নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজারে একদিনের স্বল্পস্থায়ী চাঙ্গাভাবের পরই সূচকের বড় ধরনের পতন দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিদ্যমান আস্থাহীনতা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভ্রান্তিকর বার্তা এ পতনের পেছনে প্রধান কারণ বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
গত কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছিল ৩৯ পয়েন্টের বেশি, যা বাজারে আশাবাদের সৃষ্টি করেছিল। রোববার লেনদেনের শুরুতেও সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী—প্রথম এক ঘণ্টায় ডিএসইএক্স প্রায় ২০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে লেনদেনের মধ্যভাগ থেকে সূচক নিম্নমুখী হতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত ২৯.৩৮ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৭৯১ পয়েন্টে গিয়ে থামে।
বিনিয়োগকারীদের ভাষ্যমতে, আগের দিনের বাজার চাঙ্গা হওয়ার পেছনে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী উপদেষ্টা ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পরিদর্শন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। বাজারে ধারণা জন্মেছিল যে, সরকার উচ্চপর্যায় থেকে বাজার মনিটর করছে এবং ইতিবাচক পদক্ষেপ আসতে পারে—যা অনেককে আবার বিনিয়োগে উৎসাহিত করে।
তবে বিকেলের দিকেই বাজারে সেই আশাবাদ ম্লান হয়ে যায়। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সঙ্গে অংশীজনদের বৈঠক নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, চেয়ারম্যান অংশীজনদের মতামত যথাযথভাবে গ্রহণ না করে অপেশাদার আচরণ করেছেন এবং কিছু নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বিরূপ মন্তব্য করেছেন।
এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশের মধ্যে আস্থা সংকট আরও তীব্র হয়।
ফরহাদ হোসেন নামের এক খুচরা বিনিয়োগকারী বলেন, “কাল কিছুটা আশার আলো দেখা গেলেও আজ আবার মনে হচ্ছে—এই বাজারে কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বা স্থিতিশীল কৌশল নেই।”
এক ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, “যখন নিয়ন্ত্রকদের অবস্থান দ্বৈত হয়—একদিকে সহানুভূতিশীল বার্তা, আরেকদিকে বৈঠকে অপেশাদার আচরণ—তখন বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে পড়ে।”
বাজারসংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে বাজার পরিস্থিতি শুধু প্রাতিষ্ঠানিক নয়, বরং নীতিনির্ধারকদের বার্তা ও আচরণের ওপরও মনস্তাত্ত্বিকভাবে নির্ভর করছে। তারা মনে করছেন, বাজার স্থিতিশীল করতে হলে নীতিগত সমন্বয় এবং সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা অত্যন্ত জরুরি।
তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী,
১. অর্থ মন্ত্রণালয়, বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় বাড়াতে হবে।
২. অংশীজনদের সম্মানজনকভাবে সম্পৃক্ত রাখতে হবে, যেন বাজারে বিভ্রান্তিকর সংকেত না ছড়ায়।
৩. বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে নিয়মিত ও বিশ্বাসযোগ্য বার্তা দিতে হবে, যাতে তারা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
বাজার পর্যালোচনা – ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)
রোববার (১৮ মে) ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৯.৩৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৯১ পয়েন্টে।
ডিএসইএস সূচক কমেছে ৬.৬২ পয়েন্ট এবং অবস্থান করছে ১ হাজার ৪৬ পয়েন্টে, আর ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ৮.০১ পয়েন্ট, দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৮০ পয়েন্টে।
ডিএসইতে এদিন মোট ৩৯৯টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১০২টির, কমেছে ২৪১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৭টি কোম্পানির শেয়ার।
লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকা, যা আগের দিনের ২৬২ কোটি ৮৬ লাখ টাকার তুলনায় প্রায় ৩০ কোটি টাকা বেশি।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)
রোববার সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ১ লাখ টাকার, যা আগের দিনের ৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা থেকে বেড়েছে।
দিনটিতে সিএসইতে ২৩৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৮৮টির, কমেছে ১১৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩০টি।
সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৭৮.০৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৪০৩ পয়েন্টে। আগের দিন এই সূচক ৪.৩৯ পয়েন্ট বেড়েছিল।