নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারকে যে কোনো মূল্যে ভালো করার করার নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তার পরামর্শে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। সবার মতামত নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দেয়া হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে।
গতকাল রোববার আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিংয়ের কার্যালয়ে আয়োজিত অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোর সাথে মত বিনিময়কালে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেন এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও অ্যালায়েন্স ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার আসাদুল ইসলামসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আইসিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, অর্থমন্ত্রী আজকেও সব স্টেকহোল্ডারদের সাথে বৈঠক করবেন। সেখানেও কিছু প্রস্তাবনা আসবে। এসব প্রস্তাবনা মিলিয়ে শিগগিরই একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা তৈরি করা হবে। প্রস্তাবনাটি ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউট ডিপার্টমেন্টে (এফআইডি) জমা দেয়া হবে। পরবর্তীতে অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজার নিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নেবে। অর্থমন্ত্রী চান যে কোনো মূল্যে শেয়ারবাজার পরিস্থিতি ভালো করতে হবে।
আইসিবি ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও বলেন, পুঁজিবাজারে সবাই মনে করে আইসিবি মার্কেট মেকার। এটি সত্য নয়, আইসিবি হয়তো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩১৭ কোটি টাকার লেনেদেন হয়েছে। সেখানে হয়তো আইসিবি সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো কিনেছে। এ পরিমাণ বিনিয়োগ নিয়ে মার্কেট মেকার হওয়া যায় না। এজন্য সব মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ও ট্রেক হোল্ডারদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানির সাধারণ সম্পাদক বলেন, পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন দরকার। নির্দিষ্ট কোনো তহবিল দিয়ে পুঁজিবাজার চলে না। আইসিবিকে সরকার ৮শ’ কোটি টাকা দিলো। এটি দিয়ে কতদিন কিনবে। এখানে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন দরকার। বে-মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড প্রয়োজন। যাতে বেশি করে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ হয়। ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা দরকার। বর্তমানে দেশে ৩ হাজারের বেশি পাবলিক কোম্পানি আছে। এরমধ্যে ৩শ’ কোম্পানি তালিকাভুক্ত। নতুন করে ভালো কোম্পানি আনতে হবে।
তিনি বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর ন্যাশনাল ক্লিয়ারিং হাউজ প্রয়োজন। গত ১০ বছর ধরে শোনা যাচ্ছে, ক্লিয়ারিং হাউস হচ্ছে। শর্ট সেল চালু হওয়া প্রয়োজন। এটিও একটি শেয়ারবাজারের প্রোডাক্ট। ডিপজিটরি কোম্পানির সাথে সংযুক্তির মাধ্যমে রিয়েল টাইম লেনদেন প্রয়োজন। পুঁজিবাজার নিয়ে অনেক আইন আছে। নতুন কোনো আইনের প্রয়োজন নেই। শুধু আইনের বাস্তবায়ন দরকার। শুধু বৈঠক আর আইন করে কোনো লাভ হবে না। গত কয়েক বছরে অনেক বসা হয়েছে। বিগত বছরে যেসব প্রস্তাব এসেছে, তার কত শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে সেটি জানানো দরকার। কারণ সবাই বসে কিছু আলোচনা করবে, পরবর্তীতে আর ফলো-আপ থাকবে না তা হলে এসব বৈঠকের কোনো সুফল আসবে না।
আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের সিইও মো. গোলাম রব্বানী বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডে অতিরিক্ত করারোপ করা হয়েছে। সকল মিউচ্যুয়াল ফান্ডের আয় করমুক্ত করা উচিত। এ বিষয়টি সরকারের নজরে আনতে হবে। সঞ্চয় পত্রের সুদের হার বেশী হলেও অনেক সময় মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে চায় না।
অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি অ্যাসোসিয়েশনের কো-অরডিনেটর বলেন, বাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে হবে। সাধারণ বিনিয়োগকারী না থাকলে বাজারের কোনো মূল্য নেই। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
এইচএফ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন খান বলেন, বাজারে আরও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের প্রয়োজন। বর্তমানে বাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অংশীদারিত্ব মাত্র ৩ শতাংশ। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অবদান আরও বেশি।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান