অনুপ সর্বজ্ঞ : সাধারণ বীমা চুক্তির মাধ্যমে গ্রাহক নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রিমিয়াম প্রদানের বিনিময়ে বীমা কোম্পানি থেকে দুর্ঘটনাজনিত কারণে সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে জীবন বীমা হলো এমন একটি চুক্তি যেখানে গ্রাহকের মৃত্যু হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেয়া হয় তার উত্তরাধিকারীকে। এছাড়া অসুস্থতাজনিত কারণেও জীবন বীমা কোম্পানি থেকে আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন গ্রাহকরা। এক্ষেত্রে এককালীন বা নির্ধারিত সময় শেষে সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানিকে নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রিমিয়াম প্রদান করতে হয়।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) তথ্য অনুযায়ী, জীবন বীমায় দাবি নিষ্পত্তির হার ৮৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। তবে দাবি পরিশোধে জীবন বীমা কোম্পানিগুলো এগিয়ে থাকলেও পিছিয়ে পড়েছে সাধারণ বীমা খাত। ২০১৮ সালে দেশের ৪৮টি সাধারণ বীমা কোম্পানির মোট দাবির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৪২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে ১ হাজার ১৫০ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অর্থাৎ সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর দাবি নিষ্পত্তির হার মাত্র ৪১ দশমিক ৯৭ শতাংশ। অর্ধেকের বেশি বীমা দাবিই অপরিশোধিত থাকছে এ খাতে। এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর মোট দাবির পরিমাণ ২ হাজার ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে ২৮৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। প্রথম প্রান্তিকে সাধারণ বীমা খাতের দাবি নিষ্পত্তির হার মাত্র ১৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
সাধারণ বীমা কোম্পানির দাবি নিষ্পত্তির এ হার সন্তোষজনক না বলে মন্তব্য করেছেন আইডিআরএ’র সদস্য নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) খলিল আহমেদ। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে খাতটির আরও স্বক্রিয় হওয়া উচিত। তবে এক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা করপোরেশনেরও (এসবিসি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কারণ এসবিসি যদি পুনঃবীমার অর্থ ঠিক সময়ে দিয়ে দিত তাহলে এ অবস্থা তৈরি হতো না।
এদিকে, এসবিসি কর্তৃপক্ষ বলছে ভিন্ন কথা। প্রতিষ্ঠানটির পুনঃবীমা বিভাগের উপমহাদেশের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন, সরাসরি এসবিসিকে দোষারোপ করা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের উচিত হচ্ছে না। কারণ কোন সাধারণ বীমা কোম্পানিই পুনঃবীমা প্রিমিয়ামের অর্থ নিয়মিত প্রদান করে না। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে পুনঃবীমা প্রিমিয়াম বাবদ ৫৮১ কোটি টাকা বকেয়া রেখেছে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো। আইন অনুযায়ী সঠিক নিয়মে প্রিমিয়াম পরিশোধ না করলে বীমা দাবি মেটানোর সুযোগ নেই। আমরা প্রায়ই কোম্পানিগুলোকে বকেয়া প্রিমিয়াম পরিশোধের জন্য চিঠি দিচ্ছে। এছাড়া আইডিআরএ-কেও বিষয়টি একাধিক বার জানানো হয়েছে।
আইডিআরএ’র সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ বীমা খাতে গ্রীনডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের মতো কোম্পানিরও ২০১৮ সালে দাবি পরিশোধের হার মাত্র ২০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। গত বছর এ কোম্পানির মোট দাবির পরিমাণ ছিল ৬৫৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এরমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে ১৩৪ কোটি ১২ লাখ টাকা। এদিকে এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির গ্রীন ডেল্টার মোট দাবির পরিমাণ ৫৫৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে ৬১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এ অনুযায়ী প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির দাবি নিষ্পত্তির হার ১১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে গ্রীনডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা, উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির এ চৌধুরি বলেন, বেশ কিছু পলিসির কাগজপত্র আমরা পাইনি, ফলে দাবি পরিশোধ সম্ভব হয়নি। কিছু দাবি প্রক্রিয়াধীন আছে। আর এসবিসির কাছেও কোম্পানির কিছু পাওনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান