সাইফুল শুভ : পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফএসএল) নিরীক্ষা প্রতিবেদন নির্ধারিত সময়ে জমা দিতে পারেনি একনাবিন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নিরীক্ষার সময় বাড়ানোর অনুমতি চেয়েছিল নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক নিজ উদ্যোগে সময় বাড়াতে চায়নি। ফলে বিষয়টি আবারো আদালতে গড়াচ্ছে।
পিপলস লিজিংয়ের সম্পদের প্রকৃত হিসাব পাওয়ার পর আমানতকারীদের পাওনা ও অবসায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তাই আদালত ‘একনাবিন’-কে নিরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯-এর মধ্যে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান একনাবিনকে সম্পদ ও দায়ের হিসাব দেয়ার সময় বেধে দিয়েছিল। নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর আরও তিন মাস সময় বাড়ানোর অনুমতি চেয়েছিল। অর্থাৎ আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত সময় চায় একনাবিন।
কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক নিজ উদ্যোগে আর সময় বাড়াতে চায় না। তাই চলতি সপ্তাহেই বিষয়টি নিয়ে আবারো আদালতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আদালত যেমনি নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছিল, তেমনি সময়ও বেধে দেয়ার আবেদন জানাবে বাংলাদেশ ব্যাংক। একনাবিন সে মোতাবেক কাজ করবে এমনটাই আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আহমদ আলী শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে নিরীক্ষা প্রতিবেদন দিতে বলেছি। যাতে জানুয়ারি থেকে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেয়া শুরু করা যায়। কিন্তু একনাবিন ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিরীক্ষা প্রতিবেদন দিতে পারেনি। তাই বিষয়টি এখন আদালতে পেশ করা হবে। আদালত সময় বেধে দিবে। সেইভাবে কাজ করবে একনাবিন।’
এ বিষয়ে পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুমার দাস দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে বলেন, বিষয়টি লিকুইডেটরের মাধ্যমে জেনেছি। আদালতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একনাবিন সময় পেলে সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে বলে জানিয়েছেন। এখন আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো সুযোগ নেই।
অবসায়নের চূড়ান্ত ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত স্টক এক্সচেঞ্জগুলো পিএলএফএসলকে তালিকাচ্যুতও করতে পারছে না। একের পর এক লেনদেন স্থগিতের সময় বাড়ানো হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করছেন, কোম্পানিটির অবস্থা এত খারাপ এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত ছিল আগে থেকেই সর্তক করা। হঠাৎ করে অবসায়নের সিদ্ধান্তে হতাশ তারা। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বাভাষ পেলে আমানতকারীরাও বুঝে-শুনে টাকা গচ্ছিত রাখতো।
জানা গেছে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে কাজ শুরু করেছে ‘একনাবিন’। পিএলএফএসএলে প্রকৃত সম্পদ ও দায় নির্ধারণের পর প্রথমে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেয়ার চিন্তা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে- কোম্পানি আইন অনুযায়ী শেয়ারহোল্ডাররা কোম্পানির মালিক। কোম্পানি যদি লোকসান করে তবে মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটাই স্বাভাবিক। কোম্পানিটি অবসায়নের ঘোষণার পর স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে কোম্পানির শেয়ার লেনদেন বন্ধ রয়েছে।
১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে অনুমোদন লাভ করে। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা ২৮ কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৯৭টি। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের সংখ্যা ৬৭ দশমিক ১০ শতাংশ, উদ্যোক্তাদের শেয়ার ২৩ দশমিক ২১ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং বিদেশীদের শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার আছে। প্রতিষ্ঠানটিতে মোট আমানতের পরিমাণ ২ হাজার ৩৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাকি ৭০০ কোটি টাকা রয়েছে ৬ হাজার সাধারণ গ্রাহকের আমানত।
প্রতিষ্ঠানটির ঋণের পরিমাণ এক হাজার ১৩১ কোটি টাকা, এর মধ্যে ৭৪৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণের বড় অংশই কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান