সালাহ উদ্দিন মাহমুদ : পুঁজিবাজারে ছোট মূলধনী কোম্পানির লেনদেনের জন্য আলাদা বোর্ডের যাত্রা শুরু হয় চলতি বছরের এপ্রিল মাসে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল আনুষ্ঠানিকভাবে এ বোর্ড উদ্বোধন করেন। তবে উদ্বোধনের চার মাস পেরিয়ে গেলেও কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি এখনও। এমতাবস্থায়, কেন এই দেরি Ñএর কারণ জানতে চেয়ে হালনাগাদ তথ্য চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
এদিকে ডিএসই সূত্রে জানা যায়, ডিএসই ট্রেডিং প্লাটফর্মের কাজ সম্পন্ন করেছে। এছাড়া অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমস, ক্লিয়ারিং অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস, ম্যাচিং ইঞ্জিন এবং ওয়েবসাইট ডিজাইনও সম্পন্ন করেছে। তবে এই বোর্ডে তালিকাভুক্তির জন্য কোনো কোম্পানি এখনও আবেদন করেনি। কোম্পানি আনার জন্য ইস্যু ম্যানেজারদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনাও করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই। কোম্পানি তালিকাভুক্ত না হলে বোর্ড চালু করা যাচ্ছে না। তবে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
‘কেন কোম্পানি আসছে না’Ñ জানতে চাইলে ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মতিন পাটোয়ারী ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘স্মলক্যাপ বোর্ডে তালিকাভুক্তির জন্য যেসব কোম্পানি রয়েছে, তাদের হিসাব বছর শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। কোম্পানিগুলোকে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন জমা প্রদানের মাধ্যমে তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করতে হবে। তাই আগামী অক্টোবরের আগে কোনো কোম্পানি এ বোর্ডে তালিকাভুক্তির আবেদন করতে পারছে না।’
তিনি আরো বলেন, ডিএসই’র কাছে আবেদন করার পর কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন যাচাই-বাচাই করতে পারবো আমরা। আমরা চাই স্বল্প মূলধনী বোর্ডটি ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি দ্বারা শুরু হোক। তার জন্য ডিএসই সব ধরনের কার্যক্রম সম্পন্ন করবে।
এদিকে মার্চেন্ট ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো স্বল্পমূলধনী বোর্ডে কোম্পানি আনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। কারণ একটি ছোট কোম্পানি বাজারে আনতে গেলে বড় কোম্পানির মতোই পরিশ্রম, সময়, কমপ্ল্যায়েন্স পরিপালন করতে হবে। তবে আইপিও-তে একটি কোম্পানির ইস্যু ম্যানেজ করলে যে ফি ইস্যু ম্যানেজাররা পাবে; স্বল্পমূলধনী কোম্পানি আনলে সেই পরিমাণ ফি পাওয়া যাবে না। ছোট কোম্পানি আনতে ইস্যু ব্যবস্থাপকদের আগ্রহ কম থাকছে।
বিষয়টি নিয়ে বিএসইসি’র মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক এম সাইফুর রহমান ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’কে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে স্মলক্যাপ বোর্ডের প্রয়োজনীয় সব আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এখন সব কিছু ঠিক রেখে মার্কেটটি চালু করার দায়িত্ব স্টক এক্সচেঞ্জের। তারা এটি নিয়ে কাজ করছে।’
তিনি জানান, এখনও ডিএসইর স্মলক্যাপ বোর্ডে তালিকাভুক্তির জন্য কোনো কোম্পানি আবেদন করেনি। বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কাছে।
স্মলক্যাপ বোর্ডে যেসব কোম্পানি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আসবে, সেসব কোম্পানির বিডিং হবে ডাচ অকশন পদ্ধতিতে। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আসা কোম্পানিগুলোর বর্তমান পরিশোধিত মূলধন এবং কোয়ালিফাইড ইনভেস্টরস অফার (কিউআইও) মিলে ন্যূনতম ১০ কোটি টাকা হবে।
আর স্থির মূল্য পদ্ধতিতে আসা কোম্পানিগুলোর বর্তমান পরিশোধিত মূলধন এবং কিউআইও মিলে ন্যূনতম ৫ কোটি টাকা হবে। ৩০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি এই বাজারে থাকতে পারবে না। এই পরিমাণ মূলধনের কোম্পানিকে মূল মার্কেটে তালিকাভুক্ত হতে হবে।
স্মল ক্যাপ কোম্পানির কিউআইও’তে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আবেদন করতে পারবে না। কেবল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আবেদন করতে পারবে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বলতে ওই প্রতিষ্ঠান বা উচ্চ সম্পদধারী ব্যক্তি; যাদের পোর্টফোলিওতে নেট অ্যাসেট ১ কোটি টাকা। এ বাজারে তালিকাভুক্ত হতে আসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হতে হবে।
এর আগে গত বছরের ২০ নভেম্বর কিছু পরিবর্তন ও পরিমার্জন সংশোধনসহ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (কোয়ালিফায়েড ইনভেস্টর অফার বাই স্মল ক্যাপিটাল কোম্পানিজ) রুলস ২০১৮-এর চূড়ান্ত অনুমোদন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান