পতনমুখী বাজারে লোকসানি কোম্পানির দাপট

সময়: মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯ ১০:৪৪:০৩ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের পুঁজিবাজারে যেন দরপতন থামছে না। টানা পতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে লোকসানি কোম্পানির দাপট লক্ষ্য করা গেছে। মন্দা বাজারে লোকসানি কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির কারণে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির পরিমাণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানির শেয়ারদর গতকাল আগের দিনের চেয়ে ১০ শতাংশ বেড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ার গতকাল সর্বশেষ ৯ টাকা ৯০ পয়সা লেনদেন হয়েছে। কোম্পানির পুঁঞ্জিভূত লোকসানের পরিমাণ ১৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার বেশি। দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দিয়ে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ। প্রাপ্ত তথ্যানুসারে কোম্পানিটির দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর পিই রেশিও নেগেটিভ। কোম্পানির প্রকাশিত প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর’১৯) আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৫ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ৬ পয়সা।
এদিকে, জিলবাংলা সুগারের শেয়ার গতকাল সর্বশেষ ৩০ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম আগের দিনের চেয়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেড়েছে। কোম্পানির পুঁঞ্জিভূত লোকসানের পরিমাণ ২৯৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানির ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৭১ কোটি টাকা। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত। প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর’১৯) আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১৯ টাকা ৭০ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে লোকসানের হয়েছিল ১৭ টাকা ৫৬ পয়সা।
অন্যদিকে, মেঘনা গ্রুপের মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ার দর আগের দিনের চেয়ে গতকাল ১০ শতাংশ বেড়েছে। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার গতকাল সর্বশেষ ১১ টাকায় লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিটির পুঁঞ্জিভূত লোকসানের পরিমাণ ৮৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকারও বেশি। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারা লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত। কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৬৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। সর্বশেষ প্রকাশিত প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর’১৯) আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান ১ টাকা ৮১ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে লোকসানের পরিমাণ ছিল ১ টাকা ২৪ পয়সা।
শুধু মেঘনা গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠান মেঘনা পিইটি এবং মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিজ, জিলবাংলা সুগারই নয় গতকাল রোববার বাজারে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসা বেশ কয়েকটি কোম্পানিই ছিল লোকসানি। আর এসব কোম্পানির দর বাড়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। লোকসানি কোম্পানির দর বৃদ্ধির কারণে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির পরিমাণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা আরও বলছেন, বাজারে দীর্ঘ মন্দায় অনেক বিনিয়োগকারী সাইড লাইনে চলে গেছে। পতন আরও দীর্ঘায়িত হলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করবে।
এ সম্পর্কে একটি ব্রোকারেজ হাউজের এক কর্মকর্তা বলেন, বাজার থেকে নানাভাবে অর্থ বেরিয়ে গেছে। বিদেশিদের হাতে থাকা অধিকাংশ শেয়ার তারা বিক্রি করে বেরিয়ে গেছে। বর্তমান বাজারে তারল্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। আর এমন পরিস্থিতিতে বাজার কে সাপোর্ট দেয়ার মতো ফান্ড প্রয়োজন, যা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে নেই। সরকারের নিকট একটি ফান্ড চাওয়া হয়েছে। যদি ফান্ডের অনুমোদন পাওয়া যায় তাহলে বাজারে বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে। এতে বাজারে বিদ্যমান তারল্য সংকট কাটবে। ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতা ফিরবে শেয়ারবাজার।
তিনি আরও বলেন, পতনমুখী বাজারে লোকসানি, স্বল্পমূলধনী, দুর্বল মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির দর বাড়তে দেখা যায়। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা সচেতন না হলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কেউ যদি বুঝেশুনে লোকসানি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন তাহলে তো নিয়ন্ত্রক সংস্থার কিছু করার থাকে না।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৭৫৫ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged