নিজস্ব প্রতিবেদক : অবসায়ন হতে যাওয়া শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফসিএল) সাবেক ৯ পরিচালকসহ ১১ জনের হাতে থাকা শেয়ার জব্দের জন্য সকল ব্রোকারদের নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ জুলাই ওই ১১ জনের নামে থাকা শেয়ার ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এরই ধারাবাহিকতায় শেয়ার জব্দের বিষয়ে ডিএসই সকল ব্রোকারদের নির্দেশনা দিয়েছে। গত ১৭ জুলাই ব্রোকারদের উদ্দেশে এ চিঠি পাঠানো হয় বলে ডিএসই সূত্রে জানা গেছে।
চিঠিতে উল্লেখ্য করা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের নির্দেশনা অনুযায়ী পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক ৯ পরিচালকসহ ১১ জনের হাতে থাকা শেয়ার জব্দের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
পিপলস লিজিংয়ের যে ৯ পরিচালকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে তারা হলেন- শামসুল আলআমিন গ্রুপের মালিক ও পিপলসের সাবেক পরিচালক নার্গিস আলামিন, হুমায়িরা আলামিন ও আরেফিন শামসুল আলামিন, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের বর্তমান পরিচালক এম মোয়াজ্জেম হোসেন, মতিউর রহমান, ইউসুফ ইসমাইল, বিশ্বজিৎ কুমার রায়, খবিরউদ্দিন মিয়া ও এম শহিদুল হক। অন্যদিকে, পিপলসের দুই কর্মকর্তা হলেন- সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপনা পরিচালক কবির মোস্তাক আহমেদ, সাবেক মহাব্যবস্থাপক নৃপেন্দ্র চন্দ্র পন্ডিত।
এর আগে গত ১৪ জুলাই পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য আদালতে মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিনই মামলার শুনানি শেষে প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে পিপলস লিজিংয়ের নামে থাকা সব অ্যাকাউন্ট ও অনিয়মের দায়ে বহিষ্কৃত ৯ পরিচালকসহ ১১ জনের নামে থাকা শেয়ার ও তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে উভয় শেয়ারবাজারে প্রতিষ্ঠানটির লেনদেন বন্ধ হয়। এছাড়া অবসায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদার একজনকে অবসায়ক নিয়োগের আদেশ দেন আদালত। এ আদেশের ফলে ওই ১১ জন শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন না। তাদের অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া পিপলস লিজিংয়ের নামে থাকা সব অ্যাকাউন্ট বন্ধ থাকবে। এসব অর্থ দিয়ে আমানতকারীদের পাওনা পরিশোধের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
জানা যায়, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক মো. আসাদুজ্জামান খানকে অবসায়ক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অবসায়কই পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবেন। কীভাবে, কোন পদ্ধতিতে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেয়া হবে, এসব বিষয়ে তিনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, অনিয়মের মাধ্যমে ৫৭০ কোটি টাকা বের করে নেন পরিচালকরা। এর বড় অংশই বের করা হয় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক শামসুল আলামিন গ্রুপের নামে। গ্রুপের ২০ প্রতিষ্ঠান এবং কয়েকজন পরিচালকের নামে অনিয়ম করে বের করা হয় ১৪০ কোটি টাকা। এ ছাড়া পরিচালক মতিউর রহমান, খবিরউদ্দিন, ইউসুফ ইসমাইল, বিশ্বজিত কুমার রায়ও নামে-বেনামে টাকা বের করে নেন। পিপলসের সাবেক চেয়ারম্যান এম মোয়াজ্জেম হোসেন প্রতিষ্ঠানটির ১২৩ কোটি টাকার জমি নিজের নামে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করে নিলেও পরে তা ছেড়ে দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে এসব অনিয়ম বের হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি থেকে পরিচালক শামসুল আলামিন, নার্গিস আলামিন, হুমায়রা আলামিন ও খবিরউদ্দিনকে অপসারণ করা হয়। আর চেয়ারম্যান এম মোয়াজ্জেম হোসেন স্বেচ্ছায় পদ ছেড়ে দেন।
পিপলস লিজিংয়ে ঋণ বিতরণে অব্যবস্থাপনা, সম্পত্তির ঝুঁকি ও তারল্য সংকটে দুরবস্থায় রয়েছে। তারা আমানতকারীর অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে চিঠি দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের প্রান্তিক তথ্যানুযায়ী, পিপলস লিজিংয়ে আমানত রয়েছে দুই হাজার ৮৬ কোটি টাকা। তবে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার মতো নগদ অর্থ সংকটে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না।
এদিকে পিপলস লিজিংয়ে এক হাজার ১৩১ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ৭৪৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৬৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। ধারাবাহিক লোকসানের কারণে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ প্রতিষ্ঠানটি ২০১৪ সালের পর থেকে কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান