নিজস্ব প্রতিবেদক: বিনিয়োগকারীরা যখন শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় অপেক্ষা করছিলেন, তখন সেই প্রত্যাশার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কারসাজিচক্র। নিজেদের স্বার্থে বাজারে ইচ্ছামতো উত্থান-পতন ঘটিয়ে এই চক্রটি বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করছে—ফলে বাজারের স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়ে পড়েছে।
গত সপ্তাহজুড়ে ধারাবাহিক পতনের পর চলতি সপ্তাহে বাজারে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা থাকলেও দেখা গেছে উল্টো চিত্র। বাজার উত্থানের বদলে সূচক আরও নিচে নেমেছে। তবে আশ্চর্যজনকভাবে সূচক কমলেও টাকার অংকে লেনদেন বেড়েছে, যা বাজারে অস্থিরতার ইঙ্গিত দেয়।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, শেয়ারবাজারে একটি শক্তিশালী চক্র নিয়মিত কারসাজির মাধ্যমে নিজেদের ফায়দা নিচ্ছে। তারা বাজারে ভয় সৃষ্টি করে শেয়ার কম দামে কিনে নেয় এবং পরে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ায়। এতে বাজার তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই চক্রের কার্যক্রম রোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিএসইসি) বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করা জরুরি।
সূচক পতনেও বেড়েছে লেনদেন
বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, আজ ১২ সেপ্টেম্বর (রোববার) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক উত্থান দিয়ে লেনদেন শুরু হয়। তবে সেই উত্থান স্থায়ী হয়নি; দুপুর ১২টার পর সূচক একটানা পতনের দিকে যায়। দিনশেষে সূচক কমলেও লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে—যা কারসাজির ইঙ্গিত বহন করে।
দিনশেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮১.২৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫,২০২.৪৬ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস ১৯.৪৬ পয়েন্ট কমে ১,১১৪.৭৯ পয়েন্টে, আর ডিএসই-৩০ সূচক ৩৪.৬০ পয়েন্ট কমে ২,৯৯৮.৪৪ পয়েন্টে নেমে আসে।
ডিএসইতে আজ মোট ৩৯৬টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে ৪৭টির দর বেড়েছে, ৩১১টির দর কমেছে, এবং ৩৮টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিন ডিএসইতে মোট ৫৪২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের ৫৩০ কোটি ১৮ লাখ টাকার তুলনায় ১২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বেশি।
সিএসইতেও সূচক পতন, লেনদেন অর্ধেকে নেমেছে
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) আজ লেনদেন কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০ কোটি ৩৮ লাখ টাকায়, যেখানে আগের দিন ছিল ২২ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
আজ সিএসইতে ১৯৪টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে ৩২টির দর বেড়েছে, ১৪৭টির কমেছে, এবং ১৫টির দর অপরিবর্তিত ছিল।
সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৮৫.২৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪,৭৬২.৩৮ পয়েন্টে। আগের দিন সূচক কমেছিল ১০৬.৬২ পয়েন্ট। ধারাবাহিক এই পতন বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিশ্লেষকদের পরামর্শ
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাজারে গুজবনির্ভর আচরণ রোধে বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বিত পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি। বাজারের কারসাজিচক্র শনাক্ত করে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়।


