নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী ১ মার্চ থেকে সাধারণ বীমা খাতের সব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে কমিশনের ভিত্তিতে বীমা এজেন্ট হিসেবে নিয়োগের নির্দেশনা দিয়েছে ইন্স্যুরেন্স ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ)। এর ফলে দীর্ঘদিন থেকে পেয়ে আসা মোট অংকের বেতন-ভাতা ছাড়তে হচ্ছে উন্নয়ন কর্মকর্তাদের। তবে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বরাবর এ সময়সীমা আরো কিছুটা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)।
বিআইএ চেয়ারম্যান শেখ কবীর হোসেন দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে বলেন, আইনেই উন্নয়ন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ব্যবসা সংগ্রহের বিধান নেই। কমিশনের ভিত্তিতে এজেন্টদের মাধ্যমে ব্যবসা নিয়ে আসতে হবে এটাই নিয়ম। কিন্তু এ নিয়ম সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো অনুসরণ করছিল না। আইডিআরএ’র নির্দেশনার বিপক্ষে আমরা নই, তবে এর সময়সীমা আরও কিছুটা বাড়ানোর জন্য আজ-কালের মধ্যেই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসবো।
এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ’র সদস্য গকুঁল চাদ দাস বলেন, বিআইএ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়রম্যানের সঙ্গে অ্যাপয়েনমেন্ট করেছে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসার জন্য। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এর সময়সীমা আরও বাড়ানো কোনভাবেই উচিত হবে না। কারণ আইন লঙ্ঘন করে উন্নয়ন কর্মকর্তারা যে বেতন-ভাতা এতোদিন নিয়েছেন তা অবৈধ। এটা মানিলন্ডারিং আইনের মধ্যেও পরে।
আইডিআরএ’র তথ্য অনুযায়ী দেশে ৪৯টি সাধারণ বীমা কোম্পানির ১ হাজার ৩৭০টি শাখা অফিস রয়েছে। এসব শাখা অফিসের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপ-সহকারি ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট, ভাইস-প্রেডিডেন্ট পদবির কর্মকর্তারা উন্নয়ন বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। এসব কর্মকর্তারাই মূলত ব্যবসা করে থাকেন। উন্নয়ন বিভাগের এ কর্মকর্তাদের প্রিমিয়াম আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ওপর তারা উচ্চ বেতন, দামি গাড়ি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পান। প্রিমিয়াম আয়ের ১৫ শতাংশ উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় করে কোম্পানিগুলো।
সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোতে নামে মাত্র এজেন্ট থাকলেও প্রকৃত অর্থে কোনো এজেন্ট নেই। কোম্পানির ব্যবসা করে থাকে উন্নয়ন বিভাগের কর্মকর্তারাই। এসব কর্মকর্তারাই বছরের পর বছর ধরে কোম্পানির প্রিমিয়াম আয় করছে। তারা উচ্চ বেতনসহ গাড়ি বাড়ির সুবিধা পাচ্ছেন। উচ্চ পদের এসব কর্মকর্তারা কোনোভাবেই এজেন্ট পদে পদায়ন হতে রাজি হবেন না। অন্যদিকে এজেন্টরা তাদের স্থান উচ্চ পদস্থদের ছেড়ে দিবেন না। তাদের মতে, এজেন্টরা ১৫ শতাংশ কমিশন পেয়ে থাকেন। তাদের বেতন পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা যে নির্দেশ দিয়েছে সেটা আমাদের মানতে হবে। কোন সিইও’র উচিত না বীমা আইনের বিরুদ্ধে কোন মন্তব্য করা ।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের সেক্রেটারি জেনারেল ও এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ইমাম শাহীন বলেন, বীমাখাতের সার্বিক মঙ্গল ও শৃঙ্খলার জন্যই সার্কুলারটি জারি করেছে আইডিআরএ। সম্মিলিতভাবে এটা বাস্তবায়নের জন্য আইডিআরএ’র সঙ্গে আমাদের এসোসিয়েশন ও ফোরামের বসতে হবে। এর বিভিন্ন দিক নিয়ে আমাদের আলোচনা করতে হবে। এটাতে যদি আমরা কঠোর থাকতে পারি তাহলে শৃঙ্খলাটা আরো শক্ত হবে।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান