ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে

সময়: সোমবার, আগস্ট ৫, ২০১৯ ৮:১৪:২০ পূর্বাহ্ণ


তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের : পুঁজিবাজারে অন্যান্য খাতের মতো ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও বিনিয়োগ কমেছে বিদেশিদের। জুন মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ১৬ কোটি ১০ লাখ শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন তারা। আলোচ্য মাসে বিদেশিরা কোনও নতুন শেয়ার কেনেনি। বরং একইসময়ে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। গত জুনে তারা ১৫ কোটি ৩৩ লাখ শেয়ার কিনেছেন।

চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়িয়েছিল বিদেশিরা। তবে মার্চ মাস থেকে উল্টো চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। গত পাঁচ মাস ধরে টানা বিনিয়োগ কমিয়ে চলেছেন বিদেশিরা। তারা যে পরিমাণ শেয়ার নতুন করে কিনছেন, সে তুলনায় অনেক বেশি শেয়ার বিক্রি করেছেন। পাঁচ মাসেই তারা শেয়ারবাজার থেকে ৫১৮ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ তুলে নিয়েছেন। এর একটা উল্লেখযোগ্য অংশই তুলে নিয়েছেন নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে। বিদেশিরা তাদের বিনিয়োগের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে নেয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। তবে জুন মাসে ব্যাংক খাতে বিনিয়োগ সামান্য বাড়িয়েছে তারা। মাসটিতে ৩২ কোটি ৭০ লাখ নতুন শেয়ার কিনেছে বিদেশিরা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঠিক কী কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে অর্থ তুলে নিচ্ছেন Ñতা স্পষ্ট নয়। তবে তাদের জোর ধারণা, যে কোনো সময়ে তারা আবার শেয়ারবাজারে আগের চেয়ে শক্তভাবে ফিরে আসবে। তখন আবার ঘুরে দাঁড়াবে দেশের পুঁজিবাজার।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ এ প্রসঙ্গে ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘শুধু আর্থিক খাত নয়। সব খাতেই বিনিয়োগ কমাচ্ছে বিদেশিরা। কী কারণে তারা বাজার থেকে বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন সেটা স্পষ্ট নয়। তবে এটা স্পষ্ট, নানা অনিয়ম দুর্নীতির কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মৌলভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ায় বিদেশিরা এই খাতের ওপর আগ্রহ হারাচ্ছেন।’
তবে বাজারের দায়িত্বশীলরা শুধু আশাবাদের ওপরে ভরসা করেই বসে থাকেননি। বিদেশিদের লেনদেন করে এমন ব্রোকারেজ হাউজের কর্তাব্যক্তিদের ডেকে নিয়ে অনুরোধ করেছিলেন, যাতে বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি না করে সেজন্য ব্যবস্থা নিতে। তবে ব্রোকারেজ হাউজগুলো জানিয়েছিল, শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ বিনিয়োগকারীর ইচ্ছাধীন। এখানে বিক্রি করতে বাধা দিলে নতুন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হবেন।
ডিএসই’র তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, জুন মাসে বিদেশিরা আর্থিক খাতের শেয়ার ধারণের পরিমাণ ৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কমিয়েছে। একই সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও উদ্যোক্তা পরিচালকদের সার্বিক শেয়ার ধারণের পরিমাণ অনেকটাই অপরিবর্তিত ছিল।

গত জুনে জিএসপি ফ্যাইন্যান্সের ১ দশমিক ২৯ শতাংশ শেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন বিদেশিরা। একই সময়ে দেশিয় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ২ শতাংশ শেয়ার বাড়িয়ে নিয়েছেন।
একই সময়ে ফাস ফাইন্যান্সে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বেড়েছে ২ দশমিক ৪২ শতাংশ।
আইডিএলসি-তে বিদেশিরা বিনিয়োগ কমিয়েছে দশমিক ২৩ শতাংশ।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স-এ বিদেশিদের বিনিয়োগ কমেছে ১ দশমিক ২৪ শতাংশ।
ফনিক্স ফাইন্যান্স-এ তাদের বিনিয়োগ কমেছে দশমিক ৩৯ শতাংশ। এছাড়া আইপিডিসি, লঙ্কাবাংলা, মাইডাস ফাইন্যান্স-এ বিদেশিদের বিনিয়োগ সামান্য কমেছে।

এদিকে বিদেশিরা তাদের বিনিয়োগের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে নেয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। বছরের শুরুতে বিদেশিরা দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়িয়েছিল। এর প্রভাবে জানুয়ারি মাসে চাঙ্গা ছিল শেয়ারবাজার। তবে মার্চ থেকে কিছু কিছু বিনিয়োগ তুলে নিতে থাকায় বড় পতন ঘটে সূচকে। বিদেশিদের শেয়ার বিক্রির চাপ অব্যাহত থাকায় গত পাঁচ মাস ধরেই টানা ক্ষরণ চলছে বাজারে। মার্চের প্রথম কার্যদিবস থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ডিএসইএক্স সূচক কমেছে ৫৫০ পয়েন্ট।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩৬২ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged