প্রত্যাশার প্রতারণায় বিনিয়োগকারীরা

সময়: মঙ্গলবার, জুলাই ২, ২০২৪ ১২:১৩:০৪ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর ১৪ বছর হতে চললেও এখনো বাজার একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পৌছায়নি। এই ১৪ বছরে কখনো বাজারে ক্ষণিকের গতি দেখা দিলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। যখনই কোন না কোন ইস্যুতে বাজারে পতন হয়েছে, তখনই নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে শুরু করে নীতি নির্ধারণী বিভিন্ন মহল বিনিয়োগকারীদেরকে নানা আশ্বাস ও অভয় দিয়ে পুনরায় বিনিয়োগে উৎসাহ দিয়েছে। কিন্তু নীতিনির্ধারণী মহলের আশ্বাসে বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশায় বিনিয়োগে ঝাঁপ দিলেও বারংবার শুধু প্রতারণাই পেয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০২২ সালের ২২ মে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছিলেন, আগামী ২ বছরের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০ হাজার পয়েন্টে যাবে। এছাড়া, তার কমিশন বিভিন্ন সময় ডিএসইর লেনদেন ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে বলে আশার বাণী শুনিয়েছেন। ওই সময় তাদের আশার বাণীতে আস্থা রেখে অনেক বিনিয়োগকারী নতুন করে বাজারমুখী হয়েছিলেন। বর্তমানে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিও’র অবস্থা খুবই নাজুক। বারবার নতুন বিনিয়োগে অ্যাডজাষ্ট (শেয়ার দর সমন্বয়) করার চেষ্টা করে কোনমতে টিকে থাকতে চাইলেও দিনশেষে ইক্যুইটি মাইনাসই থাকছে।

সম্প্রতি ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স নিয়ে বাজারে বেশ নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সেই নেতিবাচক প্রভাব থেকে উত্তোরণে বিএসইসির চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আরোপ হবে না। তার এই আশ্বাসে পুনরায় বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আশ্বস্ত হলেও অর্থ আইন, ২০২৪ এর মধ্যে ৫০ লাখ টাকার উপরে মূলধনী আয় ( ক্যাপিটাল গেইন) হলে ট্যাক্স দিতে হবে বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০১০ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ইনডেক্স ছিল ৯ হাজার। ভারতের পুঁজিবাজারের ইনডেক্স ছিল ১৪ হাজার, পাকিস্তানের পুঁজিবাজারের ইনডেক্স ছিল ৮ হাজার। গত ১৪ বছরে ভারত পাকিস্তানের ইনডেক্স রেকর্ডের পর রেকর্ড করে বর্তমানে ৭০ হাজারের উপর অবস্থান করলেও বাংলাদেশের পুঁজিবাজার আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারের ইনডেক্স ৫ হাজারে অবস্থান করছে।

২০১০ সালে ধসের পর পুঁজিবাজারকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথকীকরণ (ডি-মিউচ্যুয়ালাইজেশন), বিএসইসির অর্ডিন্যান্সের পরিবর্তন, অডিটরস্ প্যানেল করা, লিস্টিং রেগুলেশনে পরিবর্তন, কর্পোরেট গভর্নেন্স গাইডলাইন্স বাধ্যতামূলক করা, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট পাশ, লেনদেন এর জন্য নুতন সফটওয়্যার নিয়ে আসা, শেয়ার ম্যাচিউরিটি টি-৩ থেকে টি-২ করা ইত্যাদি।

 

এতো সব উন্নয়ন করার পরও ফলাফল হয়েছে শুন্য। কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা নুতন বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারেনি। কারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সুশাসন। সেই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি কমিশন। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে নানা আশ্বাস আর ভরসা দেখিয়ে এক শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের পকেট গরম হলেও মুষ্টিমেয় বিনিয়োগকারী পড়েছেন বিপাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুঁজিবাজার নিয়ে গত ১৪ বছরে সরকারের কোন পলিসি সাপোর্ট ছিল না। যদি পলিসি সাপোর্ট থাকতো তাহলে পুঁজিবাজার নিয়ে যে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি হয়েছে তা হতো না। বাজার অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতো। পুঁজিবাজারের প্রতি বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের আস্থা একেবারে শুন্যের কোঠায়। চলছে তারল্য সংকট। এই অবস্থায় করের বোঝায় আরও নাজুক অবস্থায় নেমে এসেছে। তাই পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা করতে সরকারের পলিসি সাপোর্ট দেওয়ার কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন তারা।

 

Share
নিউজটি ৩০ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged