নিজস্ব প্রতিবেদক : এখন মার্কেট যদি ভাল হয় অবশ্যই মিউচ্যুয়াল ফান্ড ভালো রিটার্ন দেবে বলে জানিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডস (এএএমসিএমএফ) এর সভাপতি ড. হাসান ইমাম। তিনি বলেন, জুন মাসে আমাদের ফান্ডগুলোর ইউনিট প্রতি সম্পদ ১০ টাকার নিচে ৭ টাকায় চলে গিয়েছিল। কিন্তু এখন সবগুলো ১১ টাকার কাছাকাছি চলে এসেছে এবং কয়েক মাসেই ৪% থেকে ৫% লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা ফেরত পেয়েছে। বাজার ভাল থাকলে মিউচ্যুয়াল ফান্ড ডিভিডেন্ড দিতে পারবে ভাল।
শনিবার (১০ অক্টোবর) ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ উপলক্ষে এএএমসিএমএফ আয়োজিত ‘শেয়ারবাজার ও দেশের অর্থনীতিতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের গুরুত্ব’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহন করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।
হাসান ইমাম বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড এর ইমেজ সংকট আছে এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। এই সেক্টর নিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রায় নীতিনির্ধারক ও ক্যাপিটাল মার্কেট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মন্তব্য দেখি। বেশিরভাগ মন্তব্যই নেতিবাচক। কোনটার পেছনে যুক্তি আছে, কোনটা ভিত্তিহীন। এই নেতিবাচক মন্তব্য মিউচ্যুয়াল ফান্ড সেক্টর সর্ম্পকে বিরুপ ধারনা তৈরী করেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। যা ক্যাপিটাল মার্কেটের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
সম্প্রতি একজন বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডে কাঠামোগত সমস্যা আছে। বাংলাদেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ডের কাঠামো হাস্যকর। অথচ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের কাঠামোতে কোন সমস্যা নাই। বাংলাদেশ এবং ভারত, আমেরিকা ও ইউরোপের মিউচ্যুয়াল ফান্ডের কাঠামোতে কোন পার্থক্য নেই। বরং ভারত ও আমেরিকা থেকে আমাদের ট্রাস্টি রুলস অনেক কঠিন।
আরেকজন বক্তা বলেন, “মিউচ্যুয়াল ফান্ড এর আইনে বড় সমস্যা, নীতি নির্ধারকদের দ্রুত বড় ধরনের সংস্কার করা প্রয়োজন। আসলে আমাদের দেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ড আইনে বড় কোনো সমস্যাও নেই এবং বড় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নেই। এটা আন্তর্জাতিক বেস্ট প্রাকটিস ফলো করে তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কাঠামো ঠিক থাকা সত্ত্বেও ভুল ধারনার কারনে এই সেক্টরকে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এরমধ্যে অন্যতম মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে শেয়ার হিসেবে ভুল ধারণা থেকে বেশ কিছু ইমেজ সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।
এই ফান্ডের ইউনিট দর সম্পদ বিবেচনায় হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের বাজারে আরেকটি দর নির্ধারন হয়। যাতে করে ১০ টাকার সম্পদের একটি ইউনিট ৪ টাকায়ও লেনদেন হয়। অথচ ওই ইউনিটের সম্পদ ১০ টাকাই রয়েছে। তারপরেও দরপতনের কারনে অনেকের ধারনা মিউচ্যুয়াল ফান্ড ধ্বংস হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, শেয়ারের মতো ইউনিটে বিনিয়োগও ঝুঁকি আছে। এখন কেউ যদি ঝুঁকি মুক্ত মনে করে বিনিয়োগের মাধ্যমে লোকসানে পড়েন, তখন মনে করেন এর জন্য অন্য কেউ দায়ী।
মিউচ্যুয়াল ফান্ড থেকে লভ্যাংশ নিয়েও ভুল ধারনা আছে বলে জানান তিনি। এই ফান্ড মূলত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে। কাজেই তার লভ্যাংশ সক্ষমতা আসে শেয়ারবাজার থেকে। এই বাজার ভাল না করলে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের জন্য লভ্যাংশ দেওয়া কঠিন। এটাই মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইমেজ সংকটের প্রধান কারণ।
ড. হাসান ইমাম বলেছেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড সেক্টরের কাঠামোগত বা আইনগত কোন সমস্যা নেই। আসল সমস্যা শেয়ারবাজারের দীর্ঘমেয়াদী মন্দা। যাতে মিউচ্যুয়াল ফান্ড সেক্টর ভাল লভ্যাংশ দিতে পারছে না।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেনসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটাল পার্টনার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাফিজ আল তারিক।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান