নথিপত্র চেয়ে দুদকের চিঠি

সোনালি লাইফের অর্থ আত্মসাৎ মামলার তদন্ত শুরু

সময়: বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১, ২০২৪ ১১:১৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ


বিশেষ প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বীমা কোম্পানি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১৮৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসসহ পরিবারের অন্য পরিচালকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

তদন্তের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবারের মধ্যে (১ আগস্ট) এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র চেয়ে কোম্পানিটিতে নিযুক্ত প্রশাসকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াত। গত ২৯ জুলাই পাঠানো এই চিঠিতে ‘ মামলার অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এসব রেকর্ডপত্র / কাগজপত্র পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন’ উল্লেখ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়।

দুদকের চাওয়া এসব রেকর্ডপত্রের মধ্যে রয়েছে, ২০১৮ সালে কোম্পানির পেইড আপ ক্যাপিটাল বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে প্রকৃতপক্ষে কতজন পরিচালক কোম্পানির কতটি শেয়ার ক্রয় করেন এবং এজন্য কত টাকা পরিশোধ করেন, শেয়ার ক্রয়কারী পরিচালকদের নামের তালিকাসহ শেয়ার ক্রয় ও টাকা পরিশোধ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র।

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২০১৩-২০২৪ খ্রি. পর্যন্ত বোর্ড মেম্বার / পরিচালকগণের তালিকা এবং ২০১৭-২০২৪ খ্রি: পর্যন্ত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন ও নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীসহ তদসংশ্লিষ্ট অন্যান্য রেকর্ডপত্র।

সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস, পরিচালক ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া, পরিচালক মোস্তফা কামরুস সোবহান, পরিচালক শাফিয়া সোবহান চৌধুরী, পরিচালক তাসনিয়া কামরুন অনিকা, পরিচালক ফজলুতুননেসা, পরিচালক নূর-ই-হাফসা, মীর রাশেদ বিন আমান, কোম্পানীর সাবেক সিএফও ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পরিচালক শেখ মোহাম্মদ ডানিয়েলের জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নম্বর ও ব্যাক্তিগত নথির সত্যায়িত ছায়ালিপি এবং কোম্পানী হতে তাদের গ্রহণকৃত বেতন-ভাতা, সম্মানী ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা (যদি থাকে) সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র।

সাউথ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ( ক) এফডিআর (খ) এসওডি হিসাব (গ) সঞ্চয়ী হিসাব সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র এবং এসওডি হিসাব হতে ৮, ১৫,০০০/- টাকা ও সঞ্চয়ী হিসাব হতে ১,৫৫,০০,০০০/- টাকা উত্তোলণ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র।

জুলাই, ২০২৩ হতে ডিসেম্বর, ২০২৩ পর্যন্ত সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি: এর জনতা ব্যাংক, রামপুরা শাখার হিসাব থেকে সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস তার ব্যাক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ড্রাগন সোয়েটারের অনুকূলে জনতা ব্যাংক, মতিঝিল কর্পোরেট শাখার হিসাব নং- ০১০০০০১০০১৯৫২ এ অর্থ স্থানান্তর সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র।
সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি: এর ১৯, ২০, ২১, ২২, ৩২, ৩৫, ৪২ ও ৫৩ তম বোর্ড সভার রেজুলেশনসহ তদসংশ্লিষ্ট অন্যান্য রেকর্ডপত্র। সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি: এর অফিস ভাড়া চুক্তিনামা এবং ভবন ভাড়া সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ছায়ালিপি।

এছাড়া জমি/ভবন ক্রয়ের অগ্রিম দেখিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে ১৪১,৫৬ ৯০,৫০০/- টাকা প্রদান সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র। এবং সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তার পরিবারের সদস্যগণের বিদেশে চিকিৎসা, শিক্ষা, ভ্রমণ ব্যয়, নিজ প্রতিষ্ঠানকে সোয়েটার ক্রয়, আপ্যায়ন, ইআরপি মেইনটেনেন্স, বিলাসবহুল অডি কার ক্রয়, নিজ পরিবারের সদস্য পরিচালকদের অতিরিক্ত ডিভিডেন্ড প্রদান, গ্রুপ বীমা পলিসি থেকে কমিশন গ্রহণ, নিজ মালিকানাধীন পুরো ভবনের ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ড্রাগন সোয়েটার ও স্পিনিং লিঃ এর ট্যাক্স বাবদ পরিশোধিত টাকার পরিমাণ এবং তদসংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র।

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানের বিরুদ্ধে ১৮৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত সপ্তাহে মামলা করে দুদক। একই সঙ্গে এ পরিবারের আট সদস্য ক্ষমতা কুক্ষিগত করে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হয়েছেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াত বাদী হয়ে কমিশনের ঢাকা-১ কার্যালয়ে মামলাটি করেন।

মামলার বাকি আসামিরা হলেন- মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ফজলুতুননেসা, বড় মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া ও তাঁর স্বামী প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সিএফও ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদ বিন আমান, আরেক মেয়ে তাসনিয়া কামরুন অনিকা, ছেলে মোস্তফা কামরুস সোবহান ও তাঁর স্ত্রী শাফিয়া সোবহান চৌধুরী এবং মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের আত্মীয় নূর-ই-হাফজা।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—সুপরিকল্পিতভাবে অবৈধভাবে সোনালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের তহবিল থেকে মোট ১৮৭ কোটি ৮৪ লাখ ১৫ হাজার ৯৬৬ টাকা আত্মসাৎ করেন। বিধি বহির্ভূতভাবে একই পরিবারের সাতজন সদস্য সোনালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বোর্ড পরিচালক এবং প্রধান অর্থ কর্মকর্তা কাম ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদ গ্রহণ করেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, আসামিরা বিভিন্ন লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা অর্থ তাদের নামীয় বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর ও রূপান্তর করেন। যে কারণে অভিযুক্তদের নামে দণ্ডবিধির ৪০৯ / ৪২০ / ৪৬৭ / ৪৬৮ / ৪৭১ / ১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ও (৩) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

শেয়ারবাজার২৪

Share
নিউজটি ১৮৬ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged