অনুপ সর্বজ্ঞ : দেশে ব্যবসায়রত বহুজাতিক জীবন বীমা কোম্পানি মেটলাইফকে দেশীয় নীতিমালার আওতায় আনতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এজন্য বীমা আইন ২০১০-এর ২১ ধারা ও তফসিল ১ পর্যালোচনা করছে সংস্থাটি।
বীমা আইনের ২১ ধারার (১) উপ-ধারায়ায় বলা হয়েছে, এই আইন কার্যকর হবার পূর্বে বাংলাদেশে যেকোনো শ্রেণির বীমা ব্যবসায় নিয়োজিত ছিল এমন বীমা কোম্পানি ছাড়া, অন্য কোন বীমা কোম্পানি এই আইন কার্যকর হবার পর কোন শ্রেণির বীমা ব্যবসার জন্য নিবন্ধীকৃত হবে না, যদি তার তফসিল ১ এ বিধৃত পরিমাণ পরিশোধিত মূলধন না থাকে এবং তার শেয়ারসমূহ বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি অনুযায়ী পরিশোধিত না হয়ে থাকে।
তবে শর্ত হলো, সরকার প্রয়োজনে সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ বৃদ্ধি বা হ্রাস করতে পারবে।
এখানে আরো শর্ত দেয়া হয়েছে যে, উদ্যোক্তারা নিবন্ধনের আবেদন করার পূর্বে পরিশোধিত মূলধনে তাদের নিজ নিজ অংশ দায় মুক্তভাবে বাংলাদেশের কোন তফসিলি ব্যাংকে কোম্পানির নামে জমা করবেন এবং এই অর্থ দায়মুক্তভাবে জমা হিসাবে থাকবে।
একই ধারার (২) উপধারায় বলা হয়েছে, বীমা কোম্পানি কর্তৃক নিবন্ধনের আবেদন দাখিলের পর বা ভবিষ্যতে কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি ছাড়া উপধারা (১) এ বর্ণিত পরিশোধিত মূলধন থেকে অর্জিত সুদ ছাড়া কোন অর্থ উত্তোলন করা যাবে না। এবং কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি ছাড়া পরিশোধিত মূলধনের উপর কোনরূপ লিয়েন লিপিবদ্ধ করা যাবে না।
এছাড়া উপধারা (৩) অনুযায়ী, এই আইন প্রবর্তনের পূর্বে বাংলাদেশে বা বাংলাদেশের বাহিরে নিগমিত কোন বীমা কোম্পানিকে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি ও সময়সীমার মধ্যে উপধারা (১) এর অধীনে তার মূলধন থাকার শর্ত পূরণ করতে হবে।
এদিকে বীমা আইনের তফসিল ১ এর (অ) তে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নিবন্ধিত জীবন বীমা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন হবে ন্যূনতম ৩০ কোটি টাকা, যার ৬০ শতাংশ উদ্যোক্তা কর্তৃক প্রদত্ত হবে ও ৪০ শতাংশ জনসাধারণ কর্তৃক প্রদানার্থে উন্মুক্ত থাকবে।
একইসঙ্গে তফসিল ১ এর (আ) তে বাংলাদেশের বাইরে নিবন্ধিত কোম্পানির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ন্যূনতম ৩০ কোটি টাকা বাংলাদেশের বাহির হতে তহবিল স্থানান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশে জমা প্রদান করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ সদস্য বোরহান উদ্দীন আহমেদ দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে বলেন, মেটলাইফকে দেশীয় নীতিমালার মধ্যে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এজন্য আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।
আইডিআরএ বলছে, বাংলাদেশে বীমা ব্যবসা করতে এক পয়সাও এ দেশে নিয়ে আসেনি মেটলাইফ। অথচ কোটি কোটি ডলার মুনাফা করে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বীমা খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতেও কোনো ভূমিকা রাখছে না এই কোম্পানি। বাংলাদেশে মেটলাইফ শুধুই তাদের পণ্য বিপণন করছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না থাকায় এর ওপর বাংলাদেশের কোনো মালিকানাও নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইডিআরএ’র এক সদস্য বলেন, বিদেশি এ বীমা কোম্পানির জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের কোনো সুযোগ নেই। বীমা আইন, ২০১০-এর তফসিল-১-এর (ক) (অ) এবং (আ)-তে এই বিধান দেয়া আছে। সে কারণে সরকারের আগ্রহ থাকলেও মেটলাইফকে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা যাচ্ছে না। তবে প্রচলিত আইন পরিবর্তন করা হলে সুযোগ পাওয়া যেতে পারে।
বিদেশি এ বীমা কোম্পানিটি বাংলাদেশে ১৯৫২ সাল থেকে ব্যবসা করছে। ওই সময়ই এ কোম্পানিকে শাখা অফিস হিসেবে কাজ করার অনুমোদন দেয় তৎকালীন সরকার। পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর কোম্পানিটিকে দেশীয় নীতিমালার মধ্যে আনার উদ্যোগ নেয়নি কোনো সরকার। বীমা আইন ২০১০ পাস হলেও আইনি ত্রুটি ও অস্বচ্ছতার কারণে মেটলাইফ এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজারের বাইরে রয়ে গেছে। যদিও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে ব্যবসা করছে বিদেশি এ কোম্পানি। তাই দেশীয় নিয়মানুযায়ী এ দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য বিদ্যমান আইন সংশোধন বা প্রয়োজনে নতুন বিধি সংযোজনের উদ্যোগ নিয়েছে আইডিআরএ।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক জীবন বীমা কোম্পানি মেট্রোপলিটন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বা মেটলাইফ অধিগ্রহণ করে তৎকালীন অ্যালিকোকে। তখন এর নতুন নামকরণ হয় মেটলাইফ অ্যালিকো। ২০১৫ সালের শুরুতে বাংলাদেশে কোম্পানিটির নতুন নামকরণ হয় মেটলাইফ। দেশের জীবন বীমার বাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ এখন মেটলাইফের দখলে। বাংলাদেশে কোম্পানিটির গ্রাহকসংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান