বিশেষ প্রতিবেদক: প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) অনুমোদন পাওয়া অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন নিয়ে কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। ১৫ কোটি টাকার ইস্যুর অন্তরালে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে কারসাজি চক্র। আর বিনিয়োগকারী তথা পুঁজিবাজারের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আগেই বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তথ্যানুন্ধানে জানা যায়, অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেনকে দুই দিক থেকে বেনামে নিয়ন্ত্রণ করছেন দুইজন। কোম্পানির ব্যবসায়িক পরিচালনায় নিজের ভাই-ভাবিকে চেয়ারম্যান এমডি বানিয়ে আড়ালে নিয়ন্ত্রণ করছে ঋণ খেলাপি এবং দুদক মামলার আসামী মুহা. আসলাম চৌধুরী। অন্যদিকে এ কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ছক এঁকেছেন এনআরবি ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের বেনামে নিয়ন্ত্রণকারী ও বিএসইসির ৫ বছর নিষিদ্ধ থাকা কাজী সাইফুর রহমান (এফসিএ)।
জানা যায়, আসলাম চৌধুরী বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় ৬,০০০ কোটি টাকা ঋণখেলাপি। এছাড়া অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন ও এর প্যারেন্ট কোম্পানি ও সহযোগি কোম্পানীগুলো ডিফল্টার হলেও প্রসপেক্টাসে তা গোপন করা হয়েছে। এছাড়া মুহা. আসলাম চৌধুরী, তার স্ত্রী জামিলা নাজনীন মওলা ও ভাই আমজাদ চৌধুরী দুদক মামলার আসামী। এবি ব্যাংক,চট্টগ্রাম শাখার এক মামলায় ৩২৫ কোটি এবং সাউথইষ্ট ব্যাংক চট্টগ্রাম,হালিশহর শাখার আরেক মামলায় ১৩৫.৮ কোটি অর্থ আত্মসাতের মামলা রয়েছে। অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেনের চেয়ারম্যান
নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, আসলাম চৌধুরীর আপন ভাই এবং বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমত জাহান আসলাম চৌধুরীর আপন ভাবী। তাদের সকলের বাসার ঠিকানা একই। অর্থাৎ এরা সকলে একই বাসায় জয়েন্ট ফ্যামিলি হিসেবে অবস্থান করছে। কিন্তু প্রসপেক্টাসে এ সম্পর্কগুলো আড়াল করা হয়েছে।
এদিকে, বিতর্কিত এ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের পুরো ম্যাকানিজম করেছেন কাজী সাইফুর রহমান। ৪০ কোটি টাকার মূলধনের কোম্পানিকে ৮০ কোটি টাকার ভুঁয়া পেইড আপের কোম্পানি বানিয়েছেন কাজী সাইফুর রহমান। তিনি KSR & Co. এর স্বত্তাধিকারী। কাজী সাইফুর রহমান প্রায় ২০ কোটি টাকার শেয়ার উনি উনার বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের নামে নিয়েছেন। প্রতিটা শেয়ার হোল্ডারদের টাকার উৎস, ব্যাংকিং ট্রানজেকশন ভুঁয়া লেনদেন করা হয়েছে। একই টাকা বার বার ঘুরিয়ে তার আত্বীয়দের নামে শেয়ার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যেখানে অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন শেয়ারবাজারে ১ কোটি ৫০ লাখ শেয়ার ছাড়ছে, সেখানে কাজী সাইফুর রহমান একাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও আত্মীয় স্বজনের নামে ১ কোটি ৮৬ লাখ প্লেসমেন্ট শেয়ার ধারণ করে আছেন। অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেনকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করিয়ে এক বছরের মধ্যে শেয়ার দর বৃদ্ধি করে নিজেরগুলো বিক্রি করে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার টার্গেট করছে। কাট্টলি টেক্সটাইলের ভুঁয়া আইপিও আনাসহ তালিকাভুক্ত বেশকিছু কোম্পানির কারসাজি করে বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হয়েছের কাজী সাইফুর রহমান।
এ ব্যাপারে কাজী সাইফুর রহমানের সঙ্গে গত দুই সপ্তাহ ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোন কথা বলতে চান না। অন্যদিকে কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হতে হয়।
এ ব্যাপারে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী জানান, ‘২০১০ এর পর এটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনেকে লস খেয়েছিল। ইদানিং এ মাত্রটা আরও বেশি চোখে পড়ার মতো। ব্রোকারেজ মার্কেট গুলোতে ঘুরছে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করার জন্য। আপনি হয়তো দেখছেন সেকেন্ডারি মার্কেটে লাভ হচ্ছে না; কেউ একজন বললেন, আপনি প্লেসমেন্ট শেয়ার কিনেন তাহলে নিশ্চিত লাভ করতে পারবেন। কিন্তু এটা ভুলে যাচ্ছে যে, সেকেন্ডারি মার্কেটে এটা যার কাছে বিক্রি করবে; একদিন এটা ড্রাই হয়ে যাবে পরে; সে লোকটাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
আর বেপরোয়া হারে প্লেসমেন্ট বিক্রি করা অনেক কোম্পানির উদ্দেশ্য কারসাজি করা বলে জানান শাকিল রিজভী।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান