বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে ৯টি এনবিএফআই বন্ধের ঘোষণা

সময়: মঙ্গলবার, অক্টোবর ১৪, ২০২৫ ৯:০৯:৫৩ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বেশ কিছু ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (এনবিএফআই) দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। অবনতigrস্ত আর্থিক অবস্থার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাথমিকভাবে ৯টি দুর্বল এনবিএফআই বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

দেশের বড় অঙ্কের প্রাতিষ্ঠানিক আমানতের একটি অংশ বর্তমানে দুর্বল ব্যাংক ও এনবিএফআই-তে আটকে রয়েছে। পাঁচটি মার্জারপ্রাপ্ত দুর্বল ব্যাংকের কাছে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর) আটকে আছে। পাশাপাশি ২০টি দুর্বল এনবিএফআই-তে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি প্রাতিষ্ঠানিক আমানত রয়েছে। এই তালিকায় ৯টি প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, এবং তাদের বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু ব্যাংকের সাথে সংযুক্ত বিভিন্ন এনবিএফআই ও তাদের চারপাশে বন্যা-সদৃশ অবস্থা বিরাজ করছে। উদাহরণস্বরূপ:

  • ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের কাছে ১০,১৮৫ কোটি টাকা পাওনা

  • ইউনিয়ন ব্যাংকের কাছে ৮,৬৩১ কোটি টাকা

  • এক্সিম ব্যাংকের কাছে ৮,১৫৭ কোটি টাকা

  • সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের কাছে ৫,৭৯১ কোটি টাকা

  • গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের কাছে ৪,৫৬৮ কোটি টাকা

    এছাড়া পদ্মা ব্যাংকসহ অন্যান্য দুর্বল ব্যাংকেও বিপুল পরিমাণ আমানত আটকে রয়েছে।

বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া নিম্নলিখিত ৯টি এনবিএফআই এবং তাদের ঋণখেলাপি ও লোকসানের পরিস্থিতি:

  • প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি শতাংশ লোকসান (কোটি টাকা)

    এফএএস ফাইন্যান্স ৯৯.৯৩% ১,৭১৯ কোটি

    ফারইস্ট ফাইন্যান্স ৯৮% ১,০১৭ কোটি

    বিএআইএফসি ৯৭.৩০% ১,৪৮০ কোটি

    ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ৯৬% ৪,২১৯ কোটি

    পিপলস লিজিং ৯৫% ৪,৬২৮ কোটি

    আভিভা ফাইন্যান্স ৮৩% ৩,৮০৩ কোটি

    প্রিমিয়ার লিজিং ৭৫% ৯৪১ কোটি

    জিএসপি ফাইন্যান্স ৫৯% ৩৩৯ কোটি

    প্রাইম ফাইন্যান্স ৭৮% ৩৫১ কোটি

সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুর রহমান এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করে বলেন,

“শুধু কমিশন বাণিজ্য নয়, রাজনৈতিক প্রভাব এবং উচ্চ সুদের লোভই এসব প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করেছে। তৎকালীন সময় ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও ব্যবসায়ী এস আলমের প্রভাব স্পষ্টভাবে লক্ষণীয় ছিল।”

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন যে, রাজনৈতিক দিকনির্ধারণ, কমিশন ভিত্তিক উদ্যোগ এবং অত্যধিক সুদ ধারায় পরিচালিত লেনদেনই দীর্ঘ সময় ধরে এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে ক্রমাগত দুর্বল করে তুলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোথায় টাকা রাখবে তা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। কিন্তু মূল সমস্যা দুর্নীতি, যা যদি বন্ধ না করা যায়, তবে এই ধরনের আর্থিক সঙ্কট থেকে পরিত্রাণ পাওয়া মুশকিল।”

 

Share
নিউজটি ৯৪ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged