শেয়ারবাজারের কাঠামোগত উন্নয়নে সরকারের নতুন পরিকল্পনা

সময়: রবিবার, মে ১৮, ২০২৫ ৯:৪৩:৪৬ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজারে বিদ্যমান কাঠামোগত সমস্যাগুলোর সমাধান করে বাজারকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল ও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও শেয়ারবাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী।

শনিবার (১৮ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পরিদর্শন শেষে অংশীজনদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। সভায় বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনার মো. মহসিন চৌধুরী ও মো. আলি আকবর, শেয়ারবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য, ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদ, ডিবিএ, সিডিবিএল, সিসিবিএলসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বাজারের বিভিন্ন কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার স্বাধীনতা, আইপিও প্রক্রিয়ার ডিজিটালাইজেশন, করপোরেট বন্ড ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সহজীকরণ, ইনসাইডার ট্রেডিং রোধ, সার্ভেইল্যান্স জোরদার এবং বাজারের জন্য কার্যকর নীতিগত সহায়তার ঘাটতি এখন প্রধান সমস্যা।

ডিএসই জানায়, বাজারে আস্থা সংকটের পেছনে সরকারি সিকিউরিটিজে উচ্চ সুদের হার, করপোরেট মুনাফার হ্রাস, নেগেটিভ ইক্যুইটি, টাকার অবমূল্যায়ন এবং কারসাজিকারীদের প্রভাব বড় কারণ।

আস্থা ফেরাতে প্রস্তাবিত কার্যক্রম:
বিও হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ ফি মওকুফ

ব্যক্তি বিনিয়োগকারীর ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স মওকুফ

ব্রোকারেজ কমিশন ০.৫% থেকে কমিয়ে ০.৩৫%

এক লাখ টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ করমুক্ত

উৎসে কাটা কর চূড়ান্ত কর বিবেচনায় আনা

নেগেটিভ ইক্যুইটি ধীরে ধীরে প্রভিশনিং

আগাম আয়কর ৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫ টাকা

মাসিকভাবে নিয়ন্ত্রক ও মধ্যস্থতাকারীদের যৌথ বৈঠক

তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান কমপক্ষে ১০%

লাভজনক কোম্পানি তালিকাভুক্তির তাগিদ

কর্পোরেট বন্ডের অ্যাসেট ব্যাকড সিকিউরিটিজ করমুক্ত ঘোষণা

বড় ঋণপ্রাপ্ত কোম্পানির জন্য শেয়ারবাজার থেকে মূলধন উত্তোলন বাধ্যতামূলক করা

সরকারি পরিকল্পনায় শেয়ারবাজারের ভূমিকা:
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শেয়ারবাজার ব্যবহার জরুরি। এজন্য তিনি প্রস্তাব করেন:

লাভজনক কোম্পানিতে সরকারের বিনিয়োগ প্রত্যাহার

ব্যাংক, বীমা, বিমানসহ কোম্পানিগুলো বেসরকারীকরণ

সরকারি সম্পদ সিকিউরিটাইজ করে বাজারে তালিকাভুক্তি

সরকারি জমিতে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট (REIT) চালু

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বন্ড ইস্যু করার সুযোগ তৈরি

সরকার আন্তরিক ও সহায়ক থাকবে:
ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, প্রধান উপদেষ্টা দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ, মুদ্রানীতি স্থিতিশীলকরণসহ বেশ কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। এর প্রভাব অচিরেই শেয়ারবাজারে পড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তিনি জানান, শেয়ারবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সুপারিশের আলোকে পাবলিক ইস্যু রুলস দ্রুত সংস্কার করা হবে, যা ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি সহজ করবে। বাজার সংশ্লিষ্ট যে সমস্যাগুলো সংশ্লিষ্ট সংস্থার আওতায়, তা দ্রুত সমাধান করা হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে এবং সরকার পূর্ণ সহযোগিতা দেবে।

সভায় অংশীজনরা শেয়ারবাজার কাঠামো, এসএমই ও এটিবি মার্কেট, বিও অ্যাকাউন্ট বৃদ্ধি, বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ানো, আইন সংস্কার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড উন্নয়ন, করহারের ভারসাম্য আনা, নীতিগত সহায়তা ও আর্থিক সাক্ষরতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

কমিটি গঠনের পটভূমি:
উল্লেখ্য, গত ১৭ মার্চ ২০২৫ তারিখে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে শেয়ারবাজার সংস্কার ও বিএসইসি শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম. সাদেকুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব মো. সাঈদ কুতুব এবং বিএসইসি কমিশনার ফারজানা লালারুখ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সরকার ও অংশীজনদের এমন উদ্যোগ ও সমন্বয় ভবিষ্যতে শেয়ারবাজারে আস্থা ফেরাতে সহায়ক হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Share
নিউজটি ৪৬ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged