নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদুল আজহার ১০ দিনের দীর্ঘ ছুটির পর রবিবার (১৫ জুন) দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সম্ভাবনাময় খবর এবং মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধাবস্থার জটিলতায় দিনের শুরুতে বাজারে দেখা দেয় চাপ, তবে দিন শেষে সূচকের ঘুরে দাঁড়ানো কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে।
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের খবরে দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ খবরটি বিনিয়োগকারীদের মাঝে দীর্ঘমেয়াদী আস্থার বার্তা দেয়। কিন্তু অন্যদিকে, ইরান-ইসরায়েল সরাসরি সংঘর্ষের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা ও তেলের দামের অস্থিরতার আশঙ্কা বিনিয়োগকারীদের শঙ্কিত করেছে।
ফলে লেনদেনের শুরুতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ২৫ পয়েন্টের বেশি পড়ে যায়। তবে আধাঘণ্টা পরই বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত আগের দিনের তুলনায় সূচক ২৬ পয়েন্ট বেড়ে যায়। যদিও পরবর্তীতে সূচক সামান্য অ্যাডজাস্ট হয়ে ১৫ পয়েন্টের মতো উত্থানে স্থির হয়।
ডিএসইতে আজ ৩৯২টি কোম্পানির লেনদেনের মধ্যে ১৪৫টির শেয়ারদর বেড়েছে, আর ১৭৯টির কমেছে, বাকি ৬৮টি ছিল অপরিবর্তিত। যদিও সূচকে উত্থান দেখা গেছে, কোম্পানির সংখ্যার দিক থেকে দাম কমার হার ছিল বেশি।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) তুলনামূলকভাবে বেশি কোম্পানির দর বেড়েছে। পাশাপাশি উভয় এক্সচেঞ্জেই লেনদেনের পরিমাণ আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে, যা বাজারে ধীরে ধীরে আস্থা ফিরে আসার ইঙ্গিত দিতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা কমার সম্ভাবনা দীর্ঘমেয়াদে বাজারকে ইতিবাচক প্রভাব দিতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত তেলের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, যার প্রভাব আমদানিনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়বে। ফলে বিনিয়োগকারীরা এখনো সতর্ক ভঙ্গিমায় লেনদেন করছে।
আজ (১৫ জুন) ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৪.৯১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭২৪ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস ০.২৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৮.৬৬ পয়েন্টে। আর ডিএসই-৩০ সূচক ৯.১৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৭৭১.৫৪ পয়েন্টে।
আজ ডিএসইতে মোট ৩৯২টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে ১৪৫টির দর বেড়েছে, ১৭৯টির দর কমেছে এবং ৬৮টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
ডিএসইতে আজ মোট ২৬৩ কোটি ২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২২৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকার। আগের দিনের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৩৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) আজ ১০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগেরদিন সিএসইতে ১০ কোটি ১২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছিল।
আজ সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৪৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৭১টির, কমেছে ৫৩টির এবং পরিবর্তন হয়নি ২২টির।
এদিন সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪৫.৪৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ১৮৫.৩২ পয়েন্টে। আগেরদিন সূচক সিএএসপিআই ৪৮.৬৩ পয়েন্ট বেড়েছিল।
রাজনৈতিক শান্তির ইঙ্গিত শেয়ারবাজারে আশাবাদের আলো জাগালেও, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বিনিয়োগকারীদের মনোভাবকে চাপে রেখেছে। তবে দিনের শেষে সূচকের ঘুরে দাঁড়ানো বাজারে স্থিতিশীলতার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছে, যা সামনের দিনগুলোতে বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।