ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট যদি রিয়েল অবস্থার রিফ্লেক্সশন না হয় তাহলে তা কাজে দিবে না

সময়: বুধবার, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০ ১:৫৯:৩২ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খাইরুল হোসেন বলেন, ফাইন্যান্সিয়াল রিপোটিংয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট। ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট কাদের জন্য দরকার উল্লেখ করে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, কোম্পানির নিজের জন্য দরকার, যারা অ্যানালাইসিস করে তাদের জন্য, বিনিয়োগকারীর জন্য, যারা মার্জার ইকুইজেশন করছে তাদের জন্য, যারা ভেঞ্জার, ক্যাপিটাল, ইমপেক্ট ভান ও প্রাইভেট ইকুইটি ইনভেস্ট করছে তাদের জন্য এবং ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরে ক্রেডিট ক্ষেত্রে বিচার করার জন্য দরকার। অনেক ক্ষেত্রেই দরকার। কিন্তু ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট যদি রিয়েল অবস্থার রিফ্লেক্সশন না হয় তাহলে সে স্টেটমেন্ট কাজে দিবে না।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে আগারগাঁওয়ের বিএসইসি মাল্টিপারপাস হলে ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ডিটেকশন অব ফ্রড’ বিষয়ক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, আজকে সবাইকে নিয়ে এই সেমিনার করার উদ্দেশ্য হলো আজকে সাংবাদিকরা যা বুঝে যাবে, স্টেকহোল্ডাররা যদি অন্যভাবে বুঝে তাহলে সেখানে গণ্ডগোল থেকে যাবে। কাজেই আমি চাচ্ছি আমরা সবাই একই সাথে এবং একই রকমভাবে বুঝি। একইসাথে তাদের জ্ঞান ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করা, টেকনিকগুলো তাদের আয়াত্ব করা, যাতে করে এই শেয়ারবাজারে যখন আমার আইপিও আনি, যে বার্নিং ইস্যুটা সবার সামনে চলে আসে। এখানে অনেক জাটলারি হয়, সেগুলো যাতে তারা আইপিও আসার আগেই ধরতে পারে, তাতে করে রেগুলেটররা অর্থাৎ আমরা অনেক শক্তিশালী হবো, বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবে এবং শেয়ারবাজার স্থিতিশীলতার দিকে যাবে, শক্তিশালী হবে। আল্টিমেটলি এপিশিয়েন্ট একটা মার্কেট গড়ে তুলতে আমার অনেকটা সমর্থন হবে। কারণ ইনফর্মেশনে যদি গলদ থাকে কোনো দিন এপিশিয়েন্ট মার্কেট গড়ে উঠবে না।

আমাদের অন্যতম প্রধান ভারডিক্ট হলো প্রটেকশন অব ইন্টারেস্ট অব ইনভেস্টর। যে অসহায় বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরত, তাদের প্রতিটা বেদনা, যেভাবে তাদের বিভিন্নভাবে হররানি হতে হতো, সেগুলো অ্যাড্রেস করার উপায় তারা পেলো এবং তাতে আমার আজকে স্ট্যাস্টিটিকসের মাধ্যমে দেখলে, যে ৯৫ শতাংশ সমস্যা ছিল সেগুলোকে অ্যাড্রেস করা হয়েছে। কাজেই এই মডিউলটা সৃষ্টি করে সকল স্টেকহোল্ডারদের একদিকে তাদের জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি হয়েছে, বিনিয়োগকারী একটি জায়গা খুঁজে পেয়েছে। যেখান থেকে তার যে গ্রিভেনচার সেটাকে অ্যাড্রেস করা যায়।

ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট অ্যানালাইসিসের উপর কেন আমরা গুরুত্ব দিয়েছি উল্লেখ করে খায়রুল হোসেন বলেন, আমরা সাংবাদিকদের প্রাধান্য দিয়ে এই মিটিংটি আয়োজন করেছি। আমি বারবার বলি যে সমাজে কি ঘটছে, ক্যাপিটাল মার্কেটে কি ঘটছে, অর্থনীতিতে কি ঘটছে এগুলোকে জনগণের সামনে তুলে ধরার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো সাংবাদিকরা। তাদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং যদি ক্লিয়ার থাকে, আমরা রেগুলেটররা কি বুঝি, স্টেকহোল্ডাররা কি বুঝি, সাংবাদিকরা কি বুঝে তাদেরকে শক্তিশালী করার জন্যই আজকের এই সেমিনার। প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আসার আগেই যদি সাংবাদিকরা কোম্পানিগুলোর সমস্যা তাদের লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরতে পারে তবে আমরা রেগুলেটররা অনেক শক্তিশালী হব। একই সাথে বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবে এবং শেয়ারবাজার শক্তিশালী হবে।

তিনি বলেন, উন্নত দেশে মোস্টলি, অলমোস্ট অ্যাবসুলেটলি সব ক্ষেত্রেই ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট রিপ্লেক করে ফাইন্যান্সিয়াল হেল্থ অব অর্গানাইজেশন তার পারফর্মেন্স, পাস্ট পারফর্মেন্স এবং ফিউচার এক্সপেক্টশন তারপরে কি ভিত্তি করে করা যায়, ফিউচার প্রিটেকশন কি করে করা যায়, তার ফিউচার ইনকাম কি হবে, তার ক্যাশ ফ্লো কি হবে, বিনিয়োগকারী প্রোটেনশিয়ার ডিভিডেন্ট কি পাবে সবকিছু যেমন করা যায়। আমাদের দেশে তার উল্টোটা।

খায়রুল হোসেন বলেন, আমরা জানি কম্পিউটার কিছুই না। অ্যানালিস্ট যে অ্যানালাইসিস করবে গার্বেজ ইন ও গার্বেজ আউট। ইনপুট যদি ভুল থাকে সেখানে যদি মিস লিডিং ইনফর্মেশন থাকে, ফেব্রিকেটেড ইনফর্মেশন থাকে, ওভার স্টিমেটেড অথবা আন্ডার স্টিমেটেড ইনফর্মেশন থাকে। তা দ্বারা আপনি যে অ্যানালাইসিস করবেন তার ফলে যদি সিদ্ধান্ত নেন তাহলে বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ইকোনোমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কাজেই সেজন্য ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট অ্যানালাইসিসে যে বিভিন্ন দিকগুলো আছে সেগুলো আপনারা জেনে নিবেন। কোন কোন পয়েন্টে এবং কোথায় কোথায় দুর্বলতাগুলো হতে পারে এই ফোকাস্ট এরিয়াগুলোকে আইডেনন্টিফাই করাই হবে যিনি প্রেজেন্টার তার কাজ, যারা প্যানেলিস্ট আছে তাদের কাজ এবং আপনারা যারা পার্টিসিপেন্টে আছেন আপনাদের বুঝে নেওয়ার কাজ।

বিনিয়োগকারী বিনিয়োগের আগে কি দেখেন উল্লেখ করে খায়রুল হোসেন আরো বলেন, বিনিয়োগকারী দেখে এই কোম্পানিটির ডিভিডেন্ড পে করার এবিলিটি কি। তারা আরেকটা জিনিস দেখবে তা হলো কোম্পানিটির ইনকাম জেনারেশন এবং ক্যাশ ফ্লো কি হবে। এরপর বিনিয়োগকারী যদি কিছু দেখে তা হলো কোম্পানিটির অতীত কি ছিল, বর্তমান পারফর্মেন্স কি এবং ভবিষ্যতটা কি। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সেক্টরের মধ্যে কোম্পানিটির অবস্থা কি এবং ইনভেস্ট করা যাবে কি না।

কোম্পানি নিজে যদি মনে করে আমার ব্যালেন্স সিট ঠিক আছে, আমার অন্যান্য স্টেটমেন্টগুলো ঠিক আছে। তাহলে সে দেখবে রিটার্ন এবং ইকুইটি কোন অপারেশন্স থেকে বেশি আসছে। তাহলে সে অপারেশন্সকে সাপোর্ট দিতে গেলে আমার এক্সপানশন কোন দিকে নিতে হবে। এক্সপেনশন কোথায় বেশি হচ্ছে অর্থাৎ কস্ট মিনিমাইজেশন এবং ইনকাম জেনারেশন মেক্সিমাইজেশন করার যথেস্ট পরিকল্পনাটিও যথাযথভাবে গ্রহণ করতে পারবে কি না। আধারওয়াইজ কোম্পানি নিজে যেমন বঞ্চিত হবে, মার্কেট ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বিনিয়োগকারীও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মার্কেটে স্থিতিশীলতা থাকবে না।

অনুষ্ঠান বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ একাডেমি অব সিকিউরিটি মার্কেটিংয়ের (বিএএসএম) ডিজি মো: মাহবুবুল আলম, বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদ, বিএসইসির পরিচালক কামরুল আনাম খান, এফআরসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ, সিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শুভ্র কান্তি চৌধুরী, সিএমজেএফের প্রেসিডেন্ট হাসান ইমাম রুবেল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩৬৮ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged