দেশের শেয়ারবাজার ভালোভাবে চলছে না। গতকাল এ-সংক্রান্ত উদ্বেগজনক সংবাদ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যতই দিন যাচ্ছে শেয়ারবাজারে দরপতন ততই ব্যাপকতা লাভ করছে। বিশ্লেষকগণ মনে করছেন, এখনই এ অনাকাক্সিক্ষত দরপতনের কারণ খুঁজে বের করে তার প্রতিকারে উপযুক্ত ব্যবস্থা গৃহীত না হলে পরিস্থিতি যে কোনো সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। গত রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এ তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বাজার মূলধন কমেছে ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি। একইসঙ্গে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৭৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬১ শতাংশ। বড় ধরনের দরপতনের কারণে প্রধান সূচক নেমে এসেছে ৪ হাজার ৫৯৬ পয়েন্টে। এটা গত তিন বছরের মধ্যে সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থা। ২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবর এই সূচক ৪ হাজার ৫৯২ পয়েন্টে নেমে এসেছিল। গত রোববার তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৪৮ হাজার ২৩৪ টাকা। আগের কর্মদিবসে যার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা। গত এক সপ্তাহ ধরেই শেয়ারবাজারের অবস্থা ভালো যাচ্ছিল না। কিন্তু রোববার যে দরপতন হয়েছে, তা কিছুটা হলেও বিস্ময়কর এবং উদ্বেগজনক। সাধারণত ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকগুলোর বার্ষিক হিসাব সমাপনির কারণে তারা শেয়ারবাজার ছেড়ে দিয়ে পুঁজি তুলে নেবার চেষ্টা করে। এ কারণে এ সময় শেয়ারবাজারে কিছুটা মন্থর ভাব লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এবার যেভাবে শেয়ারবাজারে দরপতন ঘটছে তা কোনোভাবেই স্বাভাবিক মনে করা যায় না। বাজারে লেনদেনের পরিমাণও কমে গেছে। কিন্তু ডিএসই’র পরিচালক রকিবুর রহমান অবশ্য বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, সম্প্রতি পুঁজিবাজারে যে ধরনের দরপতন অব্যাহত রয়েছে তার বিশেষ কোনো কারণ আমার আছে বলে মনে করি না। আমি বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধারণ করতে বলবো। বিনিয়োগকারীরা ধৈর্যহারা হয়ে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে দিলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পাশাপাশি বাজারও তার স্বরূপে ফিরে আসবে না। কিন্তু তার এ আশ্বাসবানী বিনিয়োগকারীদের কোনোভাবেই আশ্বস্ত করতে পারছে না। কারণ তাদের অতীত অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। ২০১০ অথবা ১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজারে যখন বড় ধরনের ধ্বংসের ঘটনা ঘটে তখনও বিনিয়োগকারীদের এভাবেই আশ্বস্ত করা হয়েছিল। সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এক কর্ম দিবসে সূচক এক শতাংশ বা তারও বেশি পতন হলে তাকে বড় ধরনের দরপতন বলা যেতে পারে। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষের উচিৎ কি কারণে এ দরপতন ঘটছে তা খতিয়ে দেখা। কোনো কারণেই বিষয়টি উপেক্ষা করা যাবে না।
দুঃখজনক হল্যে সত্যি যে, আমাদের দেশের শেয়ারবাজার কখনোই খুব একটা ভালো চলেনি। বিশ্বের সব শেয়ারবাজারেই উত্থান পতন থাকে। কিন্তু সেই উত্থান পতনের যৌক্তিক কারণ থাকে। কিন্তু আমাদের এখানে বাজার যেন কোনো নিয়মনীতি না মেনেই চলছে। অনেকেই অভিযোগ করেন, একটি মহল শেয়ারবাজারে তৎপর রয়েছে, যারা সুযোগ পেলেই শেয়ারের দাম বাড়িয়ে অথবা কমিয়ে ফায়দা লুটে নেয়। আমরা বলছি না যে, এবারো সে রকম হচ্ছে। তবে বাজারের এ অস্বাভাবিক উত্থান পতনের বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা যেতে পারে, যাতে বাজার নিয়ে কেউ নোংড়া খেলায় মেতে উঠতে না পারে। সমস্যার শুরুতেই প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিলে সমস্যা খুব একটা গভীরে যেতে পারে না। কথায় বলে, সময়ের এক ফোঁড় আর অসময়ের দশ ফোঁড়। তাই সময় থাকতেই আমাদের সাবধান হতে হবে।
শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন কিসের আলামত
সময়: মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯ ১০:৩৪:৩৯ পূর্বাহ্ণ