অনুপ সর্বজ্ঞ : দেশে প্রয়োজনের তুলনায় অ্যাকচুয়ারির সংখ্যা খুবই নগণ্য। এ অবস্থায় বিদেশি অ্যাকচুয়ারিরা ভ্যালুয়েশন সেবা দেয়ার জন্য যোগাযোগ শুরু করেছে দেশের বীমা খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্স্যুরেন্স ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ)। বিদেশি অ্যাকচুয়ারিরা যেনো এ দেশের বীমা বাজার দখলে নিতে না পারে সেজন্য সরকারিভাবে অ্যাকচুয়ারি তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এরই অংশ হিসেবে একটি নতুন প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে আইডিআরএ।
আইডিআরএ’র সদস্য গকুল চাঁদ দাস দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে বলেন, যেখানে আমাদের দেশে এতো চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট রয়েছেন, সেখানে অ্যাকচুয়ারি না পাওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক। বিদেশি অ্যাকচুয়ারিরা যদি এ দেশে ভ্যালুয়েশন সেবা দিতে শুরু করে তাহলে তা অবশ্যই আমাদের জন্য ইতিবাচক নয়।
গকুল চাঁদ বলেন, এ দেশে মেধার কোন অভাব নেই। অ্যাকচুয়ারি তৈরির জন্য আমরা একটি প্রকল্প নিতে চাই। এতে অর্র্থায়নের আগ্রহ প্রকাশ করেছে এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট (ডিএফআইডি)। আমরা বেসরকারি বিশ্যবিদ্যালয়গুলোর সঙ্গেও কথা বলছি। তারা বাইরের যেকোন অ্যাকচুয়ারিয়াল সোসাইটির সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে এ কাজটি করতে পারবে।
আইডিআরএ’র তথ্য অনুযায়ী, এ প্রকল্পের আওতায় অন্তত একশ’ জন শিক্ষার্থীকে অ্যাকচুয়ারিয়াল বিষয়ে পড়ার সুযোগ করে দেয়া হবে। এর মধ্যে যারা কোর্স সম্পন্ন করতে পারবে তারা সরকারের সঙ্গে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ থাকবেন, এ সময়ের মধ্যে তারা দেশের বাইরে স্থায়ী হতে পারবেন না। বাধ্যতামূলকভাবে দেশীয় কোম্পানিগুলোকেই অ্যাকচুয়ারিয়াল সেবা দেবেন তারা।
বিষয়টি নিয়ে গত মাসে বীমা খাতের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গেও আলোচনা করেছে আইডিআরএ। বেসরকারি কোম্পানিগুলো থেকেও এ প্রকল্পে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুল আলম শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে বলেন, অ্যাকচুয়ারি তৈরির উদ্যোগের বিষয়ে বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আাইডিআরএ আলোচনা করেছে। এটা অবশ্যই ভালো একটি উদ্যোগ। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর সাহায্য করা উচিৎ।
জীবন বীমা কোম্পানির ব্যবসায়িক চিত্র পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশনের বেসিস তৈরি করেন একজন অ্যাকচুয়ারি (সম্পদ ও দায় নিরূপনকারী)। এছাড়া জীবন ও সাধারণ উভয় ধরণের বীমা প্রতিষ্ঠানের পলিসি ডিজাইন করেন তারা। বীমা ব্যবসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সত্বেও দেশে অনুমোদন প্রাপ্ত পূর্ণাঙ্গ কোন অ্যাকচুয়ারি নেই। মূলত নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে অনুমোদন প্রাপ্ত মাত্র একজন অ্যাসোসিয়েট অ্যাকচুয়ারি দিয়ে কাজ চালাচ্ছে বীমা কোম্পানিগুলো। সম্প্রতি দেশীয় বীমা কোম্পানিগুলোকে অ্যাকচুয়ারিয়াল সেবা দিতে যোগাযোগ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাকচুয়ারিয়াল ফার্ম মিলিমান। দেশে প্রতিষ্ঠানটির পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন একাডেমি অব লার্নিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং আইডিআরএ’র সাবেক সদস্য সুলতান উল আবেদীন মোল্লা। আগামী মাসে বীমা কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তাদের (সিএফও) সঙ্গে দেশের অ্যাকচুয়ারিয়াল অ্যাক্টিভিটিজ নিয়ে একটি সেমিনার করবে বিদেশি এ প্রতিষ্ঠান। সেমিনারে মিলিমানের পক্ষে উপস্থিত থাকবেন তাদের সিঙ্গাপুর অফিসের প্রতিনিধি কার্লস কার্নিয়ারো ও ভারতের মুম্বাই অফিসের প্রতিনিধি সংকেত কাওথার। জানা গেছে, বিশ্বের ১৫৮ টি দেশে অ্যাকচুয়ারিয়াল সেবা দিয়ে যাচ্ছে মিলিমান।
বীমা খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, একেকটি কোম্পানির ভ্যালুয়েশনের জন্য একজন অ্যাকচুয়ারি পেয়ে থাকেন ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা, বিশেষ ক্ষেত্রে এর পরিমাণ আরও বেশি হয়। দেশে অ্যাকচুয়ারি সংকট দূর করতে ২০০৪ সালে ইনস্টিটিউট অব অ্যাকচুয়ারিস অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ বীমা একাডেমি (বিআইএ)। তবে চুক্তির ১৫ বছরেও কোনো অ্যাকচুয়ারি পায়নি বাংলাদেশ।
আইডিআরএ বলছে, অ্যাসোসিয়েট সোহরাব উদ্দীন ছাড়াও দেশে বর্তমানে দু’জন পূর্ণাঙ্গ অ্যাকচুয়ারি আছেন। তাদের একজন আইডিআরএ’র সাবেক চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ। আরেকজন হলেন প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর হালিম। এরমধ্যে বীমা কোম্পানিগুলোর ভ্যালুয়েশনের জন্য শুধু সোহরাব উদ্দিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে অনুমোদন নিয়েছেন।
এদিকে ২০১১ সালে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ গঠিত হওয়ার পর বিদেশি অ্যাকচুয়ারি নিয়োগে কিছু শর্তারোপ করায় বাংলাদেশে কাজ করা ছেড়ে দিয়েছেন আরেক প্রবাসী অ্যাকচুয়ারি আফসার উদ্দিন আহমেদ। বিদেশে থাকলেও আগে তিনি বাংলাদেশি বীমা কোম্পানিগুলোকে ভ্যালুয়েশন সেবা দিচ্ছিলেন। তবে ২০১১ সালের পর বিদেশি, প্রবাসী কিংবা অনাবাসী কোনো অ্যাকচুয়ারি বাংলাদেশে সেবা দেয়ার জন্য অনুমোদন চাননি।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান