নিজস্ব প্রতিবেদক : শিগগিরই ২২১টি বন্ডকে লেনদেনযোগ্য করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে ২২১টি ট্রেজারি বন্ড আছে এবং সেগুলো তালিকাভুক্ত। তবে সেগুলো মার্কেটেবল না এবং লেনদেন হচ্ছে না। এগুলোকে লেনদেন করার জন্য এরইমধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাথে কমিশনার ড. বালার নেতৃত্বে কমিটি করে মিটিং করা হয়েছে। এতে অতি শিগগির ২২১টি বন্ডকে লেনদেনযোগ্য করা হবে।
গতকাল বুধবার ‘বাংলাদেশে গ্রীন বন্ডের পরিচিতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম।
খায়রুল হোসেন বলেন, সেমিনারটি করার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত আমাদের বন্ড মার্কেট একেবারেই ডেভোলপ নয়। বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আমাদের ৮.২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার। তবে এই প্রবৃদ্ধির হার স্থায়ী হবে না, যদি গ্রীন বন্ড মার্কেট উন্নয়ন না করি। তৃতীয় কারণটি হচ্ছে- কমিশন বন্ড মার্কেট উন্নয়নে একটি আইন করেছে।
তিনি বলেন, সচিব মহোদয় কমিশনকে গ্রীন বন্ডকে উন্নয়নের কথা বিবেচনার জন্য বলেছিলেন। তবে আমরা যেহেতেু বন্ড মার্কেট উন্নত করতে পারিনি, তাই গ্রীন বন্ড মার্কেট ধীরে ধীরে উন্নয়ন করার কথা বলেছি। এ সময় তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়ে উন্নয়নের কাজে লাগানো হচ্ছে। অথচ ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন করার কথা না। যে কারণে বর্তমানে ব্যাংকগুলোর অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। এছাড়া ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সুদ ও আসল না দেয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বন্ড মার্কেট অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম উৎস। যা বিশ্বের অন্যান্য দেশে আছে। কিন্তু আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারের উন্নয়নের কথা বললেও তারা শুধু ইক্যুইটি মার্কেট নির্ভরশীল। এছাড়া আমাদের বিনিয়োগকারীরা শিক্ষিত না হওয়ায় বারবার পুঁজি হারায়। আর দায়ভার দেয় কমিশনকে। আমরা তাদের জন্য ফিক্সড ইনকাম নির্ভর বন্ড ও অন্যান্য বিষয়গুলো চালু করতে পারি। এরফলে তারা নির্দিষ্ট হারে রিটার্ন পাবে।
তিনি বলেন, কমিশন নতুন একটি প্রাইভেট প্লেসমেন্ট এবং পাবলিক ইস্যু বন্ড মার্কেটের রুলস প্রণয়নের জন্য কাজ করছে। এছাড়া বন্ড মার্কেট কেনো উন্নত হচ্ছে না, তার কারণগুলো চিহ্নিত করে সরকারকে অবহিত করেছি। এর পরিপেক্ষিতে এরইমধ্যে স্ট্যাম্প ডিউটি সুবিধা দিয়ে সার্কুলার জারি করা হয়েছে। যেখানে ২ শতাংশ স্ট্যাম্প ডিউটির জায়গায় ০.১ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৫ হাজার এবং ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হবে। আরো কিছু ট্যাক্স ইনসেনটিভ দেয়ার কথা। তবে যেসব ট্যাক্স ইনসেনটিভ বন্ড মার্কেটকে দেয়া প্রয়োজন, সেগুলো যেন অধিক গুরুত্ব পায়।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বন্ড মার্কেট এবং গ্রীন বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের নীতিমালা আমরা তৈরি করবো। একইসঙ্গে ক্যাপিটাল মার্কেট উন্নয়নের নীতিমালা তৈরি হবে। কাজেই দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ক্ষেত্রে এবং জিডিপি বাড়ানোর জন্য বন্ড মার্কেটের পাশাপাশি গ্রীন বন্ড মার্কেট উন্নয়ন করতে হবে। এছাড়া ২১০০ সালের জন্য যে ডেল্টা প্লানের কথা বলে হয়েছে, সে ডেল্টা প্লানটি বাস্তবায়িত করতে হলে গ্রীন বন্ড ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসইসির পরিচালক মো. রেজাউল করিম। এতে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) এক প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আইএফসি ধারণা করছে, ২০১৮ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ক্লাইমেট স্মার্ট ইনভেস্ট অপোরচুনিটি হবে ১৭২ বিলিয়ন ইএস ডলার। তারা মনে করছে, এই বিনিয়োগটা আমাদের দরকার হবে।’
তিনি বলেন, ‘২৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার দরকার পড়বে আমাদের গ্রিন ট্রান্সপোর্ট, ট্রান্সপোর্ট অবকাঠামোর ক্ষেত্রে। সরকার বিআরটিসি বা অন্য প্রতিষ্ঠানকে যে টাকা দিচ্ছে, সেটা একদম ফ্রি না দিয়ে অন্তত এক শতাংশ হলেও গ্রিন বন্ড ইস্যু করার জন্য বলা প্রয়োজন। তাতে স্বচ্ছতাও বাড়বে।’
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান