অনুপ সর্বজ্ঞ : বীমা খাতে বড় অংকের দাবি পরিশোধ নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে গ্রাহকরা সরাসরি অভিযোগ করেন বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটিতে। তবে কমিটি থেকে যে রায়গুলো দেয়া হয় তার বাস্তবায়ন পদ্ধতির উল্লেখ নেই প্রবিধানমালায়। এ সমস্যা সমাধানে ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি) প্রবিধানমালা ২০১২’ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সূত্রে জানা গেছে, বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটির রায় অনুযায়ী কোন বীমা কোম্পানি যদি দাবি পরিশোধ না করে, তবে তার বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবেÑ তা সুনির্দিষ্ট করা হবে প্রবিধানমালায়। একই সঙ্গে রায়ে সংক্ষুব্ধ পক্ষ কোন পদ্ধতিতে কোন আদালতে আপিল করবে, তা-ও বলা হয়নি প্রবিধানমালায়। এ বিষয়টিও সুনির্দিষ্টকরণের উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ সদস্য বোরহান উদ্দীন আহমেদ ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’- কে বলেন, ‘বেশ কিছু বিষয়ে প্রবিধানমালায় সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। তাই প্রবিধানমালাটি স্পষ্টিকরণের জন্য এ সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংশোধনীগুলো প্রথমে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো হবে। পরবর্তীতে তা আইন মন্ত্রণালয় হয়ে এসে পাঠানো হবে জাতীয় সংসদে। আশা করছি দ্রুত এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’
জানা গেছে, জীবন বীমার ক্ষেত্রে যেকোনো সংক্ষুব্ধ গ্রাহক ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বীমা দাবি নিষ্পত্তির আবেদন করতে পারবেন আইডিআরএ-তে। সাধারণ বীমার (নন-লাইফ) ক্ষেত্রে এ পরিমাণ সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। উভয় ক্ষেত্রে দাবির পরিমাণ এর বেশি হলেই আবেদন করতে হবে বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটিতে।
আইডিআরএ সূত্র জানায়, এ আবেদন করতে হবে ‘বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি’র চেয়ারম্যান বরাবর। তবে আবেদনের সঙ্গে আবেদনকারীকে অবশ্যই মোট বীমা দাবির ২ শতাংশ টাকা পে-অর্ডার বা ডিডি করে আইডিআরএ বরাবর জমা দিতে হবে। ‘বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি’ এরপর উভয়পক্ষকে শুনানিতে ডেকে একটি সিদ্ধান্ত দেবে। তবে কমিটির সিদ্ধান্তে কোনো পক্ষ অসন্তুষ্ট হলে তিনি এর বিরুদ্ধে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে উপযুক্ত আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবেন। ‘বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি’ আইডিআরএ’র বলয়ের বাইরে এসে স্বাধীনভাবে কাজ করবে।
জানা যায়, বীমা কোম্পানি ও গ্রাহকের মধ্যে উদ্ভুত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কর্তৃপক্ষ একজন চেয়ারম্যান, পদাধিকার বলে সদস্য ও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনোনীত অন্যান্য তিনজন সদস্যের সমন্বয়ে ‘বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি’ নামে এক বা একাধিক কমিটি গঠন করবে। কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত পদাধিকারবলে সদস্য কমিটিকে সহায়তা করবেন। তবে তার কোনো ভোটাধিকার থাকবে না।
চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, মেয়াদ, পদত্যাগ ও অপসারণের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, নির্ধারিত প্রবিধানের অধীনে গঠিত কমিটিতে চেয়ারম্যান হবেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বা জেলা জজ হিসেবে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অবসরপ্রাপ্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা। যার বীমা আইনসহ বিভিন্ন আইনের বিষয়ে ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে। পদাধিকারবলে সদস্যসহ অন্য তিনজন সদস্য হবেন কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় বীমা বিজ্ঞান, একচ্যুয়ারিয়াল বিজ্ঞান, অর্থনীতি, আইন বা হিসাব বিজ্ঞানে ব্যবহারিক ও বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন ব্যক্তি। কোন ব্যক্তি দেউলিয়া ঘোষিত হলে বা কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় নৈতিক স্থলনজনিত কোনো অপরাধে শাস্তিপ্রাপ্ত হলে কমিটির সদস্য হিসেবে নিয়োগ পাবার যোগ্য হবেন না বা সদস্যপদে বহাল থাকবেন না।
কর্তৃপক্ষের পদাধিকার বলে সদস্য ব্যতীত চেয়ারম্যান এবং অন্য তিনজন সদস্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত শর্তাদি মোতাবেক নিয়োগের তারিখ হতে তিন বছর মেয়াদের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন এবং মেয়াদ শেষে পরবর্তী এক বা একাধিক মেয়াদের জন্যও পুনরায় নিয়োগপ্রাপ্তির যোগ্য হবেন।
সদস্যদের পারিশ্রমিকের বিষয়ে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ পদাধিকারবলে সদস্য ব্যতীত কমিটির চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যদেরকে প্রতি অধিবেশনের জন্য তিন হাজার টাকা প্রদান করা হবে।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান
সংশোধন হচ্ছে বীমা দাবি বিরোধ নিষ্পত্তি প্রবিধান
সময়: মঙ্গলবার, অক্টোবর ২২, ২০১৯ ৯:১২:০১ পূর্বাহ্ণ