সাইফুল শুভ : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে প্রথমবার লভ্যাংশ ঘোষণায় বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে ‘রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড’। লভ্যাংশ ঘোষণার পর উল্টো পথে চলেছে রানারের শেয়ার দর। সাম্প্রতিক সময়ে প্রাথমিক গণ-প্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই এমন হতাশাজনক লভ্যাংশ ঘোষণা করলো। কাক্সিক্ষত লভ্যাংশ না পাওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার শেয়ারের দর পড়েছে ২ টাকা ২০ পয়সা। শতকরা হিসাবে কমেছে ২.৮১ শতাংশ। অথচ গতকাল কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য থাকায় দর বৃদ্ধির কোনো সার্কিট ব্রেকার ছিল না। কিন্তু লভ্যাংশ ঘোষণার উপর উল্টো পথে চলেছে রানারের শেয়ার দর।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা যায়, রানার অটোমোবাইলস গত ৩০ জুন ২০১৯ তারিখে সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটি আলোচিত বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার মধ্যে ১০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস। সর্বশেষ অর্থবছরে (২০১৮-২০১৯) রানার অটোমোবাইলস শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) করেছে ৫ টাকা ০৭ পয়সা। এবং ৩০ জুন ১৯ শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ৬৫ টাকা ৪৯ পয়সা।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, পুঁজিবাজারে আসার আগে যেসব সম্ভাবনা দেখায় বাজারে আসার পর যদি তার অর্ধেকও বাস্তবায়ন হতো তাহলে বিনিয়োগকারীরা ভালো লভ্যাংশ পেতো। রানারের মোটরসাইকেল দেশের গন্ডি পার হয়ে বিদেশে রফতানি হচ্ছে এমন সম্ভাবনাময় কোম্পানি দায়সারা লভ্যাংশ ঘোষণা করলে বাজারের উপর আস্থা আরও কমবে। সরকারের পক্ষ থেকে যতই উদ্যোগ নেয়া হো না কেন- পুঁজিবাজার ভালো হবে না।
উল্লেখ্য, কোম্পানিটি গত বছরে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় আইপিওগুলোর মধ্যে রানার অটোমোবাইলস একটি। কোম্পানিটি দেশে-বিদেশে ব্যবসা করে ভালো মুনাফার স্বপ্ন দেখিয়ে পুঁজিবাজারে এসেছিল।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ড. ফজলুল হক ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘রানার অটোর লভ্যাংশ খুবই হতাশাজনক। তারা চাইলে ৩০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ শেয়ার লভ্যাংশ দিতে পারতো। ইপিএস ৫ টাকা ০৭ পয়সা। অথচ একদিন আগেই বিএসআরএম স্টিল ৪ টাকা ৬০ পয়সা ইপিএস থেকে ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। আবার রানার তাদের পূর্বের আয় থেকে ৫ শতাংশ বোনাস দিয়েছে। এতে করে রানারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে। এটি গতকালের লেনদেনেও প্রতিফলিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘কোম্পানি বা কোনো কারসাজি চক্র কাজ করছে কি-না খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। বিনিয়োগকারীদের হতাশ করে চক্রটি তাদের বাজার থেকে শেয়ার কিনে নেবে। পরে আবার ভালো লভ্যাংশ দিয়ে আবার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করে দেবে। রানার বাংলাদেশের বাইরেও বিদেশে রফতানি করছে। তাহলে তাদের লভ্যাংশ দিতে সমস্যা কোথায়।’
কোম্পানির বিষয়ে জানতে ‘রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড’-এর চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে তিনি বলেন, ‘শেয়ারবাজার সম্পর্কিত তথ্য কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ভালো বলতে পারবে।’
তবে কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে সিএফও’র সঙ্গে দেখা করা যায়নি। এমনকি তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও কথা বলেননি।
এ বিষয়ে কোম্পানির গণসংযোগ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদ মুরাদের সাথে সাক্ষাত করা হলে তিনি অন্য আরেকদিন আসার পরামর্শ দেন।
দ্য ভিশন২৪/এসএ/খান