নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী পাঁচ বছরের জন্য কালো টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগসহ ১৬ দফা প্রস্তাব দিয়েছে, বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। আগামী অর্থবছরের জন্য দেওয়া এক বাজেট প্রস্তাবনায় এই সুযোগ চাওয়া হয়েছে। প্রস্তাবনায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার নিঃশর্ত সুযোগ দেওয়ার কথঅ বলা হয়েছে।
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে ওই প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ১৬ দফা প্রস্তাব
যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শন পুর্বক আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে গত ২০১০ ইং সাল থেকে পুূঁজিবাজারে যে মহা ধপ্তস শুরু হয়েছিল তা আজো অব্যাহত আছে। পূজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে বহু বিনিয়োগকারী আত্মহত্যা করেছেন, অনেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, যারা বেঁচে আছেন তারাও অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বর্তমানে সারা বিশে^র মত বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারন করেছে বিধায় সদাশয় বাংলাদেশ সরকার গত ২৬ র্মাচ ২০২০ ইং থেকে অদ্যাবদি পর্যন্তসাধারন ছুটি বলবৎ রেখেছেন। এমতঅবস্থায় জীবন-জীবিকা ও অর্থনীতি বাঁচানোর বৃহত্তর স্বার্থে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমšী¿ জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের সকল ব্যাবসায়ীদের জন্য বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা ও প্রনোদনা দিয়ে যাচ্ছেন। তাই আসন্ন ২০২০-২০২১ ইং জাতীয় বাজেটে শেয়ারবাজারের বাস্তব ভিত্তিক-দৃশ্যমান উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা, আস্থা ও বিশ^াস যোগ্যতা, আন্তর্জাতিক মানের শেয়ারবাজার গঠন, সরকারি ও বেসরকারি
উন্নয়নে শেয়ারবাজারকে অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য দেশ, জাতি ও অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে আমরা নিম্নলিখিত দাবি সমূহ আপনার বরাবর পেশ করছি ঃ
১. শেয়ার মার্কেটে মহামারী করোনা ভাইরাসজনিত ক্ষতি কাটিয়ে উঠার নিমিত্তে নূন্যতম আগামী পাঁচ বছরের জন্য আসন্ন জাতীয় বাজেটে নিঃস্বার্থভাবে কালো টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ প্রদানের দাবী করছি ৷
২. চলমান করোনা ভাইরাস জনিত সাধারন ছুটির কারনে শেয়ার মার্কেট বন্ধ রয়েছ, বিধায় এই সেক্টরের লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ব্লক হয়ে আছে,তার উপর মার্জিন লোনের সুদ ও বিনিয়োগকৃত টাকার ক্ষতি দুটোই বাজারের বিনিয়োগকরীর পুঁজি রক্ষার জন্য চরম হুমকির কারন হয়ে দাড়িয়েছে,তাই বিনোয়গকারীদের আর্থিক ক্ষতি পূরণ করার জন্য মার্জিন একাউন্টের সুদ মার্চ ২০২০ ইং থেকে আগামী ডিসেম্বর ২০২০ ইং পর্যন্ত মকুফের দাবী করছি এবং চলতি বছরের বিও একাউন্টের চার্য মওকুফ করতে হবে।
৩. ডিসেম্বর ২০২০ ইং থেকে পরবর্তী দুই বছর (২০২১/২০২২ ইং) পর্যন্তমার্জিন একাউন্টের সুদ সবের্প্তাচ্ছ ৫% নির্ধারনের দাবী করছি৷
৪. নূন্যতম ৫ লাখ টাক পর্যন্ত সকল প্রকার ডিভিডেন্ট আয়ের উপর সকল ধরনের ভ্যাট, টেক্স মওকুফের দাবী করছি৷
৫. অতিদ্রুত বাইব্যাক কোম্পানী আইন পাশ ও বাস্তবায়ন করে শেয়ারমার্কেটকে আরো গতিশীল ও জবাবদীহিতার আওতায় আনতে হবে ৷ উল্লেখ্য মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক ঘোষিত কোম্পানী আইনে ২.সি সি ধারা কার্যকরের মাধ্যমে প্রত্যেক কোম্পানীকে নূন্যতম ৩০%শেয়ার ধারন এবং কোম্পানীর প্রত্যেক পরিচালকদের নূন্যতম ২% শেয়ার ধারন বাধ্যতামূলক করতে হবে ৷ অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠিন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করার দাবী করছি এবং ফিনাপ্টিয়াল রিপোর্টিং এ্যাক্ট দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে দূর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহী মূলক শেয়ারবাজার গঠনের দাবী করছি।
৬. তারল্য সংকট দূর করার জন্য প্রচলিত মার্জিন লোন প্রদান সুবিধা আগামী তিন বছরের জন্য নূন্যতম ১ঃ১ করার দাবী করছি ৷
৭. সকল ব্রোকারেজ হাউজ,মার্চেন্ট ব্যাংক,এসেট ম্যানেজম্যান্ট,মিউচুয়াল ফান্ডকে নিজ উদ্যোগে এফ ডি আর, এস টি আর, এল টি আর, বা প্রচলিত ডিপোজিট সংগ্রহের অনুমতি প্রদান করতে হবে, যাতে বাজারে চলমান ভয়ংকর তারল্য সংকট দূর করে শেয়ারবাজারের সর্বস্তরের বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে এনে বাজার স্থিতিশীল করা যায় ৷
৮. রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপি অধিকহারে ব্রোকারেজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের শাখা খোলার অনুমতি প্রদানের দাবী করছি ৷
৯. বাজারের পরিধি আরো অধিক পরিমানে বৃদ্ধি ও শেয়ারবাজারের সেবা জনগনের দৌড় গোড়ায় পৌছিয়ে দেওয়ার জন্য দ্রুত সময়ে এবং নামমাত্র মূল্যে ব্রোকারেজ হাউজের ট্রেক বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত প্রদানের দাবী করছি৷
১০. শেয়ারবাজারে লিস্টেড কোম্পানী সমূহের প্রচলিত টেক্স নূন্যত আগামী তিন বছরের জন্য বর্তমান টেক্সরেট থেকে নূন্যতম ৫% কমানোর দাবী করছি,যাতে তারা ব্যবসায়িক মন্দার স্বীকার হলেও শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের পর্যাপ্ত ডিভিডেন্ট প্রদান করতে পারেন ৷
১১. উদ্ভূত পরিস্থতিতে ব্যবসা মন্দার জন্য লিস্টেড কোন কোম্পানীকে তালিকাচূতি করা যাবেনা, ওটিসি মার্কেটের সকল কোম্পানীকে পর্যায়ক্রমে বাজারে পুনরায় তালিকা ভুক্ত করতে হবে, এবং যেসব লিস্টেড কোম্পানী দূর্নীতি ও অসৎ উপায়ের মাধ্যমে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদেরকে ডিভিডেন্ট থেকে বঞ্চিত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর দৃষ্টান্ত মূলক সাজা প্রদান করতে হবে, প্রয়োজনে এই বিষয়ের উপরে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করার দাবী করছি ৷
১২. সবের্প্তাপরি শেয়ারবাজারকে গতিশীলতার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত উন্নয়নে রোল মডেলকে বাস্তবায়নের জন্য আসন্নজাতীয় বাজেটে শেয়ারবাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়ানোর জন্য সরকারীভাবে শেয়ার ক্রয়ের জন্য নূন্যতম ১০ হাজার কোটি টাকার প্রনোদনা প্রদানের জোর দাবী জানাচ্ছি,কারন শেয়ারবাজারে সরকারীভাবে শেয়ার ক্রয় করলে, তখন সর্বস্তরের বেসরকারী ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান,বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আরো অধীক আস্থাশীল হয়ে শেয়ারবাজারে ব্যাপক বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে, তখন সরকার তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ লাভসহ শেয়ার বাজার থেকে পর্যায়ক্রমে তুলে নিতে পারবে এবং আশাকরা যায় এতে শেয়ারবাজার অনেক দুর এগিয়ে যাবে ৷
১৩. শেয়ারবাজারের তারল্য সংকট দূর করার জন্য আসন্ন বাজেটে শুধুমাত্র বাংলাদেশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার শর্তে ব্যাক্তিগত আয়কর মুক্ত সীমা নুন্যতম ১০ লক্ষ টাকা এবং এসএমই শ্রেণীভুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য আয়কর মুক্ত নুন্যতম সীমা ৪০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দাবী করছি।
১৪. ইতিমধ্যে সরকার কতৃক ঘোষিত প্রত্যেক ব্যাংকে শেয়ারবাজারে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ সীমা বৃদ্ধি করে নুন্যতম ৫০০ কোটি টাকা করার দাবী করছি, এবং আগামী সর্বোচ্চ ৩ মাসের মধ্যে প্রত্যেক ব্যাংকে উক্ত টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে বাধ্য করতে হবে।
১৫. শেয়ারবাজারের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধিকরন সাপেক্ষে আন্তর্জাতিক মানদন্ড বজায় রেখে শেয়ারবাজারে আরো অধিক হারে ভালো কর্পোরেট, দেশীয় ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীকে লিস্টেড করতে হবে। পি পি পি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ) মাধ্যমে সরকারী/বেসরকারী উন্নয়ন প্রকল্প যেমন- পন্সা সেতু নির্মান, মেট্রোরেল নির্মান, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান, প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর নির্মান, সমুদ্র বন্দর নির্মান ইত্যাদি বাস্তবায়নে শেয়ার মার্কেট থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করা যেতে পারে।
১৬. আন্তর্জাতিক মানদন্ড অর্জনের জন্য শেয়ারবাজারে আরো অধিক হারে বন্ড ইস্যু, মিউচুয়াল ফান্ড ইস্যু, পেনশন ফান্ড বিনিয়োগ উৎসাহিত করণ, প্রফেশনাল এসেট ম্যানেজমেন্টের অনুমোতি প্রদানের দাবী করছি। অতএব, এমতঅবস্থায় শেয়ারবাজারের বৃহত্তর ও দীর্ঘতম স্বার্থে উপরে উল্লেখিত দাবী সমুহ গ্রহণ করে বিনিয়োগকারীদের সম্মেলিত অর্থায়নের মাধ্যমে বার্ষিক জিডিপি শক্তিশালী করণের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত উন্নয়নের রোল মডেল বাস্তবায়ন করে জাতীর জনকের আজন্ম লালিত স্বপ্ন প্রকৃত “সোনার বাংলা” গড়তে আপনার সদয় সহযোগিতা প্রার্থণা করছি।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান