যালোচনা বৈঠকে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠকে মাঠপর্যায়ের শুল্ক, মূল্যসংযোজন কর (মূসক) ও আয়কর কমিশনার ও বিভিন্ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন। এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বছর কোনো প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠীকে কর ছাড় দেয়া হবে না। জ্বালানি খাত থেকে শুরু করে সব খাতে রাজস্ব বাজেটে উল্লেখিত হারে কর দিতে হবে। এজন্য এনবিআর-কে কোনো এসআরও জারি করতে নিষেধ করেছেন মন্ত্রী। যদি বিশেষ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়- তবে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিয়ে করতে হবে। এর বাইরে কোনো ছাড় নয়। বাজেটের প্রতিটি দাঁড়ি-কমা পালন করতে হবে। এটি অর্থবিলের মাধ্যমে আইন হিসেবে সংসদে পাস হয়েছে। যদি কোনো পরিবর্তন করতে হয়, সেটি আগামী বাজেট অধিবেশনে করতে হবে।
মুস্তফা কামাল বলেন, সরকারের রাজস্ব আয়ের প্রধান মাধ্যম এনবিআর। সরকার অর্থবছরের প্রথম দিন থেকেই বাস্তবায়ন শুরু করেছে। সরকার বাজেটের আয় অনুযায়ী খরচ করছে। এ বছর কোনো ঘাটতি মেনে নেয়া হবে না। গত অর্থবছরে ৫৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি ছিল। এটা সহজ কোনো বিষয় নয়। এনবিআর-কে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পাশাপাশি গত অর্থবছরের ঘাটতিও সমন্বয়ের চেষ্টা করতে হবে। আর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে কত আদায় হয়েছে, এটি বলতে হবে। শতাংশ হিসেব দিয়ে বললে হবে না। শতাংশের হিসাব জনগণ বুঝে না।
আয়কর আদায় প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে ৪ কোটি লোকের আয়কর দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে। অথচ মাত্র ৪৪ লাখ লোকের কর সনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) আছে। সবার কাছে পৌঁছাতে হবে। প্রয়োজনে এক লাখ লোক নিয়োগ দেয়া হবে। তবুও সবাইকে করের আওতায় আনতে হবে। যারা আয়কর দেয়ার যোগ্যতা রাখে- তারা আয়কর না দিলে ব্যবস্থা নিতে হবে। সবাইকে প্রথমে ভালভাবে বলতে হবে। না দিলে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজেট আইন অনুযায়ী অর্থবিল পাশ হয়েছে। কেউ যদি সরকারের বাজেট বাস্তবায়নে সহযোগিতা না করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথমে ভালবাসা দিবেন, না দিলে কঠোর হতে হবে।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা যথাযথ কর দেন না। ধনীরা বিদেশ গিয়ে যে টাকা শপিং করে খরচ করেন, তার ১০ শতাংশ কর দিলেও সরকার উপকৃত হয়।
অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এনবিআর সংশ্লিষ্ট সবাইকে সুচারুভাবে কাজ করতে হবে। কোনো ধরণের অলসতা করা যাবে না। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায় অবশ্যই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হবে। এনবিআর মাঠপর্যায়ে জরিপ পরিচালনা করছে। সেখান থেকে অনেক করদাতা বের হচ্ছে। তাদেরকে বলা হয়েছে, আপনারা আয়কর দেন, অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অনুষ্ঠানে এনবিআরের সদস্য কালিপদ হালদার বলেন, আগামী তিন বছরে এক কোটি করদাতা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে এনবিআর। জরিপ পরিচালনা করে ১২ লাখ টিআইএন করা হয়েছে। জরিপ কাজ অব্যাহত রয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন কর অঞ্চলের কমিশনার, শুল্ক ও মূসক কমিশনার ও বিভিন্ন কর্মকর্তারা উম্মুক্ত আলোচনা করেন। রাজস্ব আদায়ের সমস্যা এবং সম্ভাবনা বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের এনবিআরের মাধ্যমে সরকার ৩ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এরমধ্যে জুলাই মাসে ১০.৬৭ শতাংশ ও আগস্ট মাসে ৩.৫৩ শতাংশ রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে প্রথম দুই মাসে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান
চলতি অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি মানা হবে না : অর্থমন্ত্রী
সময়: সোমবার, অক্টোবর ১৪, ২০১৯ ৯:৪৬:৫১ পূর্বাহ্ণ