অনুপ সর্বজ্ঞ : অর্থনৈতিক দিক থেকে দেশ এগিয়ে গেলেও কর্মবাজারে কাজ খুঁজতে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মতে, দেশের মোট জনশক্তির একটি বড় অংশ কর্মহীন। তাই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক এ বেকার জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরের উদ্যোগ হিসেবে ‘বেকারত্ব বীমা’ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সররকার।
বেকারত্ব বীমা চালুর জন্য এরই মধ্যে একটি সভা করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। সভায় আলোচনার প্রেক্ষিতে বেকারত্ব বীমা বিষয়ে দুটি বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রথমত: যারা চাকরি থেকে ছাঁটাই হচ্ছে তাদের জন্য এবং দ্বিতীয়ত: যাদের প্রিমিয়াম দেয়ার সক্ষমতা নেই তাদের ক্ষেত্রে সরকারের ভর্তুকি দেয়ার বিষয়ে। এ বিষয়ে সার্বিক পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রেরণের জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে আইডিআরএর নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. শেখ মহ. রেজাউল ইসলাম ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ‘বেকারত্ব বীমা’ চালুর বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। এ সংক্রান্ত বহু কাজ এখনো বাকি।’
এর আগে গত বছরের অক্টোবরে আনুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য বেকার বীমা পরিকল্পনা চালুর পদক্ষেপ হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩৭টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
জানা যায়,জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল-২০১৫ এর আওতায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একশন প্ল্যান অনুসারে আনুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সামাজিক বীমা পরিকল্পের আওতায় আনার এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় যৌথ উদ্যোগে এ কার্যক্রম শুরু করেছে। এতে কারিগরি সহায়তা করছে সোস্যাল সিকিউরিট পলিসি সাপোর্ট (এসএসপিএস)।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিচালিত শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ দেশে বেকারের মধ্যে শিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত ২৩ লাখ ৭৭ হাজার জন এবং নিরক্ষর ৩ লাখ জন। এই ২৬ লাখ ৭৭ হাজার বেকারের মধ্যে পুরুষ ১৩ লাখ ৪৭ হাজার এবং নারী ১৩ লাখ ৩০৯ হাজার জন। নিরক্ষর ৩ লাখ বেকারের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ২৭ হাজার এবং নারী এক লাখ ৭৩ হাজার। প্রাথমিক পাস বেকারের সংখ্যা ৪ লাখ ২৮ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ২ হাজার, নারী ২ লাখ ২৬ হাজার। মাধ্যমিক পাস ৮ লাখ ৯৭ হাজার বেকারের মধ্যে পুরুষ ৪ লাখ ২২ হাজার এবং নারী ৪ লাখ ৭৪ হাজার। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেকার ৬ লাখ ৩৮ হাজার। এর মধে পুরুষ ৩ লাখ ৫৩ হাজার ও নারী ১ লাখ ৭১ হাজার। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৪ লাখ ৫ হাজার বেকারের মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৩৪ হাজার ও নারী ১ লাখ ৭১ হাজার। ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল মেয়াদি সরকারের ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এক কোটি ৪০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বলা হলেও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাÑ
আইএলওর হিসাবে, এ সময়ে বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গত বছর সংস্থাটির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব ২০১০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে ২০১৭ সালে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ দাঁড়িয়েছে।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান